আজকের আমাদের আলোচনার বিষয় কতিপয় নৃত্যনাট্যের আলোচনা। ১৯২৩ সালে রচিত বসন্ত থেকে ১৯৩১ এর নবীন পর্যন্ত বিভিন্ন ঋতুনাট্যে নৃত্য ছিল। নিহারীকা রূপে। শিশুতীর্থ আর শাপমোচনে এসে তা দানা বাঁধে। একটি সুস্পষ্ট রূপ ধারণ করে পরবর্তী পূর্ণাঙ্গ তিনটি নৃত্যনাট্যের দিকে ইঙ্গিত বহন করে। সেদিকে থেকে শিশুতীর্থ বা শাপমোচনকে পরবর্তীকালের তিনটি নৃত্য নাট্যের ভ্রুণও বলা যেতে পারে ।
কতিপয় নৃত্যনাট্যের আলোচনা
কতিপয় নৃত্যনাট্যের আলোচনা
ভারতবর্ষে প্রচলিত ধ্রুপদি নৃত্যের প্রত্যেকটির এক একটি বৈশিষ্ট্য রয়েছে। যেমন কথাকলি মুদ্রা প্রধান অভিনয়, কথক নাট্য প্রধান, মণিপুরী গীতধর্মী ও ব্যঞ্জনাপূর্ণ অভিব্যক্তি। ভরতনাট্যমের বৈশিষ্ট্য বীর্য, ভারতের লোকনৃত গুলোর মধ্যেও এক একটি বৈশিষ্ট্য চোখে পড়ে। যেমন কয়েকটি নাচ পুরুষের জন্য। কয়েকটি নারীদের জন্য। কোনোটি আবার নারীপুরুষ উভয়ের সম্মেলক নৃত্য।
কিন্তু রবীন্দ্রনৃত্যের সকল ধারা একত্রে মিশেছে যেমন মিশেছে রবীন্দ্রনাথের গানে। বস্তুত কোন ধরনের নৃত্য কোন ধরনের অভিনয়ের উপযোগী রবীন্দ্রনাথ সেদিকে লক্ষ্য রেখেই নৃত্যের সমাবেশ করেছেন। রবীন্দ্রনৃত্যনাট্যে চরিত্র অনুযায়ী নৃত্যাদর্শ গড়ে উঠেছে। নৃত্যনাট্যগুলোর একটি বৈশিষ্ট্য লক্ষণীয় যে এতে অভিজাত বা মুখ্য চরিত্রে ধ্রুপদী নৃত্যের ব্যবহার এবং সাধারণ বা গৌণ চরিত্রে প্রাদেশিক বা লোকনৃত্যের প্রয়োগ।
চিত্রাঙ্গদার গ্রামবাসী বা বনচর, শ্যামার আহিরীনিবৃন্দ বা বন্ধু এবং চণ্ডালিকায় দইওয়ালা, চুরিওয়ালা, মেয়ে পুরুষ ইত্যাদিতে বাংলা ও কাথিয়াওয়াড় অঞ্চলের লোকনৃত্যেল প্রয়োগ করা হয়েছে। ইউরোপীয় ব্যালে নৃত্যের রচনাশৈলী রবীন্দ্রনাথকে নৃত্যনাট্য রচনা পদ্ধতি কল্পনায় অনেকখানি সহায়তা করেছিল। ব্যালের রচনা পদ্ধতি অনেকখানি শ্রম বিভাজনের রীতিতে হয়।
ব্যালেতে যেমন প্রথমে একটি কাহিনী স্থির করে সেই অনুসারে সংগীত, নৃত্য, মঞ্চ, রূপসজ্জা প্রভৃতি গড়ে ওঠে। নৃত্য পরিচালকের উপর দায়িত্ব থাকে দৃশ্যগুলোকে যথার্থ বিন্যাস করার । এই দিকটি সম্ভবত রবীন্দ্রনাথকে উৎসাহিক করেছিল। যদিও নৃত্যেল ক্ষেত্রে তাকে অন্যের সহযোগিতা নিতে হয়েছিল তবু নৃত্য রচিত হয়েছে তারই নির্দেশ এবং ইঙ্গিতে।
পূর্বকৃত অনেক খণ্ড খণ্ড গান ও নৃত্য পরবর্তীতে নৃত্যনাট্যে বিশেষত চিত্রাঙ্গদায় স্থান পেয়েছে। যৌথ নৃত্যের নির্দেশকের জন্য পূর্ব পরিকল্পিত খসড়ার সাহায্য নেয়া হতো। অর্থাৎ নৃত্যের প্রেরণা থেকেই নৃত্যনাট্যগুলো রচিত। প্রতিমূহুর্তে নৃত্য ও নৃত্যনাট্যের আঙ্গিকের দিকে রবীন্দ্রনাথকে লক্ষ্য রাখতে হতো।
আরও দেখুন :