আজকের আমাদের আলোচনার বিষয় ঊনিশ শতকের মঞ্চসজ্জা
ঊনিশ শতকের মঞ্চসজ্জা
ঊনিশ শতকের মঞ্চসজ্জা
অষ্টাদশ শতকের যাত্রা বা পালাগানের যুগ চলে গিয়ে পাশ্চাত্যের অনুকরণে যেমন নাটক বা অপেরার যুগ দেখা দিলো, মঞ্চকলাও তেমনি পাশ্চাত্য রীতিরই অনুসরণ করছিল। ইউরোপীয় অপেরা হয়তো অনেকেই ভালো চোখে দেখতে পারেন নি, কিন্তু এ কথা সকলেই স্বীকার করেছেন যে, ইউরোপীয় মঞ্চকলার যা কিছু বকাশ বা উৎকর্ষ তা অপেরাকেই কেন্দ্র করে।
সপ্তদশ শতকে মঞ্চের যেসব কারুশিল্পী দেখা দিলেন, সকলেই অপেরার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। অষ্টাদশ শতকে জাপানে ঘূর্ণায়মান মঞ্চের উদ্ভণের সঙ্গে সঙ্গে মঞ্চকলার এক যুগান্তর এল, এরই অনুসরণে ইউরোপে karl Lantenchiager ১৮৯৬ খৃষ্টাব্দে ম্যুনিকে Residen Theatre এ সর্বপ্রথম এই রীতির প্রবর্তন করেন এবং এর পর থেকেই বিজ্ঞানের প্রসারের সঙ্গে সঙ্গে ক্রমশই মঞ্চকলায় চূড়ান্তভাবে বাস্তবতা আনবার চেষ্টা চলতে থাকে।
ঊনিশ শতকের বাংলা নাট্যাভিনয়ে তথা মঞ্চকলায় তারই অন্ধ অনুকরণ দেখা যায়। বাংলার সমাজ তখন দ্বিধাবিভক্ত। নব্য ও প্রাচীন-পন্থীরা নিজের নিজের আদর্শকেই প্রতিষ্ঠা করার প্রয়াসী। নব্য ধনী তথা অভিজাত সমাজ পুরোমাত্রায় পাশ্চাত্যভাব বজায় রাখতে ব্যস্ত। আর নাট্যাভিনয়ও ছিলো তারই অঙ্গ, আভিজাত্যের বা বিলাসের অভিব্যাক্তি। নিজের ঐশ্বর্য্য প্রকাশের সুযোগ পাওয়া যেত সকলের সামনে।
১৮৩৩ খৃষ্টাব্দে নবীন বসুর বাড়ীতে ‘বিদ্যাসুন্দরে’র যে অভিনয় হয় তাতে দেখি নাট্যাভিনয়কে ‘বাস্তব’ করে তোলার জন্যে যে বিচিত্র মঞ্চকলার ব্যবহ। হয় তা ‘ছেলেমানুষি’ তো বটেই হাস্যকরও বলা চলে । এক অন্ধ অনুসরণজাত কৃত্রিম বাস্তবতার মোহ তৎকালীন মঞ্চকলাকে পঙ্গু করে তুলেছিল । পাশ্চাত্য থিয়েটারের দৃশ্যপটের অনুকরণের এবণতা এমনি মজ্জাগত হয়ে পড়েছিল যে এই দৃশ্যপট তৈরির জন্যে একটি সম্প্রদায় গড়ে উঠেছিল।
‘সীন’ তৈরি করাই ছিল তাঁদের ব্যবসা। তাঁদের বলা হত ‘পটুয়া’। উনিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে মঞ্চে এঁদের রীতিমতো চাহিদা ছিল। এইসব পটুয়ার রাজপথের ধারেই এইসব সী’ আঁকতেন। রাস্তার দুপাশের বাড়ীর দেওয়ালে পট টাঙ্গিয়ে তাঁরা তুলির স্পর্শে রাজপ্রাসাদ, নাভার, নদনদী, নগরের রাজপথ প্রভৃতি ফুটিয়ে তুলতেন।
অবনীন্দ্রনাথ এমনই এক পাবলিক স্টেজের বর্ণনা দিয়েছেন ‘ঘরোয়া’তে ‘বসে আছি, ড্রপসীন পড়ল তাতে আঁকা ইউলিসিসের যুদ্ধযাত্রা, রাজপুত্তুর চলেছে, জলদেবীদের সঙ্গে যুদ্ধ, পিছনে পাহাড়ের সর গ্রীক যুদ্ধের একটা করি। কোনো সাহেবকে দিয়ে আঁকিয়েছিল বোধ হয়,…’ ইত্যাদি বিস্ময়ের কথা, সেদিনকার বিদগ্ধ নাট্য রসিকরাও এই অনুকরণের বা কৃত্রিমতার প্রশ্রয় দিয়েছেন।
আরও দেখুন :