বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনকালে দ্বিজেন্দ্রলাল রায়

আজকের আমাদের আলোচনার বিষয় বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনকালে দ্বিজেন্দ্রলাল রায়

বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনকালে দ্বিজেন্দ্রলাল রায়

 

বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনকালে দ্বিজেন্দ্রলাল রায়

 

বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনকালে দ্বিজেন্দ্রলাল রায়

দ্বিজেন্দ্রলাল রায় বাংলা সংগীত ও সাহিত্যের এক অতুলনীয় নিষ্ঠাবান নাবিক। গুণি এই বাঙালি বাংলার অমূল্য সম্পদ। পরাধীন বাংলার বহুবিধ বাধাপ্রাপ্তির সময়টি অনন্য এই কবির রচনাকাল। তাই পরাধীনতার গ্লানি তাঁকে নিবিষ্ট করেছে স্বদেশপ্রেমে এবং এই দায়িত্ববোধ ও শৃঙ্খল মুক্তির উৎকণ্ঠায় তিনি রচনা করেন বহু নাটক, কবিতা ও গান। কবি জানতেন পরাধীনতার কলঙ্ক থেকে মুক্ত হতে জাতির মানসিক উন্নতির একান্ত প্রয়োজন।

যথার্থ মনুষ্যত্ব গঠিত না হলে জাতি স্বাধীনতার মূল্য বুঝতে পারে না। মাতৃভূমির অপমানে আহত দ্বিজেন্দ্রলাল রায় তাঁর রচনার সর্বক্ষেত্রে তারই প্রতিবাদি বাণী ব্যক্ত করে গেছেন। তিনি বিশ্বাস করতেন প্রকৃত শত্রু বাহ্যিক নয় সে আত্মিক। অশিক্ষা, কুসংস্কার, জাতি-বিদ্বেষ থেকে নিজেদের কলঙ্ক মুক্ত করতে পারলেই প্রকৃত মনুষ্যত্ব অর্জন সম্ভব।

তাই রচনা করেছেন স্বদেশ, জাতির আত্ম জাগানিয়া গান, সে গানের বাণীতে কখনও ব্যক্ত হয়েছে তির্যকপূর্ণ ইঙ্গিত কখনও গভীর প্রেমাবেগ। তাঁর রচিত হাসির গান, প্রহসন ও ব্যঙ্গ নাটকগুলোও মূলত স্বদেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ প্রাণেরই ব্যতিক্রমী প্রকাশ। নিষ্ঠুরতার মধ্যদিয়ে স্বজাত্য প্রেম প্রকাশের ধরনে তিনি বিরল। এই ব্যতিক্রমী পন্থায় তিনি বাঙালির মনে দেশপ্রেম জাগ্রত করতে চেয়েছেন। হুংকারে গর্জে পথে নামবার আহ্বান জানিয়েছেন ।

এক কঠিন সময়ে দ্বিজেন্দ্রলালের সাহিত্য ও সংগীতের বিকাশ ঘটে। সময়টি বঙ্গভঙ্গ আন্দোলন-কাল। এই আন্দোলনকে কেন্দ্র করে যখন সমগ্র দেশে জাতীয়াবোধের বিকাশ শুরু হয় দ্বিজেন্দ্রলাল তখন সাধারণ মানুষের মনে স্বদেশপ্রেম জাগ্রত করবার প্রয়াসে রচনা করতে থাকেন দেশের প্রাচীন ও ঐতিহাসিক সকল বীরপুরুষদের নিয়ে নাটকের মধ্যদিয়ে বঙ্গবীর গাঁথা।

বীরের জয় গাঁথার গল্প মানুষের মনে জাতীয় চেতনার বীজ বপন করতে থাকে। কিন্তু তিনি ছিলেন বাস্তববাদী নাট্যকার। কখনোই তাঁর নাটকে স্থান পায়নি কোনো অলৌকিকতা। এমনকি পৌরাণিক নাটকেও তিনি অলৌকিকতাকে প্রশ্রয় দেননি। তার নাটকে সংগীতের ব্যবহার নাট্যরূপকে আরো প্রাণবন্ত করে তুলতো।

তাঁর স্বদেশি সংগীত বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনকালে যেমন মানুষের মাঝে স্বদেশপ্রেমে প্রাণের সঞ্চার করতো তেমনি একালেও তাঁর গান স্বদেশের সৌন্দর্যের কোমলতায় মনকে ভরিয়ে তোলে। দেশপ্রেমে আত্মবিহ্বল করে।

“দ্বিজেন্দ্রলাল শুধু কবি নন, হাস্য-রস- সমুজ্জ্বল, মধুর গানের রচয়িতা নন, তিনি আমাদের জাতীয়তার পুরোহিত। তিনি বাঙ্গালীর পথ-প্রদর্শক, তিনি ‘স্বদেশী’ তন্ত্রের মহাকবি। তিনি একনিষ্ঠ ভগীরথের মত বাঙ্গালীর অবদান হিমাচলে অধিষ্ঠিত দেশাত্মবোধ মহাদেবের জটাজুট হইতে দেশভক্ত ভাগীরথীর পবিত্র প্রবাহ আনিয়া কোটী কোটী ভারত-সন্তানের জীবনাক্তির সাধন দান করিয়া দিয়াছেন।

এ ঋণ কি জাতি কখন পরিশোধ করিতে পারিবে দ্বিজেন্দ্রলাল, রবীন্দ্রনাথ, অতুলপ্রসাদ এবং রজনীকান্ত সেন-এঁদের গীতিকবিতার রচনাকাল ছিলো দেশপ্রেমের এক উত্তাল সময়। বাংলা সাহিত্য অনুরাগী সকল সাহিত্যিকের রচনায় তখন দেশপ্রেমের কথাটি অনুরণিত হয়েছে। স্বদেশি আন্দোলন বাংলা তথা ভারতের জাতীয় ইতিহাসে এক নতুন যুগের সূচনা করে।

 

বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনকালে দ্বিজেন্দ্রলাল রায়

 

রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, শিল্প-সংস্কৃতির সকল ক্ষেত্রেই এই আলোড়নের হাওয়া লাগে। এই যুগান্তকারী আন্দোলনে সর্বতোভাবে যে সকল দেশপ্রেমী কবি-সাহিত্যিক তাঁদের রচনার মধ্যদিয়ে মানুষের আগমনকে জাগাতে চেয়েছেন দ্বিজেন্দ্রলাল তাদের অন্যতম একজন।

দেশপ্রেমের প্রবল উদ্দীপনায় দ্বিজেন্দ্রলাল তৎসময়ে যে সকল গান রচনা করেছেন তার একটি তালিকা তুলে ধরা হলো। এই গানগুলো যুগে যুগে স্বদেশের যে কোনো সংকটে মাতৃসম দেশ জননীকে কলঙ্ক মুক্ত করবার প্রেমময় উদ্দীপনার বাণী :

১. “বঙ্গ আমার জননী আমার ধাত্রী আমার আমার দেশ

২. ওরে আমার সাধের বীণা

৩. যেদিন সুনীল জলধি হইতে উঠিলে জননী ভারতবর্ষ

৪. ভারত আমার ভারত আমার যেখানে মানব মেলিল নেত্র

৫. একবার গালভরা মা ডাকে

৬. তুমি তো মা সেই তুমি তো মা সেই চির গরীয়সী ধন্যা অয়ি মাा

৭. আনন্দময়ী বসুন্ধরা, চির অভিরামা তরুণী শ্যামা ৮. আজি গো তোমার চরণে জননী আনিয়া অর্ঘ্য করি মা দান

৯. মেবার পাহাড় মেবার পাহাড় যুঝেছিল যেথা প্রতাপ বীর

১০. জাগো জাগো পুরনারী, জিনিয়া সমর আসিছে অমর

১১. ভেঙে গেছে মোর স্বপ্নের ঘোর ছিঁড়ে গেছে মোর বীণার তার

১২. যেথা গিয়েছেন তিনি সমরে আনিতে গৌরবজয় জিনি

১৩. ধনধান্য পুষ্পভরা আমাদের এই বসুন্ধরা

১৪. কিসের শোক করিস ভাই, আবার তোরা মানুষ হ’

১৫. ধাও ধাও সমরক্ষেত্রে, গাহ উচ্চে রণজয় গাথা।

 

Google news
গুগল নিউজে আমাদের ফলো করুন

 

 

স্বদেশ প্রেমাবেদনপূর্ণ এসব গান অনন্য চিত্রকল্পের রূপকার। স্বদেশপ্রেমের উন্মাদনা সাথে রোমান্টিকতায় মিলেমিশে একাকার। অলংকার সমৃদ্ধ ভাষা ও উপমায় দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের এই গানসমূহ বাঙালির অমূল্য সম্পদ।

আরও দেখুন :

Leave a Comment