চিরকুমার সভা

আজকের আমাদের আলোচনার বিষয় চিরকুমার সভা

চিরকুমার সভা

 

চিরকুমার সভা

 

চিরকুমার সভা

চিরকুমার সভা উপন্যাস আকারে ভারতীতে (১৩০৭-১৩০৮) ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হবার পর ১৩১৪ সালে প্রজাপতির নির্বন্ধ নামে প্রকাশিত হয়। কবি আবার এটিকে পরিবর্তিত করে নতুনভাবে নাট্যরূপ দান করেন। ১৩৩২ সালে তা চিরকুমার সভা নামে প্রকাশিত হয়।

শোধবোধ

কর্মফল (১৩১০) গল্পটির নাট্যরূপ ১৩৩৩ সালে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়। এটি লঘুরসের সামাজিক নাটক। এ নাটকে কয়েকটি গান আছে এবং এগুলো গান হিসেবে উৎকৃষ্ট। যেমন-

‘সে আমার গোপন কথা শুনে যা ও সখী’,

বেদনায় ভরে গিয়েছে পেয়ালা’,

‘এবার উজাড় করে লও হে আমারে’ ইত্যাদি। নায়িকা নলিনী এ সবের নায়িকা। গানগুলো সচরাচর নাটকে যেমন গান গাওয়া হয়ে থাকে, তেমনই। এর অতিরিক্ত কোন মূল্য এদের নেই। গৃহপ্রবেশ (১৩৩২) নাটকটি শেষের রাত্রি (১৩২১) গল্পের নাট্যরূপ। গল্পকে নাটকরূপে উপস্থাপিত করার সময় কয়েকটি গান যোজনা করা হয়েছে।

এখানে গান আছে মোট নয়টি। মৃত্যুশয্যায় শায়িত যতীন ক্রমশ অন্তিম পরিণামের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, এই হচ্ছে নাটকের বিষয়। যতীনের অনুরোধে গাওয়া হিমির প্রথম গান-

“খেলাঘর বাঁধতে লেগেছি;

মনের ভিতর’।

পাশের ঘরে সে গাইল ‘বাজো রে বাঁশরি বাজো। তাতেও কাহিনীর কারুণ্য যেন আরো উচ্ছলিত হয়ে ওঠে। দাম্পত্যজীবনের প্রাথমিক স্মৃতিতে যতীন উদ্বেল হয়ে উঠলে হিমিকে গাইতে বলে

‘যৌবন সরসীনিরে

মিলনশতদল।

যতীনের মন যখন তার পত্নী মণির চিন্তায় উদ্বেল, মণি যখন তার কাছে নেই, তখন হিমির কণ্ঠে ধ্বনিত হয় যতীনের ইচ্ছামত গান

‘আমার মন চেয়ে রয় মনে মনে হেরে মাধুরী

নয়ন আমার কাঙ্গাল হয়ে মরে না ঘুরি।’

এরপর যতীন গাইল একটি বাউল সুরের গান:

ওরে মন যখন জাগলি না রে

তখন মনের মানুষ এল দ্বারে।

 

Google news
গুগল নিউজে আমাদের ফলো করুন

 

 

গুণ শুন করে কিন্তু বাউলের মুখে শোনা এই গানটি গেয়ে হিমিকে সে বলেছে যে, সে বুঝতে পারছে হিমির মন জেগেছে। কিন্তু এই জাগরণ পরিণতি লাভ করবে ‘তুলবে তুফান হাহাকারে’। এখনা যতীনের চোখে গৃহপ্রবেশের স্বপ্ন। এই স্বপ্নের বেদনাই ধ্বনিত হয় গানের সুরে। হিমির পরবর্তী গান:

‘ঐ মরণের সাগর পারে চুপে চুপে

এলে তুমি ভুবনমোহন স্বপনরূপে’।

এই মৃত্যুবিষয়ক গানটি যতীনের আসন্ন মৃত্যুর বেদনাকে যেন চারদিকে উচ্ছসিত করে তুলছে। এরপর হিমি গাইছে-

‘যদি হল যাবার ক্ষণ

তবে যাও দিয়ে যাও শেষের পরশন’।

কিন্তু শেষ স্পর্শ যে নিবেদন করবে সেই মণি নেই, সে পিতৃগৃহে যতীনের বহু প্রত্যাশিত অথচ কোন দিন যা সে চাক্ষুস করতে পারবে না সেই গৃহ প্রবেশকে নিয়ে হিমি গাইল :

‘অগ্নিশিখা এসো এসো

আনো আনে আলো।

যতীন ধীরে ধীরে মৃত্যুর গৃহে প্রবেশ করছে সেই বেদনাই এই গানের বাণীর বৈপরীত্যে তীব্র হয়ে ওঠে।  হিমির শেষ গান:

 

চিরকুমার সভা

 

‘জীবনমরণের সীমানা ছাড়ায়ে

বন্ধু হে আমার রয়েছ দাঁড়ায়ে।’

অত্যসন্ন মৃত্যুর অসহ শোক এই গান তীব্র হয়ে উঠেছে। বস্তুত এই নাটকের সব বেদনাই গভীর হয়েছে গানে এখানেই গানের উপযোগিতা।

আরও দেখুন :

Leave a Comment