গীতিনাট্যের প্রকৃতি ও পরিধি

আজকের আমাদের আলোচনার বিষয় গীতিনাট্যের প্রকৃতি ও পরিধি

গীতিনাট্যের প্রকৃতি ও পরিধি

 

গীতিনাট্যের প্রকৃতি ও পরিধি

 

গীতিনাট্যের প্রকৃতি ও পরিধি

পূর্ববর্তী আলোচনার ক্ষেত্রে গীতিনাট্যগুলির প্রকৃতি ও পরিসীমা, সেই সঙ্গে পূর্বভাষণে উল্লিখিত মূল সুরের যথার্থ ব্যাখ্যা করা যেতে পারে। নাটকের বা গীতিনাট্যের দুটি প্রধান উপাদানের কথা বলা হয়েছে- অভিনয় ও কথা বা গান। এই প্রসঙ্গেই নিবলিখিত বৈশিষ্ট্যগুলি স্মরণীয়:

১. অভিনয়কে মূলতঃ দুভাগে ভাগ করা যায়- সাধারণ অভিনয় ও নৃত্য-অভিনয়।

২. সাধারণ অভিনয় গদ্যের মতো ছন্দ আছে কিন্তু তা প্রচ্ছন্ন বা ‘অনিয়মিত’; পক্ষান্তরে নৃত্য-অভিনয় কবিতার মতো, ছন্দ ব্যক্ত বা সুনিয়মিত।

৩. গীতিনাট্যের কথা অংশ কবিতা বলে ছন্দোময়; গানে পরিণত হওয়ার ফলে এই ছন্দোময়তার তীব্রতা গভীরতা ও বৈচিত্র্য বেড়ে যায় (কবিতা গানে পরিণত হয়, অর্থাৎ কথা-ছন্দও সুর-ছন্দে বা স্বরছন্দে পরিণত হয়।)

৪. গদ্যে লেখা সাধারণ নাটকেও ছন্দ স্পষ্টভাবে ব্যক্ত হয় না। অমিত্র বা মিত্র পয়ারে লিখিত নাটকে ছন্দ ঈষৎ ব্যক্ত। মাত্রাবৃত্ত বা স্বরবৃত্তে রচিত হলে তা আরো ব্যক্ত বিচিত্র ও মুখ্য হয়ে পড়ে। এবং যখন তা গানে পরিণত হয়- সেই মুহুর্তে ছন্দের বেগ, তীব্রতা, মাধুরী- সবই বহুগুণে বেড়ে যায়।

 

Google news
গুগল নিউজে আমাদের ফলো করুন

 

 

বস্তুতঃ গীতিনাট্যের একটি অঙ্গ ছন্দোময় হয়ে উঠেছে- তা হচ্ছে গানের দিক, যদিও তা অভিনয়ের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। এক কতায়, গানের ছন্দ অভিনয়ের ছন্দ দ্বারা বিধৃত। রবীন্দ্রনাথ আলোচনা প্রসঙ্গে বলেছেন- ‘গীতিনাট্য যাহা আদ্যোপান্ত সুরে অভিনয় করিতে হয়, তাহাতে স্থানবিশেষ তাল না থাকা বিশেষ আবশ্যক। নহিলে অভিনয়ের স্ফূর্তি হয় না। এখানে স্পষ্টভাবেই ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, গীতিনাট্যের প্রকৃতির মধ্যেই রয়েছে একটা।

বাল্মীকি-প্রতিভা ও কালমৃগয়া সমজাতীয় রচনা। প্রতি ও প্রকরণের দিক থেকে বিশেষ পার্থক্য নেই। এই দুখানি গীতিনাট্যে, একই প্রেরণা থেকে কথা ও সুরের আবির্ভাব ঘটে নি। অর্থাৎ কাব্যচেতনা ও সঙ্গীতচেতনা ও দুখানি গীতিনাট্যে সাযুজ্যলাভ করেনি। মায়ার খেলা এ দিক থেকে স্বতন্ত্র।

 

গীতিনাট্যের প্রকৃতি ও পরিধি

 

এই গীতিনাট্যের প্রকৃতিগত বৈশিষ্ট্য হচ্ছে- কথা ও সুর একই প্রেরণা সঞ্জাত সুস্পষ্টভাবেই প্রতীয়মান হয় যে কবির ছন্দচেতনা শুধু যে ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেয়েছে তা নয়, তা পরিপূর্ণ মিলনের জন্যেও প্রতীক্ষা করেছে। এরই রূপান্তর ঘটেছে নৃত্যনাট্যে- যেখানে অভিনয় পর্যন্ত (অর্থাৎ নৃত্য, কবির কথায় ‘অঙ্গভঙ্গীর কবিতা’ ছন্দোময় হয়ে উঠেছে। অঙ্গভঙ্গীর ছন্দ যখন রসের ধারক বাহক ও প্রকাশক হয় তখনই তাকে বলি নৃত্য ।

আরও দেখুন :

Leave a Comment