আজকের আমাদের আলোচনার বিষয় আনুমানিক পরিসংখ্যান
আনুমানিক পরিসংখ্যান
আনুমানিক পরিসংখ্যান
রবীন্দ্রনাটকে গানের সংখ্যা নিয়ে মতভেদ রয়েছে। রবীন্দ্রনাথের গানের সংখ্যা কেউ বলেছেন ২২২৫ কেউ বলেছেন ২২৩২। এই মোট সংখ্যার নাটকের গানের সংখ্যা নির্ণয় করতে গেলে কয়েকটি বিষয় বিবেচনা করতে হয়। যেমন গীতিনাট্য নৃত্যনাট্যের গান হিসেবের আওতামুক্ত রাখাই উচিত কারণ সেগুলো মূলত নাটকের গান নয়।
সেখানে গান ও নাটকে রয়েছে এক অভেদ রুপকল্প। কেবল গান দিয়েই নাটকের গতিময়তা চলেছে অবিরাম। গান দিয়ে পুরো নাট্য শরীর গঠিত। রবীন্দ্র নাটকের গানের হিসেব থেকে বাদ দিতে হবে ‘বসন্ত’, ‘শেষবর্ষণ’ ‘নবীন’, নটরাজ’, ঋতুরঙ্গশালা’, ‘শ্রাবনধারার গান কারণ এই সব রচনায় নাটকের অংশ ক্ষীন হতে হতে প্রায় অবলুপ্ত।
গানই এর প্রাণ এবং গানই কেবল আমাদের মজিয়ে রাখে নাটকের অংশ বা সংলাপ নয়। এই হিসেবে আরো একটি বিষয় লক্ষনীয় যে, কিছু গান একই নাটকের রুপান্তও বা একাধিক নাটকে স্থান পেয়েছে। যেমন ‘গুরু’ নাটকের অনর্গত ৭টি গানের মধ্যে ৬ টি গানই ‘অচলায়তন’ এ ছিল। শুধু
‘ভেঙেছে দুয়ার এসেছ জোতির্ময়’
নতুন যোজনা। ‘অরুপরতন’-এ যে ২৫ টি গান আছে তার মধ্যে ১১ টি ‘রাজা’ নাটকের অন্তর্ভূক্ত। সেই রকম ‘ঋনশোধ’ নাটকের ১৩ টির মধ্যে ৬টি নতুন, ৭টি ‘শারোদৎসব’ থেকে সরাসরি চলে এসেছে।
“আজ তোমারে দেখতে এলেম’
গানটি ‘বউ ঠাকুরানীর হাট’ উপন্যাস থেকে ‘প্রায়শ্চিত্য’ নাটকের মধ্য দিয়ে চলে এসেছে ‘পরিত্রান’ নাটক পর্যন্ত।
‘আরো আরো প্রভৃ আরো আরো
‘আমারে পাড়ায় পাড়ায় খেপিয়ে বেড়ায়’
“ওরে আগুন আমার ভাই’
তিন রুপেই উপস্থিত ‘প্রায়শ্চিত্য’, ‘মুক্তধারা’ এবং ‘পরিত্রান’ এ। বিপরীতভাবে হিসেবের অন্তর্গত হয় তরুণ রবীন্দ্রনাথের যে সকল গান জ্যোতিরিন্দ্রনাথের নাটকাবলীতে ব্যবহৃত হয়েছিল। যেমন-
জ্বল জ্বল চিতা দ্বিগুন দ্বিগুন’ (সরোজিনী )
‘গহন কুসুম কুঞ্জ মাঝে (অশ্রুমতী)
“আয় তবে সহচরী’ (মানময়ী) ইত্যাদি গান।
উপরোক্ত হিসেবের পদ্ধতিতে রবীন্দ্রনাথের নাটকের গান মোটামুটি বলা যায় সাড়ে তিনশ থেকে কিছু বেশী। কিন্তু যতদিন পর্যন্ত সকল নাটকের পাঠভেদ সংবলিত সংস্করণ প্রকাশিত না হচ্ছে ততদিন পর্যন্ত সঠিক পূর্নাঙ্গ সংখ্যা বের করা কঠিন। যেমন ‘রাজা ও রানী’ নাটকের ব্যবহৃত গান ।
“আজ আসবে শ্যাম গোকুলে ফিরে’ ও ‘বিসর্জন’ নাটকের গান ‘ঝর ঝর রক্ত ঝরে কাটা মুণ্ডু বেয়ে’ গানটি প্রথম সংস্করনের পরে বর্জিত হয়। অবশ্য ১৯২৩ সালে নিবোক্ত চারটি গান বিসর্জনের অন্তর্ভুক্ত হয়-
১. জয় জয় পরমা নিস্কৃতি হে
২. আঁধার রাতে একলা পাগল
৩. আমার যাবার বেলায় পিছু ডাকে
৪. কোন ভীরুকে ভয় দেখাবি
১৮৯৫ সালে লেখা সে আসে ধীরে যায় লাজে ফিরে’ গানটি ১৯২৫ খ্রীস্টাব্দে ‘গৃহপ্রবেশ’ এ অভিনয় কালে হিমি’র কণ্ঠে ব্যবহৃত হয়েছিল। ৬ আশ্বিন ১৩১৮ তারিখে `শারোদৎসব’ এর অভিনয় কালে তিনটি নতুন গান সংযোজিত হয়।
১. ওগো শেফালি বনের মনের কামনা
২. আজ প্রথম ফুলের পার প্রসাদখানি এবং
৩. আমাদের শান্তিনিকেতন
‘তপতী’তে যতগুলি গান আছে’ তাছাড়াও আরো কিছু গান লেখা হয়েছিল এই নাটকের জন্য। কিন্তু সেগুলি ব্যবহৃত হয়নি। জীবনের শেষদিকে ‘ডাকঘর’ নাটক মঞ্চস্থ করাবেন ভেবে ঐ নাটকের জন্য যে গানগুলি রচনা করেন সেগুলিও শেষপর্যন্ত ‘ডাকঘর’ এ ব্যবহৃত হয়নি।
আরও দেখুন :