দ্বিজেন্দ্রলালের সংগীতে স্বদেশচেতনা

আজকের আমাদের আলোচনার বিষয় দ্বিজেন্দ্রলালের সংগীতে স্বদেশচেতনা

দ্বিজেন্দ্রলালের সংগীতে স্বদেশচেতনা

 

দ্বিজেন্দ্রলালের সংগীতে স্বদেশচেতনা

দ্বিজেন্দ্রলালের সংগীতে স্বদেশচেতনা

হিন্দু-মুসলমান সাম্প্রদায়িক চেতনা যেভাবে স্বদেশচেতনার উদ্ভব ও বিকাশের বীজ বপন করেছিল তেমনি এর প্রধানতম ভিত্তিস্তর নির্মিত হয় কবির মনে বঙ্গভঙ্গকে কেন্দ্র করে। রাজনীতি থেকে শুরু করে জাতীয়তাবাদী এ আন্দোলন ছড়িয়ে পরে সাহিত্য ও সংস্কৃতির নানা ক্ষেত্রে। তবে ভারতীয় রাজনীতিতে যে বিষয়টি বার বার বাধা হয়ে দাঁড়ায় তা হলো অবিচ্ছিন্ন ধারায় কর্মবিযুক্ততা।

জাতীয়তাবাদী আন্দোলনেও দেখা যায় হিন্দুত্ববাদ ও মুসলিমবাদের আত্মপ্রকাশের দুটি ধারা। যদিও বহুপূর্ব থেকেই এর ধারাবাহিকতা চলমান ছিলো। মুসলিম সমাজ অনেক পিছিয়ে ছিলো। রবীন্দ্রনাথের বক্তব্য থেকে পাওয়া যায়, হিন্দু ছেলেমেয়েরা ইংরেজদের স্কুলে যাওয়া শুরু করে এবং শিক্ষিত হয়ে বহুবিধ সামাজিক সুযোগ-সুবিধাগুলো আদায়ে সচেষ্ট হয়।

কিন্তু মুসলমানদের পক্ষে সেটি সম্ভবপর হয়ে ওঠেনি। সেদিক থেকে মুসলমানদের অবস্থা ছিলো বড়ই করুণ। কারণ তারা শিক্ষা-দীক্ষা, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সকল সম্মান রক্ষা ক্ষেত্রেই ছিলেন পিছিয়ে। মূলত উনিশ শতকে ওই সময়টাতে মুসলমানদের পশ্চাৎপদ জাতি হিসেবে চিহ্নিত করা হতো। যার উল্লেখ পাওয়া যায় সিভিলিয়ান উইলিয়াম হান্টারের দি ইন্ডিয়ান মুসলমানস গ্রন্থটিতে (১৮৭১)। এ বিষয়ে বিস্তৃত আলোচনায় আমরা যাবো না।

তবে এ বিষয়ে অধ্যাপক সুশোভন সরকারের বক্তব্য এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন, “দেশপ্রেমিক লেখকরা শুধু হিন্দু কাঠামোবিশিষ্ট প্রাচীন ভারতীয় সংস্কৃতিকেই মহিমান্বিত করে। ভুলতেন না, সেই সঙ্গে স্বাধীনতার দৃষ্টান্ত হিসেবে তুলে ধরতেন রাজপুত, মারাঠা, শিখদের সংগ্রামের কথা। প্রতিটি সংগ্রামেই প্রতিপক্ষ এক ও অভিন্ন মুসলিমরা। এর ফলে জাতীয় চেতনায় আরো তীব্র হয়ে উঠেছিল হিন্দুপ্রবণতা, তার ফল খুব সুখকর হয়নি, (বাংলার রেনেসাঁস)।

জাতীয় ঘোষণা এভাবেই দুটি ভিন্ন ধারায় প্রবাহিত হতে থাকে। যার ফলশ্রুতিতে প্রতিষ্ঠিত হয় কংগ্রেস, হিন্দু মহাসভা ও মুসলিম লীগের মতো সংগঠন। আগেই বলেছি হিন্দু শ্রেণি শিক্ষা-দীক্ষায় এগিয়েছিলো বলে রাজনারায়ণ বসু, নবগোপাল মিত্র ও ঠাকুর পরিবারের নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল সামাজিক সম্মিলন পরিষদ। ভারতীয় মেলার নামের পরিবর্তে নামকরণ করা হয়েছিল ‘হিন্দুমেলা’ (১৮৬৭)।

‘রবীন্দ্রনাথের গানে স্বদেশচেতনা’ পর্বে এ বিষয়ে বিস্তৃত আলোচনা আছে বিধায় এখানে তা নিষ্প্রয়োজন। তবে এটুকু বলতেই হবে যে, এই বৈষম্যকে নির্মূল করবার প্রয়াসেই রবীন্দ্রনাথ বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনকালে রাখী বন্ধন প্রবর্তন করেন। যেখানে বঙ্গভঙ্গের থেকে হিন্দু-মুসলিম, ধনী- গরিবের মধ্যকার ব্যবধানকে আগে ঘোচাতে হবে মর্মে পথে নেমেছিলেন রবীন্দ্রনাথসহ অনেকে এবং একান্ত সমর্থক ছিলেন দ্বিজেন্দ্রলাল রায়।

সরাসরি স্বদেশ আন্দোলনের একজন হিসেবে নিজেকে প্রকাশ না করলেও নিজের রচিত নাটক, কবিতা-গানে এর স্পষ্ট উদাহরণ পাওয়া যায়। ১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলন নতুন করে আবার মনে দেশাত্মচেতনার উন্মেষ ঘটায়। ১৬ অক্টোবর ১৯০৫-এ বঙ্গভঙ্গের সিদ্ধান্ত কার্যকরি হয়। তবে উল্লেখযোগ্য যে, এর বিরোধ আন্দোলনে প্রাধান্য হিন্দু সম্প্রদায়ের হলেও জাতিগত আবেগে অনেক মুসলিম নেতাও বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনে যুক্ত হন।

তবে নবাব সলিমুল্লাহ, নওয়াব আলী চৌধুরী প্রমুখ বঙ্গভঙ্গের পক্ষে সমর্থন আদায়ের জন্য আন্দোলন শুরু করেন। এই সকল বিরোধ, আন্দোলনে সকলেই দেশাত্মবোধের উত্তেজনায় ভাসছিলেন। তখনই দ্বিজেন্দ্রলালের প্রতাপ সিংহ ঐতিহাসিক নাটকটি জনমনে স্বজাতি-স্বদেশের প্রতি অনুরাগ তৈরিতে সহায়তা করে। আর্যগাথার প্রথমপর্বের প্রথম সালটিও তিনি রচনা করেন স্বদেশ অনুরাগে সিক্ত হয়ে।

বঙ্গভঙ্গ বিরোধ আন্দোলন এবং এর পরবর্তীকালে দেশ-জাতীয় স্বদেশি আন্দোলনের নানা প্রেক্ষাপটে রচিত হয় কবিতা ও গান। তাঁর দেশপ্রেমের কবিতা ও গান বাঙালি চিত্তে দেশপ্রেমের এক অনন্য চিত্র ফুটিয়ে তোলে। যা সমসাময়িক অনেক কবির পক্ষেই সম্ভবপর হয়ে ওঠেনি। কলকাতার রঙ্গমঞ্চ তখন উত্তাল হয়ে ওঠে তাঁর ঐতিহাসিক ও জাতীয়তাবাদী নাটকের আবেগে।

১৯০৩ সাল থেকে ১৯১৩ সাল পর্যন্ত তাঁর পত্নীবিয়োগের পরবর্তী সময়ের ১০ বছর কবিহৃদয় ভারাক্রান্ত ও বিষাদে ম্রিয়মাণ ছিলো। সেই সময়টাতে কবি প্রেমের গানের তুলনায় স্বদেশি গানের প্রতি ঝুঁকে পড়েন। সময়ের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে স্বদেশি গান করবার এক উন্মাদনা দেখা যায় তাঁর মধ্যে। সে সময় কবি কর্মসূত্রে গয়াতে ছিলেন। জগদীশ চন্দ্র বসু গয়াতে বেড়াতে গেলে কবি দ্বিজেন্দ্রলাল তাঁকে মেবার পাহাড় গানটি গেয়ে শুনিয়েছিলেন।

গানটি শুনে জগদীশচন্দ্র বসু বলেছিলেন, “আপনার এ গানে আমরা কবিত্ব উপভোগ করিতে পারি, কিন্তু যদি আমি মোবারের লোক হতেম তাহলে আমার প্রাণ দিয়ে আগুন ছুটত। তাই আপনাকে অনুরোধ করি সম্মান রক্ষা আপনি এমন একটি গান লিখুন যাতে বাঙ্গালার বিষয় ও ঘটনা বাঙ্গালীর বিষয় ও ঘটনা থাকে। বিজ্ঞানাচার্য জগদীশচন্দ্র বসু দ্বিজেন্দ্রলালের সেই দিনের গানের প্রশংসা এবং মুগ্ধ হওয়ার কথা পরবর্তীকালেও তাঁর লেখনিতে উল্লেখ করেছিলেন,

“কয়েক বৎসর পূর্বে একবার গয়ায় বেড়াইতে গিয়াছিলাম। সেখানে দ্বিজেন্দ্রলাল আমাকে তাঁর কয়েকটি গান শুনাইয়াছিলেন। সেদিনের কথা কখনও ভুলিব না। সম্মান রক্ষা নিপুণ শিল্পীর হস্তে আমাদের মাতৃভাষার কী যে অসীম ক্ষমতা সেদিন তাহা বুঝিতে পারিয়াছিলাম।… ধরণী এখন দুর্বলের ভার বহনে প্রপীড়িতা।… বর্তমান যুগে বীর্য অপেক্ষা ভারতের উচ্চ ধর্ম নাই।

কে মরণ-সিন্ধু মন্থন করিয়া অমরত্ব লাভ করিবে? ধর্মযুদ্ধের এই আহ্বান দ্বিজেন্দ্রলাল বজ্রধ্বনিতে ঘোষণা করিতেছেন। দ্বিজেন্দ্রলাল মারা যাবার কয়েক বছর পরে জগদীশচন্দ্র বসু দ্বিজেন্দ্রপুত্র দিলীপ রায়কে তাঁর বাবার লেখা অসাধারণ স্বদেশ ভঙ্গির গানটি গাইতে বলেন। যে গান বাঙালির হৃদয়ে চির অমরতার দাবি হয়ে জ্বল জ্বল করছে :

“বঙ্গ আমার জননী আমার।

ধাত্রী আমার! আমার দেশ,

কেন গো মা তার শুষ্ক নয়ন,

কেন গো মা তোর রুক্ষ কেশ!

স্বদেশপ্রেমে উজ্জীবিত প্রায় আঠারোটি গান রয়েছে তাঁর দেশপর্বের গানের তালিকায়। এ ছাড়াও তাঁর হাসির গান, প্রবন্ধ, নাটক ও কবিতায় স্বদেশের প্রতি প্রতিফলন ও চেতনার উন্মেষ দেখতে পাওয়া যায়। নির্ভীক এই কবি জীবিকার জন্য বিদেশি রাজতন্ত্রের আমলা হয়েও স্বদেশের জন্য আন্দোলনে গেছেন ভিন্নতর পন্থায়।

 

দ্বিজেন্দ্রলালের সংগীতে স্বদেশচেতনা

 

এমন কিছু স্বদেশি গানও তিনি রচনা করেছিলেন যা পরে নিজেকে পুড়িয়ে ফেলতে হয় সহৃদ বন্ধুত্বের অনুরোধে। নতুবা শুধু বদলি বা চাকুরিচ্যুতিই নয়, শেষ জীবন হয়তো তাকে কাটাতে হতো আন্দামান দ্বীপে।

‘বঙ্গ আমার/জননী আমার’, গানটি কবির অসামান্য সৃষ্টি যা স্বদেশচেতনার একটি চিরস্থায়ী গীতিতে। পরিণত হয়েছে। এ গানটির রচনা প্রসঙ্গে তাঁর জীবনীকার দেবকুমার রায় চৌধুরী অত্যন্ত সুন্দর একটি গল্পের উল্লেখ করেন-

“একদিন বোধহয় অষ্টমী পূজার দিন দুপুর বেলায় আহারান্তে বসিয়া আছি, কবিবর হঠাৎ বলিয়া উঠিলেন, ‘দেখ, আমার মাথার মধ্যে কয়েকটি লাইন ভারি জ্বালাতন করছে। তুমি একটু বসো সম্মান রক্ষা ভাই আমি সেগুলি গেঁথে নিয়ে আসি। একটু পরে তিনি এসে আমাকে একটা ধাক্কা দিয়া কহিলেন, উঃ কী চমৎকার গানই বেঁধেছি শোনো’ এই বলিয়া গাহিয়া উঠিলেন:

‘বঙ্গ আমার জননী আমার, ধাত্রী আমার আমার দেশ… হাততালি দিতে দিতে ঘরময় নাচিয়া নাচিয়া আবার গাইতে লাগিলেন

কীসের দুঃখ, কীসের দৈন্য, কীসের লজ্জা, কীসের ক্লেশ।

সপ্তকোটি মিলিত কণ্ঠে ডাকে যখন ‘আমার দেশ’।

পরদিবস প্রাতে জেলা জজ সুকবি বরদাচরণ মিত্র মহাশয় সহসা আসিয়া দ্বিজেন্দ্রলালের অতিথি হইলেন। সেদিনও সন্ধ্যায় দ্বিজেন্দ্রলাল আমাদের অনুরোধে সে গানটি গাহিয়া শুনাইলেন। গান শেষ হইয়া গেলে… সহসা শ্রীলোকেন্দ্রনাথ পালিত কবির করদ্বয় পীড়ন করিতে করিতে কহিলেন, Oh how wonderful-how magnificent! Let me confess, my dear Dwiju, it’s undoubtedly the very very very best and noblest national song I’ve ever heard or read in my life.”

লেখক নূপুর ছন্দা ঘোষের লেখনিতে এ তথ্য মেলে যে, এই গানের শেষ চরণ কবিকে পরিবর্তন করতে হয়েছিল। যেখানে বর্তমানের মানুষ আমরা নহি তো মেষ স্থলেছিলো হৃদয় রক্ত করিয়া মোষ-যা ছিলো অত্যন্ত উত্তেজনা সৃষ্টিকারী বাক্য। চারদিকে তখন চলছিল রাজদ্রোহের অপরাধে ধরপাকড়। বোমা বিপ্লবীদের এ বাক্যের মাধ্যমে আরো উত্তেজিত করবার অভিপ্রায়ে চাকুরিচ্যুতি তো বটেই জেল- হাজতও হতে পারে।

ভাই বন্ধু দেবকুমার বাবু, লোকেন পালিত, বরদা বাবু প্রমুখজন দ্বিজেন্দ্রলাল রায়কে লাইনটি পরিবর্তনের অনুরোধ করেন। চরম অনিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও নিতান্ত বাধ্য হয়ে কবি পরে নিম্নরূপ লাইনটি পরিবর্তন করেন।

“ভারত আমার ভারত আমার

যেখানে মানব মেলিল নেত্র

মহিমার তুমি জন্মভূমি মা,

এশিয়ার তুমি তীর্থক্ষেত্র

এই গানটিতে কবি ভারত মাতার স্তুতি বন্দনা করেছেন। কর্ম-জ্ঞান-ধর্ম-ধ্যান সকলই এই মায়ের দান। রবীন্দ্রনাথের মতো করে দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের গানেও দেশকে মাতৃরূপে বিবেচনা করার এক অভূতপূর্ব প্রয়াস দেখতে পাওয়া যায়। এই গানটি পরাধীন ভারতবাসীর কাছে দেশমাতার মুক্তি-কামিতার বেদমন্ত্রস্বরূপ।

সাধারণ মানুষকে যেভাবে এই সকল গান দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করেছিল, তা অনেক সভায় বক্তৃতার মাধ্যমেও সম্ভবপর নয়। মায়ের সম্মান রক্ষায় মানুষকে প্রতিবাদ করবার অনুপ্রেরণা দেয় তাঁর রচিত স্বদেশপ্রেমের গানে।

কবি দ্বিজেন্দ্রলাল দেশকে নতুন করে গড়বার প্রয়াসে দেশের নবযৌবনের নতুন আদর্শকে স্বাগত জানিয়েছেন। নতুনের আদর্শ হবে নির্ভীকযাত্রার আদর্শ ভয়শূন্য। বহির্মুখী নতুন প্রজন্মকে ঘরের দিকে, দেশের মাটিতে বেঁধে রাখতে চেয়েছেন তিনি নতুন আদর্শের অনুপ্রেরণার গানে। যেমন-

“সুখের স্রোতে ভাসিয়ে দেব

সুনীল আকাশ শ্যামল ভুবন

আমরা আজি বীরের প্রাণে।

ছেয়ে দেব গানে গানে।

কবি আমাদের আকাশ ভুবন গানের সুরে মাতোয়ারা করতে চেয়েছেন। এদেশের মাটি, জল, বাতাস, নদী, মেঠোপথ, বাউলের সুর সকল আয়োজনকে তিনি মনের অন্তপুরে ঠাঁই দিয়েছেন। ছবি এঁকেছেন পরম আদরে। তাই তো এদেশের মাটিতে জন্ম নিয়ে কবি ধন্য। তাই এদেশের মাটিতেই মরবার বাসনা ব্যক্ত করেছেন কবি।

এদেশের মানুষের মুখের বুলির মতো মিষ্ট সুর আর কোথায় আছে ! তাইতো কবি পরম স্নেহে, ভালোবাসায় এদেশের প্রকৃতির ছবি এঁকেছেন তাঁর গানের কথায়। নিবিড়ভাবে একাত্ম হয়েছেন এদেশের প্রকৃতির সাথে, এদেশের মানুষের সাথে। ব্যক্ত করেছেন এ দেশের মাতৃরূপকে বিচিত্র মহিমায়-

“খাঁটি দেশজ লোকায়ত সুরের ছাঁচে বাণী বসিয়ে রবীন্দ্রনাথ স্বদেশি গান সৃষ্টি করলেন। দ্বিজেন্দ্রলাল তৎসম শব্দবহুল ধ্বনিময় গানে বিলিতি সুরের ওজঃ আর পৌরুষ মিশিয়ে একটা নির্মাণের সম্মান রক্ষাঅভিনবত্ব আনলেন। সঙ্গে বাংলা গানে এই প্রথম সংযোজন হলো সম্মেলক ধরন বা কোরাস। এটাই স্বদেশি গানের উত্তরণ বা ক্রমোর্ব্ব শিল্পিতার চিহ্ন। এই চিহ্ন ফুটে ওঠার কারণ হলো সত্যিকারের আর্টিস্টের সৃজনসামর্থ্য যুক্ত হয়েছিল স্বাদেশিক আবেগের সঙ্গে।

এ জাতীয় স্বদেশি গান সকলের আবেগকে নাড়া দিয়েছে সকলের কাছে গ্রহণীয় হয়েছে। সেইজন্যই বঙ্গভঙ্গের তাৎক্ষণিক আবেদন পেরিয়ে আজো রবীন্দ্রনাথ ও দ্বিজেন্দ্রলালের স্বদেশি গান আমরা গাই।”

রবীন্দ্রসমকালীন যে কয়েকজন শিল্পী ও সাহিত্যিক নিজ মেধা ও পাণ্ডিত্যে বাংলা সাহিত্য ভুবনকে ঐশ্বর্যমণ্ডিত করে গেছেন তাদের মধ্যে ডিএল রায় অন্যতম। গভীরতম বিশ্লেষণে তাঁর ত্রিকালদর্শী স্বদেশচেতনা নির্ভর গানে প্রকাশশৈলীর যে মমত্ববোধ জাগ্রত হয়েছে তা তৎকালীন থেকে সমকালীন প্রাসঙ্গিক।

 

দ্বিজেন্দ্রলালের সংগীতে স্বদেশচেতনা

 

গানের আকার বিশ্লেষণে কবিতার ন্যায় যে বৃহদাকাররূপ দেখা যায় তা তৎকালীন রাজনৈতিক এবং সমাজজীবনের বিচিত্ররূপ সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তোলার নিমিত্তেই দরকার ছিলো। তাছাড়া তাঁর গানে যে কোরাসের আধিক্য লক্ষ্য করা যায় তাতে একক কণ্ঠে নয় বরং সামগ্রিক শৈল্পীক আন্দোলনের মধ্যদিয়ে গানকে স্লোগানে পরিণত করার প্রয়াস দেখা যায়।

আরও দেখুন :

Leave a Comment