নজরুলের স্বদেশভাবনা

আজকের আমাদের আলোচনার বিষয় নজরুলের স্বদেশভাবনা

নজরুলের স্বদেশভাবনা

 

নজরুলের স্বদেশভাবনা

 

নজরুলের স্বদেশভাবনা

কবি নজরুলকে আমরা পাই মূলত বঙ্গভঙ্গোত্তর যুগে। এক ব্যতিক্রমী উজ্জ্বল নক্ষত্রের মতো তিনি জ্বলে উঠেছিলেন সকলকে অবাক করে দিয়ে। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয়, যে মানুষটি ছোটবেলায় মাজারের খাদেম ও মসজিদে ইমামতির কাজ করতেন তিনিই আবার শ্যামা মায়ের জন্য রচনা করেন হিন্দু সম্প্রদায়ের শ্যামাসংগীত।

একদিকে ইসলামী গান, অন্যদিকে শ্যামাসংগীত-এই দুইয়ের মিশেল তাঁকে এক অসামান্য সাম্যবাদী কবিতে পরিণত করেছে। মূলত লেটোর দলে কাজ করতে গিয়ে বহু ধরনের গান রচনার মধ্যদিয়ে তাঁর মধ্যে এই অসামান্য গুণটি ফুটে ওঠে। এ ক্ষেত্রে ড. করুণাময় গোস্বামীর উদ্ধৃতিটি উল্লেখ করা যায় :

“লেটোর দলের জন্য পালা রচনা করতে গিয়ে হিন্দু ও মুসলিম উভয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের পটভূমিতে তিনি কাজ করেছেন। একদিকে যেমন তিনি মুসলিম জীবনধারা থেকে কাহিনী ও গীত রচনার উপাদান সংগ্রহ করেছেন, অপরদিকে তিনি হিন্দু পৌরাণিক উপাখ্যানকেও পালা রচনার বিষয় করে তুলেছেন।

 

নজরুলের স্বদেশভাবনা

 

তাঁর সে সময়কার রচনায় এই দুই ঐতিহ্যস্রোতের সহাবস্থান লক্ষ করা যায়। নজরুলের পরবর্তীকালের বহু রচনায় মুসলিম ও হিন্দু ঐতিহ্যের যে সহাবস্থিত রূপটি প্রকাশ পেয়েছিল, তার সূচনা ঘটে এই পর্বে। লেটোর দল থেকে ফিরে কবি ১৯১১ সালে আবার বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে লেখাপড়া শুরু করেন। কিন্তু অর্থ সংকটের কারণে প্রতিনিয়ত ছেদ পড়তে থাকে তাঁর এই লেখাপড়ায়।

অর্থ রোজগারের জন্য আবারো যোগ দিতে হয় লেটোর দলে। এরপরে গার্ডের খানসামার চাকরি, আসানসোলে বেকারিতে কাজ করা। কিন্তু ভাগ্যবিতাড়িত নজরুল কোনো কাজেই স্থায়ী হতে পারেননি। অত্যন্ত গুণী ও বিনয়ী নজরুলের সাথে সখ্যতা গড়ে ওঠে সাব-ইন্সপেক্টর কাজী রফিজউল্লাহর সাথে। লেখাপড়ার প্রতি বালক নজরুলের অসামান্য আগ্রহ দেখে তিনি তাকে নিজ গ্রাম ময়মনসিংহের বর্তমান ত্রিশাল উপজেলার কাজীর শিমলা গ্রামে নিয়ে যান।

 

নজরুলের স্বদেশভাবনা

 

সেখানকার এক স্কুলে কবিকে সপ্তম শ্রেণিতে ভর্তি করে দেন। দরিরামপুরের এই স্কুল থেকে তিনি বার্ষিক পরীক্ষা দিয়ে নিজ গ্রামে চলে যান। ত্রিশালে তাঁর আর ফেরা হয়নি। ১৯১৫ সালে বর্ধমানেই তিনি রাণীগঞ্জ শিয়ারসোল রাজ হাইস্কুলে অষ্টম শ্রেণিতে ভর্তি হন। এই স্কুলেই তিনি টানা দশম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছিলেন, ১৯১৭ সালে সেনাবাহিনীতে যোগদানের পূর্ব পর্যন্ত।

আরও দেখুন :

Leave a Comment