আজকের আমাদের আলোচনার বিষয় নারদের শিক্ষা
নারদের শিক্ষা
নারদের শিক্ষা
সংস্কৃত সাহিত্য ও সংগীতশাস্ত্রের কোথাও কোথাও নারদ ‘গন্ধর্ব’ নামে পরিচিত। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তাঁকে ‘মুনি’ নামে উল্লেখ করা হয়েছে। “শিক্ষা” গ্রন্থের রচয়িতা হিসেবে নারদের নাম নিয়ে বিভিন্ন বিভ্রান্তির কারণ হচ্ছে ইতিহাসে চারজন নারদের উল্লেখ পাওয়া যায়। তবে “শিক্ষা”র রচয়িতা আদি নারদ হিসেবে পরিচিত। পরবর্তী নারদগণ যথাক্রমে “মকরন্দ”, “পঞ্চসারসংহিতা” এবং “রাগনিরূপণ” গ্রন্থের রচয়িতা।
নারদ সম্পর্কে সংক্ষেপে উল্লেখ করা প্রয়োজন সংগীতের সাথে তাঁর গভীর সম্পৃক্ততা ছিলো। মহাভারতের “আদিপর্বতে ব্যাস বর্ণনা করেছেন নারদ বিপুল জ্ঞানের অধিকারী। সামবেদে তাঁর অসাধারণ দখল রয়েছে এবং তিনি একজন দক্ষ সংগীতজ্ঞ।” এছাড়া বাদ্যযন্ত্রের সাথে নারদের সম্পৃক্ততা পাওয়া যায় তাঁর নিজের ভাষ্যে।
তিনি উল্লেখ করেছেন, “আমি আমার মহতী বীণা সহযোগে গান করে সারা বিশ্বব্যাপী প্রচুর গুণ কীর্তন করে বেড়াই । একাধিক লেখক এবং টীকাকারের রচনায় নারদের মহতী বীণার উল্লেখ পাওয়া যায়, কিন্তু যন্ত্রটির স্বরূপ সম্পর্কে স্পষ্ট কোন চিত্র পাওয়া যায় না।
বৈদিক সামগানের প্রকৃত রূপ ও রীতিনীতি এবং সে প্রসঙ্গে লৌকিক, মার্গ ও দেশী সংগীতের সঙ্গে বৈদিকের সম্পর্ক এবং সে সম্পর্কে খুঁটিনাটি বিবরণ পাওয়া যায় নারদ রচিত শিক্ষা গ্রছে। গ্রন্থটি রচিত হয় খ্রিস্টীয় প্রথম শতাব্দীতে। “শিক্ষা” মূলত ধ্বণিতত্ত্বের জন্য একটি উৎকৃষ্ট গ্রন্থ, সংগীতের স্বর, গ্রাম ও মূর্ছনা সম্পর্কেও এই বইয়ে যথেষ্ট বিবরণ পাওয়া যায়।
সে তুলনায় ‘অবশ্য বাদ্যযন্ত্রের কথা ততটা পাওয়া যায় না, এ বিষয়ে সামান্য আলোকপাত করা হয়েছে। নারদী শিক্ষার পঞ্চম কড়িকা আরম্ভ হয়েছে ‘দারবী’ ও ‘গাত্রবীণা’র প্রসঙ্গ নিয়ে। ‘শিক্ষা’ গ্রন্থে এ দুটি বীণার নাম উল্লেখ করা হয়েছে। প্রাসঙ্গিক বিধায় এক্ষেত্রে গাত্রবীণা এবং দারবী বীণা সম্পর্কিত বিশ্লেষণ প্রদান করা প্রয়োজন। বৈদিক সাহিত্যে বলা হয়েছে, মানুষের শরীরই প্রথম বাদ্যযন্ত্র। এজন্য এর নাম দেওয়া হয়েছে ‘গাত্রবীণা’ (অথবা ‘দৈবী বীণা’)।
সংগীত মকরন্স’-এ উল্লেখ করা হয়েছে ৪ শব্দ পাঁচ ধরণের হয়ে থাকে, এর মধ্যে প্রথম চারটি আসে নখ (অথবা হাতের টোকা), বায়ু, চর্ম এবং লোহা থেকে এবং শেষোক্তটি প্রাকৃতিক অর্থাৎ মানুষের কন্ঠস্বর । নারদী শিক্ষায় উল্লিখিত অপর বীণা হচ্ছে দারবী বীণা অর্থাৎ কাঠের বীণা (অপর নাম মানুষী বাঁণা বা মনুষ্যনির্মিত বীণা)। গাত্রবীণা ব্যতীত অপরাপর সকল বীণা এই গোত্রের অন্ত গত ।
এই অর্থ অনুসরণ করে বলা যায় ইতিহাসে যে সকল ধরণের বীণার নমুনা পাওয়া গেছে সেগুলো সবই এই দলভুক্ত। প্রাথমিক যুগের ‘চিত্রা বীণা’, ‘বিপদ্গীরীণা’ অথবা ‘রুদ্রবীণা’, ‘স্বরস্বতী বীণা’ – অর্থাৎ যে যন্ত্রগুলোর তার হাত দিয়ে বাজাতে হয়, ‘রাবণ হস্ত বীণা’ অর্থাৎ যা ছড় দিয়ে বাজানো হয়, ‘শানাই’ -অর্থাৎ যা মুখ দ্বারা বাজাতে হয় সবই তাত্ত্বিকভাবে বীণার দলভুক্ত।
পরবর্তীকালে আলাদা গোত্র হিসেবে – এদেরকে চিহ্নিত করতে প্রয়োজনে অন্য নাম দেওয়া হয়েছে। যেমন শানাই বা এ ধরণের শুষির বাদ্যযন্ত্রকে বলা হয়েছে ‘মুখ-বীণা’।
আরও দেখুন :