আত্মার আত্মীয়

আজকে আমাদের বিষয়ঃ আত্মার আত্মীয়

 

আত্মার আত্মীয়

 

আত্মার আত্মীয়

বাবুই পাখিরে ডাকি, বলিছে চড়াই,

“কুঁড়ে ঘরে থেকে কর শিল্পের বড়াই,

আমি থাকি মহাসুখে অট্টালিকা পরে

তুমি কত কষ্ট পাও রোদ, বৃষ্টি, ঝড়ে।”

বাবুই হাসিয়া কহে, “সন্দেহ কি তায়?

কষ্ট পাই, তবু থাকি নিজের বাসায়।

পাকা হোক, তবু ভাই পরের বাসা,

নিজ হাতে গড়া মোর কাঁচা ঘর খাসা।”

                                -রজনীকান্ত সেন।

রঙবেরঙের পাখিতে ভরা আমাদের এই পৃথিবী। তাদের কোনোটি নীল কোনোটি লাল কোনোটি হলুদ আবার কোনোটি মিশেল রঙের। তাদের আকার আকৃতিতেও রয়েছে ভিন্নতা। তাছাড়া প্রত্যেকটি পাখির কন্ঠস্বর বা ডাকও আলাদা আলাদা। কোনো পাখি কোমল তো কোনোটির কর্কশ স্বরের। পাখিদের ভঙ্গির কথা আর কী বলব! কোনোটির চলনে রাজসিক ভঙ্গি তো কোনোটির দুষ্টুমিতে ভরা। এ যেন প্রকৃতি জুড়ে আকার, আকৃতি, রং, স্বর, সুর আর হরেক রকমের ভঙ্গির মেলা!

আমরা তো জানি, আমাদের জাতীয় পাখি দোয়েল। কিন্তু আমরা কি জানি, কোন পাখিটিকে তাঁতি পাখি বলা হয়? নিপুণ বাসা গড়ার কারিগর বাবুই পাখিকে বলা হয় তাঁতি পাখি।

‘বাবুই’ আমাদের দেশে খুব পরিচিত একটি পাখি। অনেকেই এদের ‘বাউই’ বলেও ডাকে। সাধারণত তাল, খেজুর, নারকেল কিংবা সুপারি গাছের পাতায় এদের গড়া সুনিপুণ বাসাগুলো দুলতে দেখা যায়। বছরের বিশেষ সময়ে বাবুই পাখিদের ভীষণ সুরেলা কণ্ঠেও ডাকতে শোনা যায়। এদেরকে তাই গায়ক পাখিও বলা যেতে পারে। এদের ওড়াউড়ি, দলবেঁধে থাকা, টুকটুক করে খাওয়ার দৃশ্য এবং বাচ্চাদের খাওয়ানোর ধরন— এসব দেখে আমরা বুঝতে পারি, নিজের তৈরি বাসা আর নিজের পরিবারের সাথেই তার আত্মার সম্পর্ক।

 

আত্মার আত্মীয় আত্মার আত্মীয়

 

এই অধ্যায়ে আমরা যেভাবে অভিজ্ঞতা পেতে পারি-

  • প্রকৃতির মাঝে গিয়ে বিভিন্ন পাখির বাসা, তাদের বাচ্চাদেরকে খাওয়ানো ইত্যাদি নানা বিষয় দেখে, শুনে বা স্পর্শ করে অভিজ্ঞতা নিতে পারি।
  • বাবুই পাখি সম্পর্কে জানতে প্রকৃতিতে তাদের বানানো বাসা খুঁজে দেখতে পারি।
  • নিজ পরিবারের সদস্য, বাড়িতে প্রিয় স্থান, পোষা প্রাণী, গাছ-পালা, খুব প্রিয় কোন বস্তু সম্পর্কে নিজের ভাবনা বন্ধুদের সাথে আলোচনা করতে পারি।
  • নিজের ভাবনাগুলোকে কল্পনার মিশেলে তুলে ধরতে শিল্পকলার উপাদান সম্পর্কে জানতে পারি।
  • সম্ভব হলে উপরের অভিজ্ঞতাগুলো ভিডিওতে দেখতে পারি।

বাবুই পাখি দেখার এই অভিজ্ঞতাকে এবার আমরা নিজেদের পরিবারের সাথে একটু মিলিয়ে দেখতে পারি। প্রত্যেকেই আমরা কোনো একটি পরিবারের সদস্য। প্রতিটি পরিবারই তার সকল সদস্যের নিরাপদ আশ্রয়। বাবুই পাখির গড়া বাসা যেমন তার নিজের কাছে খাসা, তেমনি আমাদের ঘরগুলোও ছোট-বড়ো যেমনই হোক না কেন, ওটাই আমাদের কাছে সেরা।

 

আত্মার আত্মীয়

 

এবার চলো একটি মজার কাজ করা যাক –

  • বিভিন্ন রেখা ও আকার ব্যবহার করে আমরা একটা করে গাছ আঁকব, যার নাম দেব ‘পরিবার বৃক্ষ’। একটি গাছে যেমন থাকে শেকড়, কান্ড, শাখা- প্রশাখা, পাতা, ফুল-ফল ইত্যাদি। তেমনি আমাদের পরিবারের সদস্যদের নিয়ে অর্থাৎ মা-বাবা, ভাই-বোন এবং আরো যাদের সাথে আমরা বসবাস করি তাদের সবাইকে গাছের বিভিন্ন অংশে বসাব।
  • আমাদের পোষা প্রাণীগুলো ও পরিবারের অংশ, আত্মার আত্মীয়। আমরা চাইলে আমাদের পোষা প্রাণীটিকেও এই পরিবারে অন্তর্ভুক্ত করতে পারি।

তবে প্রথমে আমরা জানব ছবি আঁকার ভাষায় রেখা ও আকার কাকে বলে

ছবি আঁকার মূল উপাদানগুলো হলো— রেখা, আকার, আকৃতি, গড়ন, রং, আলোছায়া, বুনট, পরিসর। এখন আমরা রেখা, আকার ও আকৃতি সম্পর্কে জানব। পরবর্তী সময়ে আমরা ছবি আঁকার অন্যান্য উপাদানগুলো সম্পর্কেও জানব।

রেখা :

বিন্দুর গতিপথকে বলে রেখা। কোনো রেখা সোজা আবার কোনোটি হয় বাঁকা। সোজা রেখাকে বিভিন্ন রকম ভাবে আঁকা যেতে পারে। যেমন— লম্বালম্বি, আড়াআড়ি, কোনাকুনি। আঁকাবাঁকা রেখাগুলোও বিভিন্ন রকম হতে পারে। যেমন— কোনোটা হতে পারে ঢেউ খেলানো, কোনোটা খাঁজকাটা, আবার কিছু রেখা চক্রাকার— দেখতে অনেকটা গোল শামুকের মতো।

 

আত্মার আত্মীয়

 

আকার-আকৃতি:

রেখার ঘের দিয়ে তৈরি হয় আকার। যেমন—একটি রেখার এক প্রান্ত যখন অন্য প্রান্তকে স্পর্শ করে তখনই আকার সৃষ্টি হয়। অর্থাৎ আকার হলো বাইরের রেখা বা সীমা রেখায় আবদ্ধ একটি রূপ। ছবিতে আকারগুলো সাধারণত দৈর্ঘ্যে-প্রস্থে দ্বিমাত্রিক ভাবে আঁকা হয়, কোন গভীরতা থাকে না। সাধারণভাবে আকার দুই প্রকার, প্রাকৃতিক ও জ্যামিতিক। আকৃতি বলতে বুঝায় কোন বস্তু কতটা ছোট বা বড় তাকে। তবে সাধারন ও ব্যবহারিক বাংলায় আকার-আকৃতি শব্দ দুটোকে একই অর্থে ব্যবহার করা হয়।

 

আত্মার আত্মীয়

 

গড়ন:

গড়া থেকে গড়ন, গড়ন হলো বস্তুর ত্রিমাত্রিক রূপ। যার দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও বেধ আছে অর্থাৎ গভীরতার দিকে ও বস্তুটির যে দিকগুলো আছে সে গুলোকে মিলিয়ে যখন রূপটিকে আমরা তুলে ধরি তখন সেটা হয় গড়ন। আকারের মতো গড়ন ও প্রাকৃতিক এবং জ্যামিতিক দুই ধরনের হতে পারে। পরবর্তীতে আকার-আকৃতি ও গড়নের ব্যবহার সম্পর্কে আমরা আরও জানব।

 

আত্মার আত্মীয়

 

ফিরে আসা যাক বাবুই পাখি প্রসঙ্গে। শুরুতেই জেনেছিলাম বাসা বানানোর অসাধারণ দক্ষতার পাশাপাশি বাবুই পাখি তার সুরেলা ডাক বা কন্ঠের জন্যও খুব সমাদৃত। আমরা কি জানি, বাবুই পাখির ডাক কেন আমাদের কাছে এত সুরেলা শোনায়? শুধু পাখির ডাকই নয়, প্রকৃতিতে এমন আরও অনেক শব্দ সুর হয়ে আমাদের কাছে ধরা দেয়। বাতাসে মাঠের ফসল দোলার শব্দ, গাছের পাতার শব্দ, নদীতে বয়ে যাওয়া পানির শব্দ, এমন আরও কত কত শব্দ! তবে সব শব্দই সুর নয়, সুর সৃষ্টি হয় স্বরের মাধ্যমে। গান, বাজনা আর নাচ এই তিনের সমাহারকে বলা হয় সংগীত। যেকোনো সংগীতে মূলত দুটি বিষয় লক্ষ করা যায়। একটি হল স্বর অন্যটি তাল।

এবার আমরা স্বর সম্পর্কে জানার চেষ্টা করব এবং পরবর্তী সময়ে আমরা সংগীতের অন্যান্য বিষয় সম্পর্কে জানব।

স্বর:

মানুষ, জীবজন্তু, পশুপাখির কন্ঠ হতে অথবা পদার্থের আঘাতে যে আওয়াজ বা শব্দ বের হয় তাকে ধ্বনি বলে। আর গ্রহণযোগ্য শ্রুতিমধুর ধ্বনিকে সংগীতের স্বর বলে। সংগীতের মূল স্বর হলো ৭টি-

 

আত্মার আত্মীয়

 

সা, রে, গা, মা, পা, ধা, নি । একাধিক স্বরের মাধ্যমে সৃষ্টি হয় সুর ।
সংগীত, নাচ আর অভিনয় এরা পরস্পরের আত্মার আত্মীয়। সংগীতের সাথে যেমন সম্পর্ক রয়েছে নাচের, তেমনি নাচের সাথে আবার মিল রয়েছে অভিনয়ের।

নাচ বলতে আমরা বুঝি শরীরের ছন্দবদ্ধ নানা ভঙ্গি। নাচের কিছু উপাদান সম্পর্কে এবার আমরা জানব।

নাচের গুরুত্বপূর্ণ উপাদানগুলো হলো—চলন, রস, মুদ্রা, পোশাক ও সাজ-সজ্জা।

 

আত্মার আত্মীয়

 

চলন :

হাত, পা এবং শরীরের নড়াচড়া অথবা এক স্থান থেকে অন্য স্থানে ছন্দময় অবস্থান পরিবর্তনকে চলন বলে।

 

আত্মার আত্মীয়

 

এই অধ্যায়ে আমরা যা যা করতে পারি-

  • শুরুতেই যে ছড়াটি পড়েছি সেটা চাইলে সুর দিয়ে গাইতে পারি এবং তার সাথে আমরা বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমে, হেলে-দুলে চড়ুই ও বাবুই পাখির কথোপকথন ফুটিয়ে তুলতে পারি।
  • গৃহপালিত বা আমাদের চারপাশের পরিবেশে দেখা বিভিন্ন জীব-জন্তুর অঙ্গভঙ্গি এবং গলার স্বরের অনুকরণ করেও অভিনয়ের মাধ্যমে দেখাতে পারি।
  • আমরা একটি ভিন্ন ধরণের কাজের পরিকল্পনা করতে পারি। হাতের আঙুলের আকারে ও মাপে পাপেট বানিয়ে অভিনয় করলে কেমন হয়, বলোতো? আমাদের এই কাজটির নাম আমরা দিব ‘পাঁচ আঙুলের ভুবন’।
  • এই কাজটি করার জন্য আমরা শ্রেণির সব বন্ধু প্রয়োজনমতো কয়েকটি ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে যাব।
  • এরপর প্রতিটি দল প্রকৃতি থেকে পশু পাখির স্বর, চলন ভঙ্গিমা এবং বৈশিষ্ট্য সরাসরি পাওয়ার অভিজ্ঞতা ও কল্পনার মিশেলে একটি নাট্য ভাবনা লিখে ফেলব আমাদের বন্ধু খাতায়।
  • প্রত্যেকটি দলের মধ্যে কে কোন প্রাণীর ভূমিকায় অভিনয় করব তারও একটি পরিকল্পনা করে নেব। গল্পের নির্ধারিত প্রাণীর চলন ও স্বরকে অনুকরণের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলার জন্য আমরা অনুশীলন শুরু করব।
  • এবার দলের প্রত্যেক সদস্য নিজের হাতের আঙুলের মাপে নির্ধারিত প্রাণীর আকার, আকৃতি তৈরি করব। আকৃতিগুলো কেমন হতে পারে তা আমরা কাগজে একেঁ দেখব।
  • সেই অনুযায়ী কাগজ কেটে আঠা দিয়ে জোড়া লাগিয়ে অথবা কাপড় কেটে সেলাই করে সহজেই আমরা এসব আকার, আকৃতি তৈরি করতে পারি। আকার, আকৃতি তৈরির বিষয়ে দলের প্রত্যেক সদস্য একে অপরকে সহায়তা করব।
  • এবার নির্দিষ্ট দিনে শ্রেণিকক্ষের টেবিলগুলোকে মঞ্চ বানিয়ে আমাদের হাতের আঙুলের সাহায্যে পাপেট শো বা পুতুল নাচ প্রদর্শন করব।

মূল্যায়ন ছক

আত্মার আত্মীয়

শিক্ষার্থীর নাম:

রোল নম্বর:

তারিখ :

শিক্ষক পূরণ করবেন: টিজিতে নির্দেশিত কাজ শেষ করে তার আলোকে প্রযোজ্য বিবৃতিতে টিক দিন

শীত প্রকৃতির রূপ

অভিভাবকের মন্তব্য ও স্বাক্ষর:                                                                                  তারিখ:

আরও দেখুনঃ

1 thought on “আত্মার আত্মীয়”

Leave a Comment