আজকের আমাদের আলোচনার বিষয় আফগানী অথবা কাবুলী রবাব
আফগানী অথবা কাবুলী রবাব
আফগানী অথবা কাবুলী রবাব
আফগানিস্তান থেকে একেবারে ভিন্ন ধরণের রবাব অষ্টাদশ শতাব্দীতে উত্তর ভারতে আবির্ভূত হয় এবং জনপ্রিয়তা লাভ করে। ভারতীয় রাজদরবারের কোন চিত্রকর্মে এই রবাবের ছবি পাওয়া যায় না। লোক পরম্পরায় প্রচলিত বর্ণনা থেকে এই যন্ত্র সম্পর্কে জানা যায়। প্রথম দিকে এই যন্ত্র নগর অঞ্চলের বাইরে লোকজ বাদ্যযন্ত্র হিসেবে প্রচলিত ছিলো, পরে হিন্দুস্তানী উচ্চাঙ্গ সংগীতের মূলধারায় যুক্ত হয় সরোদ হিসেবে রূপান্তরের মাধ্যমে।
আফগানিস্তানে এখনো এই রবাব, যা আফগানী রবার বা কাবুলী রবাব নামে পরিচিত, তা একটি আঞ্চলিক বাদ্যযন্ত্র হিসেবে লোকপ্রিয়তার সাথে টিকে আছে। পাকিস্তানের কিছু অংশে এবং কাশ্মিরেও এই যন্ত্রটি দেখা যায়। আফগানী রবার হচ্ছে ছোট গলাবিশিষ্ট লিউট। এর দেহ সরু এবং কোমর গভীরভাবে কাটা। সমস্ত যন্ত্রটি একখণ্ড কাঠ কেটে তৈরি করা হয়েছে।
কোমর থেকে গলার দিকে ক্রমান্বয়ে সরু হয়ে গিয়েছে। আফগানী রবাবের ফিংগারবোর্ড কাঠের তৈরি, এর উপরের প্রান্তে দুই থেকে চারটি অস্ত্রী তারের তৈরি পর্দা বাঁধা থাকে। আফগানী রবাবের উৎপত্তিস্থল প্রকৃতপক্ষে কোথায় স্পষ্টভাবে জানা যায় না। তবে লোকমুখে প্রচলিত আছে যে, গজনীতে এর উৎপত্তি এবং অষ্টাদশ শতাব্দীতে কাবুলে অবস্থিত তৈমুর শাহের দরবারে এর বিকাশ সাধন ঘটে।
খুব দ্রুত এটি উত্তর ভারতে স্থানান্তরিত হয়। মুগল চিত্রকর্মে আফগানী রবাবের ছবি। পাওয়া না গেলেও এই রবাবের যে বর্ণনা পাওয়া গেছে তার সাথে সপ্তদশ শতাব্দীতে অঙ্কিত মুগল চিত্রকর্মে একজন লোকশিল্পীর হাতে বাদনরত একটি যন্ত্রের খুব মিল পাওয়া যায়।
চিত্র – লোকশিল্পীর হাতে প্রাচীন আমলের কাবুলী রবাব
১৮৩৪ খ্রিষ্টাব্দে উইলিয়ার্ড আফগানী রবাবের নিম্নরূপ বর্ণনা দিয়েছেন – “এই যন্ত্র অস্ত্রী তার দিয়ে বাজানো হয় শিং দিয়ে তৈরি একটি প্লেট্রাম ডান হাতের তর্জনী এবং বৃদ্ধাঙ্গুলিতে চেপে ধরে তা দিয়ে বাজানো হয়, বাঁ হাতের আঙুলের সাহায্যে ফিংগারবোর্ডের উপরে তার চেপে ধরে বাজানো হয়।”
প্রায় একই ধরণের রবার আফগানিস্তানে বর্তমান যুগেও প্রচলিত রয়েছে।
চিত্র – আফগানিস্তানে প্রচলিত আধুনিক রবাব
আরও দেখুন :