ঠাকুরবাড়ির সাঞ্জিতিক আবহাওয়ায় গীতিনাট্য

আজকের আমাদের আলোচনার বিষয় ঠাকুরবাড়ির সাঞ্জিতিক আবহাওয়ায় গীতিনাট্য

ঠাকুরবাড়ির সাঞ্জিতিক আবহাওয়ায় গীতিনাট্য

 

ঠাকুরবাড়ির সাঞ্জিতিক আবহাওয়ায় গীতিনাট্য

ঠাকুরবাড়ির সাঞ্জিতিক আবহাওয়ায় গীতিনাট্য

ঠাকুরবাড়ীকে ঘিরে সঙ্গীতের বা সংস্কৃতির যে আবহাওয়া রচিত হয়েছিলো, তার সুপরিমিত দৃষ্টান্ত উল্লেখ আছে। ইতস্ততঃ বিক্ষিপ্ত টুকরো টুকরো ছবি থেকে এই আবহাওয়ার ইতিহাসটি সংগ্রহ করা যেতে পারে।

রবীন্দ্রনাথের ‘জীবনস্মৃতি’ থেকেই শুরু করা যাক

১ . সন্ধ্যাবেলায় রেড়ির তেলের ভাঙ্গা সেজের চারদিকে আমাদের বসাইয়া সে রামায়ণ-মহাভারত শোনাইত!… এহেন সংকটের সময় হঠাৎ আমাদের পিতার অনুচর কিশোরী চাটুজ্যে আসিয়া দাওরায়ের পাঁচালি গাহিয়া অতি দ্রুত গতিতে বাকি অংশটুকু পুরণ করিয়া গেল; কৃত্তিবাসের সরল পয়ারের মৃদুমন্দ কলধ্বনি কোথায় বিলুপ্ত হইল- অনুপ্রাসের ঝকমকি ও ঝংকারে আমরা একেবারে হতবুদ্ধি হইয়া গেলাম ।

২ . রবিবার সকালে বিষ্ণুর কাছে গান শিখিতে হইত।

৩ . গান সম্বন্ধে আমি শ্ৰীকণ্ঠবাবুর প্রিয় শিষ্য ছিলাম।

৪ . সেই গীতিগোবিন্দখানা যে কতবার পড়িয়াছি তাহা বলিতে পারি না। জয়দেব যাহা বলিতে চাহিয়াছেন তাহা কিছুই বুঝি নাই, কিন্তু ছন্দে ও কথায় মিলিয়া আমার মনের মধ্যে যে জিনিসটা গাঁতা হইতেছিলো তাহা আমার পক্ষে সামান্য নহে।

‘ছেলেবেলা’ থেকে

১ . আমাদের সময়কার কিছু পূর্বে ধনীঘরে ছিলো শখের যাত্রার চলন। মিহিগলাওয়ালা ছেলেদের বাছাই করে নিয়ে বল বাঁধার ধুম ছিলো। আমার মেজকাকা ছিলেন এইরকম একটি শখের দলের দলপতি।

২ . বিলিতি সঙ্গীতের গুণ হচ্ছে তাতে সুর সাধানো হয় খুব খাঁটি করে, কান দোরস্ত হয়ে যায়, আর পিয়ানোর শাসনে তালেও ঢিলেমি থাকে না। এদিকে বিষ্ণুর কাছে দিশি গান শুরু হয়েছে শিশুকাল থেকে

৩ . বৌঠাকরুন গা ধুয়ে চুল বেঁধে তৈরি হয়ে বসতেন। গায়ে একখানা পাতলা চাদর উড়িয়ে আসতেন জ্যোতিদাদা, বেহালাতে লাগাতেন ছড়ি, আমি ধরতুম চড়া সুরের গান।

‘ঘরোয়া’ থেকে

১ . রোজ জলসা হত বাড়িতে। রবিকাকা গান রচনা করতেন, আমি তখন তাঁর সঙ্গে বসে তাঁর গানের সঙ্গে সুর মিলিয়ে এসরাজা বাজাতুম।

২ . ‘অশ্রুমতী’র এইসব গানে সব মাত্র ক’রে দিলে। এই গানটায় সুর দিয়েছিলেন। জ্যোতিকাকা, ইটালিয়ান ঝিঁঝিট রবিকাকাও কয়েকটা গানে সুর দিয়েছিলেন বোধহয়। বিলেতি সুরে বাংলা গান, এখন মজা লাগে ভাবতে ।

 

ঠাকুরবাড়ির সাঞ্জিতিক আবহাওয়ায় গীতিনাট্য

 

‘জোড়াসাঁকোর ধারে’ থেকে

১. গান বাজনাও হত। তখনকার দিনে মাইনে-করা গাইয়ে থাকতো বাড়িতে

২ . এমনিতরো নাচ দেখেছিলুম সে আরেকবার। কর্ণাট থেকে নাম করা বাইজি আনিয়েছেন। খুব ওস্তাদ নাচিয়ে মেয়েটি।

৩ . তিন পুরুষের সেইসব গানের সুর এসে মেশে আবার নতুন নতুন গানের সঙ্গে, রবিকাকার গানের সঙ্গে, দ্বিজুবাবুর গানের সঙ্গে।

জ্যোতিরিন্দ্রনাথের জীবনস্মৃতি’ থেকে

সরোজিনী পক্রাশের পর হইতেই আমরা রবিকে প্রমোশান দিয়া আমাদের সমশ্রেণীতে উঠাইয়া লইলাম।… সচরাচর গান বাঁধিয়া তাহারে সুরসংযোগ করাইয়া প্রচলিত রীতি; কিন্তু আমাদের পদ্ধতি ছিলো উল্টা সুরের অনুরূপ গান তৈরি হইতো।

সরলাদেবীর ‘জীবনের ঝরাপাতা থেকে

১ . রবীন্দ্রনাথের জন্যে বাড়িতে ভূমি তৈরি। তিনি এসে তাতে নতুন নতুন বীজক্ষেপ করতে লাগলেন ।

২ .রবিমামা বিলেত থেকে ফেরার পর তিনি নেতা হলেন দাদাদের সঙ্গে সঙ্গে নতুন নতুন ব্রহ্মসঙ্গীত রচনা করা ওস্তাদদের কাছ থেকে সুর নিয়ে সুর ভাঙ্গা, নিজের মৌলিক ধারার সুর তখন থেকেই তৈরি করা ও শেখান- এ সরে কর্তা হলেন রবিমামা।

৩. জীবনের প্রথম দিকে কাব্য বা সঙগীতের রসগ্রাহিতায় রবীন্দ্রনাথের আত্মপর বিচার ছিলো না। যে কবির যেটি ভালো লাগতো সেটিতে নিজের সুর বসিয়ে গেয়ে ও গাইয়ে তার প্রচার করতেন।

 

ঠাকুরবাড়ির সাঞ্জিতিক আবহাওয়ায় গীতিনাট্য

 

রবিন্দ্রসঙ্গীতের ত্রিবেণী সঙ্গম’-এ ইন্দিরা দেবী চৌধুরানী বলেছেন

কবি প্রথম জীবনে বিলেত প্রবাসে কিছুকাল কাটিয়েছিলেন। তাই তাঁর প্রথম দিককার গানে বা গীতিনাট্যে বিলেতি প্রভাব লক্ষিত হওয়াই স্বাভাবিক।

আরও দেখুন :

Leave a Comment