আজকের আমাদের আলোচনার বিষয় সঙ্গীত তার গীতত্ত্বের মূল্যেই নাটকে বিশিষ্ট
সঙ্গীত তার গীতত্ত্বের মূল্যেই নাটকে বিশিষ্ট
সঙ্গীত তার গীতত্ত্বের মূল্যেই নাটকে বিশিষ্ট
সংলাপ নয়, চরিত্র ব্যাখ্যা নয়, এমনকি গায়কচরিত্রের ব্যক্তিগত অনুভব কিংবা নাট্যতত্ত্বের প্রকাশও নয়, গান তার গীতত্ত্বের মূল্যেই নাটকে বিশিষ্ট ভূমিকা হয়ে উঠেছে, রবীন্দ্রনাথের এমন নাটক সম্ভবত একটিই আছে, ‘গৃহপ্রবেশ’-
বাজো রে বাঁশরি বাজো’,
‘ওই মরণের সাগরপারে’,
‘যদি হল যাবার ক্ষণ’,
“জীবনমরণের সীমানা ছাড়ায়ে’ ইত্যাদি।
এ স্পষ্টতই গীত যোজনার আয়োজন, তা হলেও হিমির গান নিরর্থক হয় না বিপাশার গানের মতো। মৃত্যুপথযাত্রী যতীনের সৌন্দর্য্যধ্যান আর বাস্তব ব্যর্থতার মতোই এখানে লেগেছে সাংগীতিক মাধুর্য্যের স্পর্শ, সুর এ নাটকে সঞ্চার করেছে প্রাণের রস, যার অভাবে বিবর্ণ পাণ্ডুর শুধুই কষ্টের ছবি হয়ে উঠতে পারত এ নাটক। আমরা বুঝতে পারি গানগুলির প্রয়োগ হবে হিমির চাপা বেদনার অভিব্যক্তিতে, নিছক গান গাওয়াই তার কাজ নয় ।
কিন্তু হিমির গানে প্রার্থিত বেদনার সুদ, কেমন করে বেজে উঠবে, বিশেষত ‘বাজো রে বাঁশরি বাজো’র মতো গানে, যে গান ‘শাপমোচন’ এ বিবাহের আসরে বঁধুর প্রতি সখীদের আহ্বান কেবল গানের লয় পৃথক পরিবেশ রচনা করা দেয়। ভাবের পরিবর্তনের সঙ্গে যে লয়েরও পরিবর্তন হওয়া উচিত, এই প্রয়োজনীয় কথাটি আমাদের জানিয়েছেন রবীন্দ্রনাথ।
বস্তুত্য: লয়ের তারমধ্যে সুরের ধরন বদলে যায়, গানের অর্থও ভিন্ন হয়ে যায় অনেক সময়। সেই কারণেই যে গান দ্রুত লয়ে ‘শাপমোচন’-এ হতে পারে আনন্দের বিস্তার, সেই গানই ‘গৃহ-প্রবেশ’ এ পরিবেশের বেদনাকে ধরে রাখতে পারে অপেক্ষাকৃত বিলম্বিত লয়ে।
সুর প্রাণময় হয়ে ওঠে লয়েরই স্পর্কে; আর নাটকে গানের লয় উঠে আসে শুধু কথা সুরের খেলা থেকেই নয়, গায়কচরিত্র কিংবা পরিবেশ থেকেও।
‘মোদের যেমন খেলা তেমনি যে কাজ,
‘আমাদের পাকবে না চুল,
‘আমাদের খেপিয়ে বেড়ার,
‘চলি গো চলি গো’,
‘ভালোমানুষ নই রে মোরা’ প্রভৃতি গানের গতির চঞ্চলতার ভাব, যা ‘ফাল্গুণী’র যুবকদলের স্বভাবেরও ছন্দ, ঢিমা লয়ে তার যোগ্য স্ফূর্তি প্রকাশ হতে পারে না ।
আসলে কথা ও সুর কোনটিকেই তাল-খন্ড খন্ড করে নয়, আমরা এগুলির অভিন্ন সমগ্রতায় গানের ভাবকে শেষ পর্যন্ত ধরে নিতে চাই । তাই গানে কথা আর সুরকে অভিন্ন ভাবে দেখা অসম্ভব।
আরও দেখুন :