দ্বিজেন্দ্রলালের নাটকে স্বদেশ

আজকের আমাদের আলোচনার বিষয় দ্বিজেন্দ্রলালের নাটকে স্বদেশ

দ্বিজেন্দ্রলালের নাটকে স্বদেশ

 

দ্বিজেন্দ্রলালের নাটকে স্বদেশ

 

দ্বিজেন্দ্রলালের নাটকে স্বদেশ

দ্বিজেন্দ্রলাল রায় বাংলা নাটককে বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত করেছেন নিজস্ব উদ্দীপনায়। আধুনিক নাট্যরীতিতে প্রতিষ্ঠা পায় তাঁর নাটক এবং তিনি পান শ্রেষ্ঠ নাট্যকারের খ্যাতি। বাংলা নাটককে তিনি আধুনিক নাট্যরীতিতে বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত করতে চেয়েছেন। তাঁর গদ্যনাটকের সংলাপের প্রয়োগরীতিও স্বতন্ত্র। তাই তিনি ‘রানা প্রতাপ’, ‘দুর্গাদাস’, ‘নূরজাহান’, ‘মেবার পতন’ ও ‘সাজাহান’ নাটকগুলি গদ্যেই রচনা করেন।

পদ্য সংলাপের চেয়ে তিনি গদ্য সংলাপকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। কারণ মানুষ গদ্যেই কথা বলে। এবং গদ্য সাধারণ মানুষের চলমান জীবন রীতির ভাষা। প্রাচীন ভারতীয় ইতিহাস তাঁর নাটকের প্রধান উপজীব্য। হিন্দুযুগ এবং মুসলমান যুগের ইতিহাস সংগ্রহই তাঁর নাটকে ফুটে উঠেছে। তবে তৎকালে প্রচলিত কোনো একটি পন্থাকে তিনি অবলম্বন করেননি। সেই সময়ের বাংলা নাটক ছিলো শেক্সপিয়রের নাট্যরীতির অনুকরণে পরিপূর্ণ।

এদিক থেকে দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের নাটকে পাশ্চাত্য প্রভাব অত্যন্ত স্পষ্ট। রঙ্গমঞ্চ থেকে শুরু করে অভিনয় সকল ক্ষেত্রেই পাশ্চাত্য কীর্তির প্রভাব। নিজস্ব ঐতিহাসিক পটভূমিকে তিনি পাশ্চাত্য নাট্যরীতির সাথে এক অভিনব ধারায় সন্নিবেশন করেছেন, যে কারণে তাঁর নাটকসমূহ সেই সময়ে বহুল আলোচিত ও সমাদৃত হয়।

“দ্বিজেন্দ্রলালের ঐতিহাসিক নাটক সম্পর্কে আর একটি প্রসঙ্গও স্মরণীয়। বাংলা নাটকে দীর্ঘকাল শেক্সপীয়রের নাট্যরীতিকে অনুসরণ করার চেষ্টা চলেছে। মধুসূদন, দীনবন্ধু, জ্যোতিরিন্দ্রনাথ প্রভৃতি পূর্ববর্তী নাট্যকারেরাও পাশ্চাত্য নাট্যরীতিকে অনুশীলন করার চেষ্টা করেছেন। গিরিশচন্দ্রও শেক্সপীয়রের দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন। তবু পাশ্চাত্য নাট্যরীতি দ্বিজেন্দ্রলালের নাটকেই সবচেয়ে বেশী সক্রিয় হয়ে উঠেছিল।

তাঁর নাটকে পাশ্চাত্য প্রভাব অত্যন্ত স্পষ্ট। নাটকীয় গতিবেগ, চরিত্রসৃষ্টি, অন্তর্দ্বন্দ রচনা, ট্রাজিক রস সৃষ্টি প্রভৃতি বিষয়ে তিনি পাশ্চাত্য নাটকের দ্বারা গভীরভাবে প্রভাবিত হন। বিলাত-প্রবাসকালে পাশ্চাত্য জীবনচর্যার প্রতি তিনি শুধু অনুরক্তই হননি, ইউরোপীয় রঙ্গমঞ্চ ও অভিনয়ের সঙ্গেও তাঁর ঘনিষ্ঠ পরিচয় হয়েছিল।

দ্বিজেন্দ্রলালের ঐতিহাসিক নাট্যরীতিতে পাশ্চাত্য প্রভাব থাকলেও, নাটকে মোগল রাজপুতের সংঘাতের কাহিনি সন্নিবেশিত হলেও তাকে বস্তুধর্মী করেছেন তৎকালীন ভারতবর্ষে চলমান দেশকালের পরিস্থিতির আবহে অর্থাৎ নাটকের দৃশ্যপটগুলি যেন ইংরেজ শ্রেণির সাথে ভারতবাসীর ঘাত-প্রতিঘাতের দ্বন্দ্বের কথাই স্মরণ করিয়ে দিয়েছে বারবার। তুলে ধরেছেন দেশেপ্রেমের জ্বলন্ত উদাহরণ।

বিশেষ করে প্রতাপসিংহ, দুর্গাদাস ও মেবার পতন এই নাটকসমূহে দেশপ্রেমের সাথে বিশ্বপ্রেমের সংযোগ ঘটাতে চেয়েছেন কবি। তাঁর গান নাটকে সংযুক্তির কারণে নাটকীয় চমৎকারিত্ব বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে, নাট্যরূপ সুস্পষ্ট হয়েছে। ঐতিহাসিক নাটকগুলিতেই মূলত দ্বিজেন্দ্রলালের সংগীত সন্নিবেশের কৃতিত্ব ফলপ্রসূ হয়েছে।

তাঁর সৃষ্ট নাটকগুলির মধ্যে মেবার পতন নাটকটিতেই নাটকীয় সংঘাতকে সংগীতের মধ্যদিয়ে ফুটিয়ে তুলতে অধিক স্বার্থকতা লাভ করে। এ ক্ষেত্রে তাঁর ঐতিহাসিক নাটক সম্পর্কে রথীন্দ্রনাথ রায়ের উদ্ধৃতি উল্লেখযোগ্য-

“আমার দেশ”, “আমার জন্মভূমি’, ‘ভারতবর্ষ’, ‘পতিতোদ্ধারিণী গঙ্গে’, প্রভৃতি গানে দেশপ্রেমের উন্মাদনায় সেদিন বাংলাদেশের আকাশ বাতাস পরিব্যাপ্ত হয়ে উঠেছিল। এই গানগুলি তার বিভিন্ন নাটকে সংযোজিত হয়েছে। দ্বিজেন্দ্রলাল যখন গয়ায় ছিলেন সেই সময় আচার্য জগদীশচন্দ্র তাঁর অতিথি হয়েছিলেন। জগদীশচন্দ্রকে তিনি ‘মেবার পাহাড়’ গান গেয়ে শুনিয়েছিলেন।

সেই গান শুনে জগদীশচন্দ্র বলেন: আপনার এ গানে আমরা কবিত্ব উপভোগ করতে পারি, কিন্তু যদি আমি মেবারের লোক হতেন তাহলে আমার প্রাণ দিয়ে আগুন ছুটত। তাই আপনাকে অনুরোধ করি, আপনি এমন একটি গান লিখুন যাতে বাংলার বিষয় ও ঘটনা থাকে।’ দ্বিজেন্দ্রলাল তখন তাঁর ‘আমার দেশ’ নামক সুবিখ্যাত মাতৃবন্দনাটি লেখেন।

এছাড়াও রথীন্দ্রনাথ রায় এ বিষয়টিকে আরো স্পষ্ট করে অন্যত্র বলেছেন- “তারাবাই’ রচনার পর দ্বিজেন্দ্রলাল সাতখানি ঐতিহাসিক নাটক রচনা করেন : ‘প্রতাপসিংহ’ (১৯০৫), ‘দুর্গাদাস’ (১৯০৬), ‘নূরজাহান’ (১৯০৮), ‘মেবার পতন’ (১৯০৮), ‘সাজাহান’ (১৯০৯), ‘চন্দ্রগুপ্ত’ (১৯১১), সিংহল বিজয় (১৯১৫)। কিন্তু প্রকৃতিগত দিক থেকে এই সাতখানি ঐতিহাসিক নাটককে একই শ্রেণীভুক্ত করা সম্ভব নয়।

‘প্রতাপসিংহ’ থেকে ‘সাজাহান’ পর্যন্ত পাঁচখানি নাটকের উপাদান মুসলমান যুগের ইতিহাস থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। … ‘প্রতাপসিংহ’, ‘দুর্গাদাস’ ও ‘মেবার পতন’ এই তিনখানি নাটকে রাজপুত ইতিহাসকেই প্রাধান্য দিয়ে তাদের শৌর্য-বীর্য, দেশপ্রেমিকতা ও আদর্শবাদকে উজ্জ্বল বর্ণে রঞ্জিত করা হয়েছে। দ্বিজেন্দ্রলালের একটি বিশেষ দর্শন এই তিনখানি নাটকের ভিতর দিয়ে নানা শাখায় পল্লবিত হয়েছে।

‘প্রতাপসিংহ’ নাটকে যে জ্বলন্ত দেশপ্রেম বহ্নিমান হয়ে উঠেছে, কল্যাণ-মৈত্রী- বিশ্বপ্রেমের ভিতর দিয়ে নাট্যকার তাকেই একটি মহত্তর রূপ দিয়েছেন ‘মেবার পতন’ নাটকে। নাট্যকার দ্বিজেন্দ্রলাল নাট্যসাহিত্যের ইতিহাসে এক বিরল নাম। নাটকীয় তাৎপর্য সৃষ্টিতে তাঁর প্রত্যেকটি গান সার্থক। নাটকে ব্যবহৃত তাঁর স্বদেশপর্বের গানসমূহের মধ্যে ‘ধনধান্য পুষ্পভরা’ (সাজাহান), ‘ভেঙ্গে গেছে মোর স্বপ্নের ঘোর (মেবার পতন), “কিসের শোক করিস রে ভাই’ (মেবার পতন) উল্লেখযোগ্য।

নাট্যকার দ্বিজেন্দ্রলাল রায় খ্যাতি ও জনপ্রিয়তা পান মূলত তাঁর ঐতিহাসিক নাটক রচনার মধ্যদিয়েই। এই ঐতিহাসিক নাটকগুলোর মধ্যদিয়ে তিনি জাতীয় আকাঙ্ক্ষা ও বাসনার কথা ব্যক্ত করেছেন। স্বদেশি আন্দোলনের উন্মাদনায় দেশ যখন ভাসছিল তখন তিনি রচনা করলেন ঐতিহাসিক বীরগাঁথা রানাপ্রতাপ সিংহ (১৯০৫)।

“রাজ্যভ্রষ্ট রানা প্রতাপের চিতোর উদ্ধারের কঠোর সংকল্প থেকে তাঁর মৃত্যু পর্যন্ত প্রায় ২৫ বছরের কাহিনি এই নাটকে বর্ণিত হয়েছে। এই নাটকে গানের সংখ্যা ৯। কয়েকটি গান:

১. ধাও ধাও সমরক্ষেত্রে

২. প্রেম যে মাখা বিষে

৩. বসিয়া বিজন বনে

৪. সুখের কথা বোলো না আর

৫. সে মুখ কেন।

 

Google news
গুগল নিউজে আমাদের ফলো করুন

 

 

তাঁর মেবার পতন (১৯০৮) নাটকে ব্যবহৃত স্বদেশপর্বের গানের মধ্যদিয়ে তিনি স্বদেশ চেতনার নিগূঢ় ইঙ্গিত দিয়েছেন। হতাশ কবি দ্বিজেন্দ্রলালের পরিবর্তনের দিকগুলি এখানে পরিলক্ষিত হয় ‘মেবার পাহাড় মেবার পাহাড়’ গানটিতে। এখানে তিনি হতাশার গ্লানিতে আত্মহারা। মূলত এই নাটকটিতে তিনি কল্যাণী, সত্যবতী ও মানসী চরিত্রের মধ্যদিয়ে তিনটি নীতিকে প্রতীকরূপে প্রতিষ্ঠা দিতে চেয়েছেন।

সত্যবতীকে দেশপ্রেম এবং মানসীকে বিশ্বপ্রেমের প্রতীক হিসেবে প্রতিষ্ঠা দিয়েছেন কবি। এই নাটকে ব্যবহৃত ১১টি গানের মধ্যে ‘মেবার পতন’ গানটির মধ্যদিয়ে তৎকালীন ভারতবর্ষের শোকগাঁথা ইঙ্গিতে পরিস্ফুটিত হয়। যেমন-

“মেবার পাহাড়- শিখরে তাহার

রক্তনিশান উড়ে না আর।

এ হীন সজ্জা- এ ঘোর লজ্জা-

ঢেকে দে গভীর অন্ধকার ।

সাজাহান নাটকে রয়েছে ৯টি গান। এই নাটকের তৃতীয় অংকের ৬ষ্ঠ দৃশ্যে রয়েছে দেশ বন্দনার বিখ্যাত গানটি।

“ধনধান্যপুষ্পভরা আমাদের এই বসুন্ধরা

তাহার মাঝে আছে এ দেশ এক সকল দেশের সেরা

ও সে স্বপ্ন দিয়ে তৈরী সে-দেশ, স্মৃতি দিয়ে ঘেরা;

(কোরাস)-

এমন দেশটি কোথায় খুঁজে পাবে নাকো তুমি,

সকল দেশের রানী সেযে আমার জন্মভূমি ॥

এই গানটি দিয়ে রাজপুত নারী মহামায়া রাজা যশোবন্ত সিংহকে দেশপ্রেমে উদ্ভাসিত করেছেন। এই নাটকটির দেশপর্বের এ গানটির মধ্যদিয়ে কবি রূপক অর্থে ভারতবর্ষের সকল মানুষে দেশপ্রেমবোধ জাগাবার প্রয়াস ব্যক্ত করেছেন। এ এমনই এক গান যা যুগ যুগ ধরে দেশপ্রেমের উচ্চ আদর্শ ঘোষণা করে চলেছে। সাজাহান (১৯০৯) নাটকটি মূলত এই একটি মাত্র গানের কারণেই চিরস্মরণীয় হয়ে রয়েছে। যার প্রকাশ রথীন্দ্রনাথের উদ্ধৃতিতে আরো স্পষ্ট হবে-

“দ্বিজেন্দ্রলাল রাজপুত-গৌরবের অতীতের ছবি ফুটিয়েছেন। অনেক দেশপ্রেমমূলক গানও রাজপুত নরনারীদের কণ্ঠে উচ্চারিত হয়েছে। আসলে তিনি রাজপুত জাতির অতীত গরিমার ভেতর দিয়ে নিজেদের কথাই বলেছেন। ধিনধান্যে পুষ্পেভরা’ গানটি ‘সাজাহান’ নাটকে চারণ বালকদের দ্বারা গীত হলেও এ যে বাংলাদেশেরই বন্দনা।

দ্বিজেন্দ্রলালের স্বদেশপ্রেমের গানগুলির পশ্চাৎপটে একটি যুগের উন্মাদনা আছে সত্য, কিন্তু এই গানগুলি দেশ ও কালের দাবি মিটিয়েও যে চিরন্তন ও সার্বজনীন ভাবরূপকে ফুটিয়েছে, একথা বোধ হয় আরও সত্য। এ প্রসঙ্গে আলোচনা করতে গিয়ে তিনি আরো বলেছেন- “দ্বিজেন্দ্রলালের সঙ্গীতগুলিতে জাতি গঠনের প্রচুর উপাদান আছে।

স্পষ্টতায়, বলিষ্ঠতায়, পৌরুষে ও হৃদয়াবেগের তীব্র আলোড়নে তাঁর জাতীয় মহাসঙ্গীতগুলি শুধু তাঁর নিজের কালেই নয়, পরবর্তীকালেও সংগ্রামশীল জাতীয় জীবনের আশা-আকাঙ্ক্ষাকে রূপায়িত করেছিল। তাঁর অকৃত্রিম ভাবুকতা ও কাল সচেতনতা তাঁকে শুধু আকাশ-প্রসারী স্বপ্নলোকে উধাও করে নিয়ে যায়। নি, জাতীয় জীবনের অশ্রু-বেদনা, আশা-আকাঙ্ক্ষার বিচিত্র তরঙ্গধ্বনির মাঝখানে নিয়ে এসেছে।

সম্পদ মূলত এতে ব্যবহৃত সংগীত ভাণ্ডার বা নাট্যসংগীত। রবীন্দ্রনাথ তাঁর গীতি-নৃত্যনাট্য ও নাটকসমূহে সংগীতের বহুল ব্যবহার করেছেন কখনো নাটকের একঘেয়েমি কাটানোর জন্য কখনো নাটকের উক্তিকে আরো প্রাণবন্ত করে তুলবার জন্য বা কখনো চরিত্র ব্যবহারের প্রয়োজনে। যেমন-বাউল, দাদা ঠাকুর প্রভৃতি চরিত্রের সমন্বয় দেখি। রবীন্দ্রনাথের পরে দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ই তাঁর নাটকে সংগীতের ব্যবহারের কাজটি সফলতার সাথে করেন।

কিন্তু ঐতিহাসিক পটভূমিকার কারণেই হোক বা অন্য যেকোনো কারণেই হোক তাঁর সৃষ্ট নাটক বহু সমাদর পায় এবং বহু রঙ্গমঞ্চে বা থিয়েটারে বহু অদক্ষ শিল্পীর সংস্পর্শে বিকৃতির অতল গহ্বরে তলাতে থাকে। পরবর্তীকালে তাঁর নাটকের গানসমূহ নাটকের প্রয়োজন ছাড়াও অদক্ষ-অভদ্র শ্রেণির রঙ্গালয়ের নিছক হালকা আমোদ প্রমোদের খোরাকে পরিণত হয়।

যে কারণে অনেকাংশে এই গানসমূহ এর সৌন্দর্য ও সুরের মোহিনী ক্ষমতা হারায়। এ প্রসঙ্গে দেবকুমার রায় চৌধুরীর উক্তি প্রণিধানযোগ্য-

“সে সময়ে প্রায় প্রতিদিনই ‘হরেক রকমে, নানান বেশে, বিচিত্র ভাবে ও বিবিধ ‘ঢঙ্গে’ কত-সব বিপুল আয়োজন সহকারে কলিকাতার ইতর-ভদ্র, সংখ্যাতীত, উন্মুক্ত জনসংঘ মনমাতানো স্বদেশী সংগীত গাইতে গাইতে, শহরময় পথে পথে পরিভ্রমণ করিয়া-বেড়াইত; আর সেই নয়নরঞ্জন, মনঃপ্রাণ-মোহন, অপূর্ব শোভাযাত্রার দৃশ্য দেখিয়া দেশপ্রাণ কবি-আমাদের তখন আপন উদ্বেলিত অন্তরের উদ্দাম ভাবাবেগ সংবরণ করিতে না পারিয়া,

 

দ্বিজেন্দ্রলালের নাটকে স্বদেশ

 

কখনও এতটুকু বালকের মত ‘আহ্লাদে আটখানা’ হইয়া, ছুটিয়া আসিয়া স্বজন-বন্ধুদের জড়াইয়া ধরিতেন; কখনও উৎসাহভরে, উচ্চকণ্ঠে “বন্দেমাতরম” বলিয়া আনন্দে হাতে তালি দিতে দিতে ঐ সব সঙ্গীতের সঙ্গে সঙ্গে নৃত্য করিতে থাকিতেন; আবার কখনও বা বাষ্পসিক্ত লোচনযুগল ঊর্ধ্বপানে উন্মুক্ত করিয়া, প্রেমাকুল প্রাণে ‘মা, মা’ বলিয়া যথার্থই যেন কাহার অপার্থিব ধ্যানে বিভোর হইয়া যাইতেন!

এ-সব অবস্থায় তাহার সেই হর্ষোজ্জ্বল, রক্তিম মুখে কিংবা উল্লাস বিস্ফারিত নয়নদ্বয়ে উৎসাহ, আনন্দ ও উদ্দীপনার যে এক জ্বলন্ত জ্যোতিপুঞ্জ বিকীর্ণ হইতে থাকিত, না দেখিয়া আজ কাহারও সাধ্য নাই যে, সে শোভা আংশিকরূপেও অনুমান কি কল্পনা করিতে পারে।

আরও দেখুন :

Leave a Comment