Site icon Arts and Culture Gurukul [ শিল্প ও সংস্কৃতি গুরুকুল ] GOLN

গীতিনাট্য রূপান্তর

গীতিনাট্য রূপান্তর

আজকের আমাদের আলোচনার বিষয় গীতিনাট্য রূপান্তর

গীতিনাট্য রূপান্তর

 

 

গীতিনাট্য রূপান্তর

রূপান্তরের আলোচনা নানা দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ, সেই কারণেই অপরিহার্য। রবীন্দ্রসাহিত্যের সর্বত্রই অবশ্য এই রূপান্তর চোখে পড়ে। সে আলোচনা প্রসঙ্গান্তর। গীতিনাট্যের বিষয়গত ও আঙ্গিকগত রূপান্তরের দুটি দিক। এক, মূলকাহিনীর- দুই, রবীন্দ্রনাথের নিজের রচনার। গুরুত্বের দিক থেকে নিশ্চয়ই দ্বিতীয়টির দাবীই বেশী, কেননা, লেখকমাত্রই কাহিনীর উপজীব্য হিসেবে প্রাচীন বা প্রচলিত কাব্য ও কাহিনীর আশ্রয় নিয়ে থাকেন।

সেই গৃহীত উপাদান লেখকের ব্যক্তিত্বে বা সৃজনীক্ষমতার গুণে নবরূপায়নে অভিষিক্ত হয়ে ওঠে। একদিক থেকে বলা যায়, এই রূপান্তর সৃষ্টিরই নামান্তর। বরং ঐদিক থেকে লেখকের নিজের লেখার রূপান্তর অপেক্ষাকৃত বেশী আলোচনার যোগ্য; তার মধ্যে লেখকের মানসিক পরিবর্তন ও শিল্পচেতনার যেমন পরিচয় পাওয়া যায়, তেমনি আঙ্গিকের বৈচিত্রের প্রসঙ্গটিও উল্লেখযোগ্য।

রবীন্দ্রনাথের প্রথম গীতিনাট্যের ক্ষেত্রে এই দ্বৈত রূপান্তরই লক্ষ্য করা যায়। বাল্মীকিপ্রতিভার কাহিনী হল- দস্যু বাল্মীকির কবি-বাল্মীকিতে পরিণতি। মূল কাহিনী রামায়নের। রামায়নে বার্ণিত কাহিনীর সঙ্গে এই কাহিনীর যোগসূত্র নিতান্তই সূক্ষ ও দূরবর্তী। পার্থক্যও সুস্পষ্ট। (প্রসঙ্গক্রমে কাহিনী কাব্যের ‘ভাষা ও ছন্দ কবিতার কথাও স্মরণীর।)

১৮৮১ খৃষ্টাব্দে রচিত এই গীতিনাট্য প্রসঙ্গে কবি বলেছেন, ‘এই সারদামঙ্গলের আরম্ভ স্বর্গ হইতেই বাল্মীকি প্রতিভার ভাবটা আমার মাথায় আসে এবং সারদামঙ্গলের দুই একটা কবিতার রূপান্তরিত অবস্থায় বাল্মীকি প্রতিভায় গানরূপে স্থান পাইয়াছে।
প্রেরণার দিক থেকে মূল রামায়ণ ও বিহারীলালের ‘সারদা মঙ্গল’ এর ভূমিকা স্বীকার করেও এই গীতিনাট্যের কাহিনীবিন্যাস ও চরিত্রসৃষ্টিতে অভিনবত্বই চোখে পড়ে।

এবং তা যেমন মূল রামায়নের থেকে স্বতন্ত্র, তেমনি সারদামঙ্গলের সঙ্গেও অমিলটাই বেশী। এই গীতিনাট্যের সংক্ষিপ্ত পরিসরে বল্মীকির চরিত্রটি কবি যে পরিবেশ ও পটভূমিকায় ফুটিয়ে তুলেছেন তার পিছনে রবীন্দ্রনাথের স্বকীয়তারই স্বাক্ষর রয়েছে। দস্যুবৃন্দ, বালিকা, বনদেবীগণ, সবশেষে লক্ষ্মী সরস্বতীর আবির্ভাব- এসবই কবির কল্পনাসজ্জাত।

 

গুগল নিউজে আমাদের ফলো করুন

 

 

প্রসঙ্গক্রমে ১৮৮২ খৃষ্টাব্দে কালমৃগয়ার কথাও স্মরণযোগ্য। এই গীতিনাট্যের কাহিনীও রামায়ণ থেকেই নেওয়া। দশরথ মৃগয়াকালে অন্ধমুনির পুত্রকে মৃগভ্রমে বধ করেন, এই কাহিনীই রবীন্দ্রনাথের উপজীব্য। লক্ষ্যণীয়, এই গীতিনাট্যের শিকারীগণ, বন-দেবী, লীলা, বিদূষক- চরিত্রগুলি মৌলিক সৃষ্টি ।

আলোচিত গীতিনাট্য দুটির কাহিনীগত প্রেরণা রামায়ণের গীতিনাট্য মায়ার খেলার মধ্যেই সর্বপ্রথম দেখা গেল স্বতন্ত্র সৃষ্টির প্রয়াস। প্রসঙ্গক্রমে একটা কথা বলা দরকার। ইতিমধ্যেই জ্যোতিরিন্দ্রনাথের ‘মানময়ী’ এবং তার আগে স্বর্ণকুমারী দেবীর ‘বসন্ত উৎসব’ ঠাকুর- পরিবারে ঘরোয়া পরিবেশে অভিনীত হয়েছিল। এ দুখানি গীতিনাট্যের কাহিনীগত সাদৃশ্য লক্ষণীয়।

রবীন্দ্রনাথ মায়ার খেলা গীতিনাট্যেই সর্বপ্রথম মৌলিকত্ব দেখালেন সব দিক থেকে। গদ্যনাটক নলিনীর সঙ্গে এই গীতিনাট্যের সাদৃশ্য রয়েছে। মায়ার খেলাকে নলিনীরই রূপান্তর বলা যায়। আঙ্গিকের রূপান্তর ছাড়াও বাল্মীকি-প্রতিভার রূপান্তর আর একাধিক থেকে উল্লেখযোগ্য- তা হচ্ছে ভাবের পরিবর্তন। এই পরিবর্তন ঘটেছে অবশ্য বাল্মীকি-চরিত্রকে কেন্দ্র করে।

এই গীতিনাট্যের প্রতিপাদ্য-কাহিনীর সঙ্গে মূল রামায়ণ বা কৃত্তিবাসের রামায়ণের সঙ্গে প্রাসঙ্গিক অংশের তুলনা করলেই দেখা যাবে- বাল্মীকি চরিত্রটি নতুন রুপে অঙ্কিত। এই চরিত্রের মধ্যে দিয়ে কবির একটি বিশেষ বক্তব্য ফুটে উঠেছে। কাহিনী কাব্যের কাব্যনাট্যগুলির বিশেষ করে গান্ধারীর আবেদন বা কর্ণকুন্তীসংবাদ-এর মধ্যেও দেখা যায় চরিত্রগুলি এক একটি ভাবের দ্যোতক।

 

 

বাল্মীকি- চরিত্রও তাই। এই গীতিনাট্যের মধ্যেই উত্তর-কালের মানব বা প্রেমধর্মের বীজটি নিহিত। কবি জীবনের শুরুতেই যে অন্তদৃষ্টির পরিচয় পেলাম বাল্মীকির চরিত্রে, তা সত্যিই দূলর্ভ ও বিস্ময়কর। যথার্থই তিনি এ বিষয়ে কৃত্তিবাস বিহারীলালকে অতিক্রম করে গেছেন ।

আরও দেখুন :

Exit mobile version