প্রচলিত তত যন্ত্র সরোদ

আজকের আমাদের আলোচনার বিষয় প্রচলিত তত যন্ত্র সরোদ। সেতারের মত সরোদ আবিস্কারের ইতিহাসও কিছুটা অস্পষ্ট। সরোদ যন্ত্রটি একদিনে তৈরি হয় নি। বারংবার পরিশীলনের মাধ্যমে সরোদ বর্তমান আকার এবং রূপ ধারণ করেছে এ বিষয়ে কারো কোন দ্বিধা নাই। তবে এর মূল উৎপত্তি কোথায় তা অনুসন্ধান করা দরকার। রবাব, সুর শৃঙ্গার, চিত্রা বীণা ইত্যাদি যন্ত্র সরোদের পূর্বসূরী হতে পারে, তথা প্রমাণের ভিত্তিতে একথা বলা যায়।

প্রচলিত তত যন্ত্র সরোদ

সরোদ

বিশেষ করে রবাবের সাথে সরোদের সম্পৃক্ততার বিষয়টি সবচেয়ে আলোচিত। তবে কোন সিদ্ধান্তে আসার আগে এই যন্ত্র নিয়ে প্রচলিত ভুল ধারণাগুলো আলোচনা করা দরকার এবং বিবর্তনের ইতিহাস বিশ্লেষণ করা দরকার। অনেকেই সরোদকে প্রাচীন সরোদীয় বীণার সাথে সম্পর্কযুক্ত করার চেষ্টা করেছেন। নামের মিল সম্ভবত এই ধারণাকে প্রতিষ্ঠিত করেছে।

তবে একটা বিষয় লক্ষণীয় সারদীয় বীণা নামক যন্ত্রটির উল্লেখ পাওয়া গেছে শুধু সংস্কৃত নাট্যসাহিত্যে। সংগীত তত্ত্ব বিষয়ক যে সব বই লেখা হয়েছে সংস্কৃত ভাষায় সেগুলোতে সারদীয় বীণার উল্লেখ পাওয়া যায় নি। এর কোন বৈশিষ্ট্য কিংবা বর্ণনা কিছুই কোথাও পাওয়া যায় প্রকৃতপক্ষে ধ্বণিগত সাদৃশ্য ছাড়া সরোদের সাথে এর কোন সম্পর্ক নাই।

 

সরোদ

 

অনেকে রুদ্রবীণার সাথে সরোদের আবির্ভাবকে সম্পর্কযুক্ত করতে চেষ্টা করেছেন। সম্ভবত এখানেও রুদ্র বীণার অন্তর্গত ‘রুদ’ শব্দটি এই ধারণাকে প্রভাবিত করেছে। এর পেছনে আরেকটি বিভ্রান্তিকর কারণ থাকতে পারে, তা হলো অনেকে রুদ্র বীণা এবং রবাবকে অভিন্ন বলে ভাবার চেষ্টা করেছেন। রুদ্রবীণা উপমহাদেশে প্রচলিত একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় এবং সুপরিচিত বীণা যা অনেক ক্ষেত্রে শুধু বীণ নামেই পরিচিত।

বাঁশের তৈরি দণ্ড হচ্ছে এই যন্ত্রের মূল কাঠামো এবং তার নিচে দু’টি লাউ সংযুক্ত থাকে। দৃশ্যত বোঝা যায় এ যন্ত্রটি একটি দণ্ডাকৃতি জিথার। পক্ষান্তরে রবাব একটি লিউট জাতীয় যন্ত্র। রবার যন্ত্রের সাথে রুদ্র বীণার কোন মিলও নাই । কাজেই রবাব থেকে সরোদের উৎপত্তি, এই বিষয়টি প্রতিষ্ঠিত করতে গিয়ে কেউ যদি রুদ্র বীণা থেকে সরোদের উৎপত্তি বলে মত প্রকাশ করেন তবে আকে বাস্তবসম্মত বলা যায় না। কাজেই রুদ্র বীণা থেকে সরোদ উদ্ভাবনের ধারণা বাস্তবসম্মত নয়।

রবারের সাথে সরোদের মিল সবচেয়ে বেশি। রবার থেকে সরোদ উদ্ভাবনের পক্ষে যুক্তিও সবচেয়ে বেশি। তবে এ প্রসঙ্গে প্রথমে আলোচনা করা দরকার রবার বলতে আসলে কোন যন্ত্রটিকে বোঝানো হয়। কারণ রবাব কিন্তু একাধিক আকৃতির ছিলো।

 

সরোদ

 

মধ্যযুগ এবং আধুনিক যুগের শুরুতে মূলধারার হিন্দুস্তানী সংগীতের জগতে অন্তত তিন বা চার ধরণের রবাবের আগমন ঘটেছিলো। সেজন্য সরোদ যন্ত্রের উদ্ভবের বিষয়টি ব্যাখ্যা করা আগে আমাদের অবশ্যই বিভিন্ন ধরণের রবাবের বৈশিষ্ট্যের প্রতি আলোকপাত করা দরকার।

আরও দেখুন :

Leave a Comment