গণমানবের জয়গান

আজকের আমাদের আলোচনার বিষয় গণমানবের জয়গান

গণমানবের জয়গান

 

গণমানবের জয়গান

 

গণমানবের জয়গান

রবীন্দ্রনাথ স্বদেশপর্যায়ের গানসমূহের মধ্যদিয়ে স্বদেশচেতনার যে বহিঃপ্রকাশ ঘটাবার চেষ্টা করেছেন তাতে স্বদেশের মানুষ তথা জনগণের প্রতি গুরুত্ব আরোপ করা হয়। স্বাধীনতা তথা সম্মান সরলভাবে অর্জিত হয় না। তা অর্জনের জন্য দেশের সন্তানদের আত্মত্যাগের প্রয়োজন। কখনো ধিক্কার কখনোবা গৌরবানুভূতিতে তিনি স্বদেশ সন্তানের ভূমিকার কথা বলেছেন।

তিনি সকল জনগণকে বিপদ সংকটে বুকের পাজর জ্বালিয়ে সম্মুখে এগুবার ডাক দিয়েছেন। যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে’ তেমনি একটি একক আহ্বানের গান। এই জনগণকে তিনি মাঝি, নাবিক, পথিক, যাত্রী, কর্মী, রাজা, ভাই বলে সম্মোধন করেছেন। স্বদেশমাতৃকার মূল শক্তিই এই জনগণ তথা মানবসম্পদ।

বহু গানে রূপক অর্থে দেশমাতৃকার সন্তানদের বহু নামে সম্মোধন করলেও সরাসরি ‘জনগণ’ শব্দটির সন্ধান মেলে ‘জনগণমন-অধিনায়ক জয় হে ভারতভাগ্যবিধাতা’ গানটিতে। জনগণমাদলদায়ক, জনগণ ঐক্য- বিধায়ক, জনগণপথপরিচায়ক, জনগণদুঃখত্রায়ক- এই শব্দগুলোর মাধ্যমে কবি জনগণের শক্তির কথা বলেছেন। জনগণের শক্তির উপর দেশ তথা জাতি দাঁড়িয়ে থাকে।

জনগণ দুর্বল হলে সে দেশের স্বাধীনতা রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়ে। তাই এই গানটিতে জনগণের জয় জয়কার করা হয়েছে। ‘জনগণপথ তব জয়রথচক্রমুখর আজি / স্পন্দিত করি দিগদিগন্ত উঠিল শঙ্খ বাজি । অর্থাৎ জনগণ জয়ের রথ পরিচালনায় ব্যস্ত। জয় অর্জনের জন্য তারা পথে নেমেছে। তাদের সেই জয়যাত্রার আনন্দযজ্ঞে চারিদিকে শঙ্খধ্বনি বাজছে।

 

গণমানবের জয়গান

 

‘মাতৃমন্দির পুণ্য অঙ্গন কর’ মহোজ্জ্বল আজ হো গানটিতে কবি সকল সাধক, যোগী, ত্যাগী, দুঃস্থদুঃখভাগী জ্ঞানী, কর্মীসহ সকল বীরকে আহ্বান করেছেন। স্বদেশের সেবাই প্রকৃত বীরের কাজ, সবচেয়ে পুণ্য কর্ম। তাই কবি এসব কর্মীকে দুর্জয়- শক্তি-সম্পদ বলেছেন। জনসম্পদকে যথার্থভাবে কাজে লাগাতে পারলেই দেশমাতার দুঃখ নিবারণ হয়।

তাই রবীন্দ্রনাথও এ সত্যকে উপলব্ধি করে দেশমাতার প্রতি ভক্তি প্রকাশে জনগণের স্তুতি বন্দনা করেছেন। বিচিত্রকর্মের মাধ্যমে দেশবাসীকে কবি প্রকৃত সত্য ও মঙ্গলের পথে অগ্রসরের ধ্বনি শুনিয়েছেন :

“সবাই বড়ো হইলে তবে স্বদেশ বড়ো হবে,

যে কাজে মোরা লাগার হাত সিদ্ধ হবে তবে।

রবীন্দ্রনাথ তাঁর সমগ্রজীবন জুড়ে মানুষের অন্তরের রূপটি খুঁজে বেড়িয়েছেন। উত্তরবঙ্গে অবস্থানকালে গ্রামবাসীর দারিদ্র্যক্লিষ্ট জীবনকে প্রত্যক্ষভাবে দেখবার সুযোগ হয় কবির। তিনি আহত হন এবং তাদের ভাগ্য পরিবর্তনের বহুবিধ পন্থা খুঁজে বের করেন নিজে এবং তার মর্মবাণী ব্যক্ত হয় তাঁর কবিতা ও গানে। ‘নির্যাতিত নিপীড়িত মানুষের দুর্দশার অন্ত নেই। তারা যেন বিকৃত বিকলাঙ্গ প্রেতপুরীর জীব।

দেশের শক্তি আপামর জনসাধারণ, সেই শক্তির অপচয়ে দেশের প্রগতি ও উন্নতি অসম্ভব। দেবতার শঙ্খ ধুলায় অবলুণ্ঠিত: কবি সইতে পারলেন না। কল্পনার গজদও মিনার থেকে বেদনার্ত বাস্তব জগতে নেমে আসার জন্য কবি চিত্তে আকুলতা ধ্বনিত হয়। ‘চিত্রা’ কাব্যের (১৩০২) ‘এবার ফিরাও মোরে’ (১৩০০) কবিতাটিতে মানবের তরে কবির আকুলতা দেখতে পাই :

 

গণমানবের জয়গান

 

“…সে অন্ন যখন কেহ কাড়ে

সে প্রাণে আঘাত দেয় গর্বান্ধ নিষ্ঠুর অত্যাচারে..

নাহি জানে কার দ্বারে দাঁড়াইবে বিচারের আশে

দরিদ্রের ভগবানে বারেক ডাকিয়া দীর্ঘশ্বাসে

মরে সে নীরবে।

আরও দেখুন :

Leave a Comment