প্রচলিত তত যন্ত্র সেতার

আজকের আমাদের আলোচনার বিষয় প্রচলিত তত যন্ত্র সেতার বর্তমান যুগে আমাদের দেশে উচ্চাঙ্গ সংগীতের জগতে সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং সবচেয়ে আলোচিত বাদ্যযন্ত্র হচ্ছে সেতার। সেতার বাজানোর মূল কৌশলগুলো বীণার অনরূপ। তবে বীণার সাথে এর গঠনগত পার্থক্য রয়েছে। এছাড়া আকার ও আয়তনের দিক থেকে সেতার অনেক সুবিধাজনক এবং সহজে বহনযোগ্য। সেতারের বর্তমান রূপলাভের পেছনে রয়েছে বিবর্তনের এক দীর্ঘ ইতিহাস। সেতারের আবির্ভাব বিষয়ে চারটি অনুমানের কথা উল্লেখ করা যায়।

প্রচলিত তত যন্ত্র সেতার

 

গান্ধার পঞ্চম সেতার

 

প্রথম অনুমান হচ্ছে, প্রাচীন ভারতীয় উপমহাদেশের কোন এক প্রকার বীণা পরিবর্তন এবং পরিবর্ধনের মাধ্যমে বর্তমান সেতারে পরিণত হয়েছে। এই অনুমান যারা সমর্থন করেন তাদের মধ্যে ত্রিতন্ত্রী বীণার সাথে সেতারকে সম্পর্কযুক্ত করার প্রবণতা সবচেয়ে বেশি। দ্বিতীয় অনুমান হচ্ছে, খ্রিস্টীয় নবম এবং দশম শতাব্দীতে প্রাচীন ভারতীয় মন্দিরে খচিত ভাস্কর্যে লম্বা গলার লিউট জাতীয় বীণার চিত্র দেখা যায়।

এ থেকে ধারণা করা যেতে পারে প্রাচীন ভারতীয় উপমহাদেশে সেতার জাতীয় যন্ত্রের প্রচলন ছিলো। এ প্রসঙ্গে নির্দিষ্ট করে কোন বীণার নাম উল্লেখ করা যায় না, তবে ঐ সকল ভাস্কর্যে যে লম্বা গলার লিউটের ছবি পাওয়া গেছে তার সাথে সেতারের সম্পর্ক থাকার বিষয়টি গবেষকদের কাছে বেশ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তৃতীয় অনুমান হচ্ছে, উপমহাদেশের বাইরে থেকে আগত কিছু বাদ্যযন্ত্র সেতার উদ্ভাবনকে প্রভাবিত করেছে।

 

মিরাজ সেতার

 

সেতারের আবিস্কারে মধ্য ও পশ্চিম এশিয়ার প্রভাবের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। প্রাচীন অখণ্ড ভারতীয় উপমহাদেশের বিভিন্ন স্থানে মুসলিম শাসকদের আগমন শুরু হয় খ্রিস্টীয় অষ্টম শতাব্দীর শুরু থেকে খ্রিস্টীয় চতুর্দশ এবং পঞ্চদশ শতাব্দী পর্যন্ত সময়ে।

উত্তর পশ্চিম উপকূলের মাধ্যমে মূলত এসব বহিরাগত শাসসকদের আগমণ ঘটে, সেইসাথে সংগীত, সাহিত্য, সাংস্কৃতিক রীতি নীতি সবকিছুতেই ধীরে ধীরে পারস্য এবং মধ্য এশিয়ার সংস্কৃতির প্রভাব যুক্ত হতে থাকে। এ সময়ে তারের কয়েকটি মনোকর্ড জাতীয় বাদ্যযন্ত্রের আগমন ঘটে এদেশে। এর মধ্যে পারস্যের ‘সেতার’ এবং ‘তম্বুর’ এবং উজবেকিস্তারেন ‘দুতার’ যন্ত্রকে সেতারের পূর্বসূরী মনে করা হয়।

এসব যন্ত্রের চিত্র দেখে সেতারের সাথে কোন কোন অংশে বেশ মিল পাওয়া যায়। যে কারণে এদের মধ্যে একটা সম্পর্ক রয়েছে বলে ধারণা করা যেতে পারে। চতুর্থ অনুমান হচ্ছে, শুধু প্রাচীন উপমহাদেশীয় কোন যন্ত্র নয়, কিংবা শুধু উপমহাদেশের বাইরের কোন যন্ত্রের প্রভাবে নয়, বরং উপমহাদেশীয় বাদ্যযন্ত্র এবং উপমহাদেশের বাইরে থেকে আগত বাদ্যযন্ত্রের মেলবন্ধনে সেতারের সৃষ্টি হয়েছে।

 

সেতার

 

এখানে পারস্য ‘সেতার’ বা ‘তম্বুর জাতীয় যন্ত্র এবং উপমহাদেশীয় ‘বীণা’ জাতীয় যন্ত্রের আদানপ্রদানজনিত বিবর্তনের বিষয়টি বিশেষভাবে প্রণিধানযোগ্য। প্রতিটি অনুমান পৃথকভাবে বিশ্লেষণ করা হলো।

আরও দেখুন :

Leave a Comment