আজকের আমাদের আলোচনার বিষয় গীতিনাট্যের হালকা পরিহাস ও এর ব্যতিক্রমী উদাহরণ
গীতিনাট্যের হালকা পরিহাস ও এর ব্যতিক্রমী উদাহরণ
গীতিনাট্যের হালকা পরিহাস ও এর ব্যতিক্রমী উদাহরণ
পূর্বোক্ত দৃষ্টান্তগুলির অনুসরণে গীতিনাট্যের সাধারণ চেহারাটি অনুমান করা সম্ভব। প্রথমেই, ‘সংবাদ প্রভাকরের চিঠির প্রসঙ্গ স্মরণ করে বলছি, গীতিনাট্য সম্বন্ধে রচয়িতারা সুস্পষ্ট সংলাপরীতির অনুসারী। এমনকি গিরিশচন্দ্রের গীতিনাট্যের মধ্যেও তাই দেখি। ভাষার দিক থেকে গদ্যসংলাপ কথ্যরীতির অনুসরণ করছে। তৎকালীন কলকাতার কথ্যভাষাই তার আদর্শ। তা ছাড়া গানের ভাষার মধ্যে ঈশ্বরগুপ্তের অনুপ্রাসের, দাওরায়ের পাঁচালী বা কবিগানের প্রভাব অত্যন্ত প্রকট।
ব্যতিক্রমী উদাহরণসমূহ
উপরোক্ত ধারারই অন্তর্গত, অথচ স্বতন্ত্র, ১৮৭৯ সালে রচিত স্বর্ণকুমারী দেবীর ‘বসন্ত উৎসব’ এবং ১৮৮০ খৃষ্টাব্দে রচিত জ্যোতিরিন্দ্রনাথের ‘মানময়ী’ গীতিনাট্যের বিশেষ আলোচনা প্রাসঙ্গিক হবে বলে মনে হয়। বস্তুতঃ বাল্মীকিপ্রতিভা’র পিছনে তিনটি প্রভাব বর্তমান:
১ . ঠাকুরবাড়ীর সাংস্কৃতিক পরিবেশ ও গীতিনাট্যের অনুষ্ঠান
২ . বিহারীলালের সারদামঙ্গল
৩ . ইউরোপ ভ্রমণের অভিজ্ঞতা : অবশ্য অন্যত্র বলা হয়েছে রাজকুমার রায় রচিত
‘নাট্যসম্ভবই’ (১৮৭৬) প্রত্যক্ষভাবে এই গীতিনাট্য রচনায় প্রেরণা দিয়েছে।
জ্যোতিরিন্দ্রনাথের ‘মানময়ী’ ও স্বর্ণকুমারী দেবীর ‘বসন্ত উৎসব’-এর মধ্যে রীতিমত সৌসাদৃশ্য রয়েছে। ‘বসন্ত উৎসব’ই ‘মানময়ী’ রচনায় প্রেরণা দিয়ে থাকবে। ‘বসন্ত উৎসব’ গীতিনাট্যে ২টি অঙ্ক; প্রথম অঙ্কে ৩টি, দ্বিতীয় অঙ্কে ৩টি দৃশ্য। মোট ১২টি চরিত্র। ‘মানময়ী তে- মদন, বসন্ত, ঊর্বশী ও সখীগণ। দুখানি গীতিনাট্যই আদ্যন্ত গীতিময়। দৃষ্টান্ত:
‘বসন্ত উৎসব’ থেকে
ঊষা – ধরলো ধরলো ডালা, এই নে কামিনীফুল ।
ইন্দু – (ঊষাকে ঈষৎ ঠেলিয়া) তু সখি আঁচল দিয়ে তাড়া লো ভ্রমরাকুলা
ঊষা – (কপালে হাত দিয়া আকুলভাবে )
উহু, সখি, মরি-জলি
কপালে সংশেছে অলি
মানময়ী’ থেকে
১ম সখী – ছি ছি সজনী, যায় যায় রজনী-
উর্বশী – যায় যাক্, যায় যাক তোরা মাতৃ প্রমোদে সই।
সখীগণ – ছি ছি আজি! ওকি কথা রঙ্গিনি বলো সুখ তরঙ্গে সজনী সঙ্গে সঙ্গে প্রাণ ঢালো।
এই গীতিনাট্যের ‘আয় তবে সহচরী’ গানটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত। এই দুখানি গীতিনাট্যের আঙ্গিকগত সংহতি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। কাহিনীর দিক থেকে প্রচলিত ঐতিহ্যের অনুসরণ করলেও এই দুখানি গীতিনাট্য আদর্শের দিক থেকে সম্পূর্ণভাবে তার ব্যতিক্রম ।
সুনিশ্চিতভাবে বলা যায়, এর পিছনে রয়েছে ঠাকুরবাড়ীর সুমহান সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য।
আরও দেখুন :