ঊনিশ শতকের বাংলা গীতিনাট্যের তালিকা

আজকের আমাদের আলোচনার বিষয় ঊনিশ শতকের বাংলা গীতিনাট্যের তালিকা

ঊনিশ শতকের বাংলা গীতিনাট্যের তালিকা

ঊনিশ শতকের বাংলা গীতিনাট্যের তালিকা

ছক : এই গীতিনাট্যের ধারাটির পরিচয় দেবার জন্যে (১৮৬৫ খৃষ্টাব্দ থেকে ‘বাল্মীকি-প্রতিভা’র প্রকাশকাল ১৮৮১ খৃষ্টাব্দ পর্যন্ত) একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা দেওয়া গেল-

 

ঊনিশ শতকের বাংলা গীতিনাট্যের তালিকা

ঊনিশ শতকের বাংলা গীতিনাট্যের তালিকা

 

এই তালিকা থেকে গীতিনাট্যের বিষয়বস্তু সম্বন্ধে খানিকটা ধারণা করা যেতে পারে। পূর্ববর্তী যাত্রার মধ্যে দেখা যায়, রামায়ণ-মহাভারত, অথবা পৌরাণিক কাহিনী অবলম্বনের প্রয়াস। অবশ্য সামাজিক কাহিনীও কোথাও কোথাও চোখে পড়ে। এর সঙ্গে সমসাময়িক কালের নাট্যধারার তুলনামূলক আলোচনায় দেখা যাবে, বিষয়ের বা কাহিনীর দিক থেকে দুয়ের মধ্যে বৈসাদৃশ্য রয়েছে।

নাটকে অবশ্য ঐতিহাসিক কাহিনী ও স্থান পেয়েছে। গীতিনাট্যে তার দৃষ্টান্ত চোখে পড়ে অর্থাৎ আঙ্গিকের দিক থেকে পাশ্চাত্য প্রভাব থাকলেও, উপজীব্য হচ্ছে দেশীয় প্রাচীন কাহিনী- নতুন আধারে পুরানো রস বিতরণ। ঊনিশ শতকের গীতিনাট্যের আঙ্গিকগত যে দুটি রীতির কথা বলা হয়েছে, তার কয়েকটি দৃষ্টান্ত দেওয়া যেতে পারে :

সংলাপ অংশে গদ্যে, মাঝে মাঝে গান :

কৃষ্ণ – প্রিয়ে আমার মনে বড় ভয় হচ্ছে

রুক্মিণী – নাথ তোমার আবার ভয় কি- যাহতে ভয়ের উৎপত্তি, ভয় তার কি করতে পারে বল।

কৃষ্ণ – আমি সে ভয়ের কথা কচি না, এ আর এক রকম

রুক্মিণী – ভয়ের তো কমবেশী শুনেছি, এর যে আবার রকম আছে তা তো জানিনে, সে যাই হোক তোমার এ কি রকম ভয়।

কৃষ্ণ – প্রিয়ে এ বড় বিষম ভয়, এ ভয়ের কথা মনে হলে ভয়েরও ভয় জন্মায় ।

গানের নমুনা:

কেন করো ছলনা সদা

মগন কার ভাবে নাথ বল না ।

রুক্মিণী – কেন হে চতুরী বারবার পাইয়ে ললনা।

(পারিজাত হরণ। ১৮৭৫। নগেন্দ্রনাথ বন্দোপাধ্যায়)

পিলু বারোয়া। ঠুংরী

সীতা – আগে এত ভাবিলে মনে তবে কি দহিত বিরহদহনে।

রাম – আগে তা কি জানি মনে, হারাইব তোমা ধনে

সীতা – তাই বুঝি প্রাণপণে রাখিবে হে যতনে।

রাম – বিধাতা সাধিলে বাদ, প্রমোদে ঘটে প্রমাদ,

সীতা – মিলনের সাধ, বল করি হে কেমনে।

(জনকা বিলাপ। হরিমোহন কর্মকর ১২৭৪)

ইমনকল্যাণ। আড়াঠেকা

কেন হে নগর, রায় বাঁশরিটি ধরে সুমধুর স্বরে

বৃন্দে – ডাকিতেছ শ্রীরাধায়।

কুলের কামিনী, রাধা বিনোদিনী

মরে শুরু গঞ্জনায় ।

ইমনকল্যাণ

ললিতা – ওহে শ্যাম এ তোমার ব্যাভার কেমন, রাধা বলে কেন ডাক যখন তখন?

ঝিঁঝিট – কওয়ালি

কৃষ্ণ – সখি! কি দোষ আমার

রাধা নামে সাধা বাঁশি বাজে অনিবার।

সখি সদা মনে করি বাজাব না নাম ধরি

এমন নিলাজ বাঁশি কোথা আছে আর?

এর সঙ্গে তৎকালীন গীতিনাট্যে ব্যবহৃত কিছু গানের নমুনাও উল্লেখযোগ্য :

ক ) আক্কুটে সব আগেই খেলে,

রোপএট বেড়াই বাদাড় পানে।

দাঁটার জোরে বাগাই বাগা,

বাঁশির শরে বন হরিণে।

তীর কানটায় মারি হাতী

খোঁচায় ভঁইস বরা গাঁথি

(ধরি) সাতনালায় পাখ্ গহন বনে ।

খ ) মদন পীড়নে দেব সইতেছি যাতনা

ঘুচাও অন্তরে সুখ মম সাধনা ।

নানা রঙ্গে অনঙ্গ

দহিছে দেখ অঙ্গ,

করিতেছে আশ ভঙ্গ, সহেনা এ বেদনা। (প্রভাতকমল)

 

ঊনিশ শতকের বাংলা গীতিনাট্যের তালিকা

 

গ ) প্রথম যোগিনী। আমার যেমনি বেণী, তেমনি রবে

চুল ভেজাব না।

দ্বিতীয়। আমি খুব ডুব দেব সই

তোর সলা তো শুনবো না।।

তৃতীয়। আমি জল ছেটাব, ছড়াব

তোদের গায়ে দেব;

প্র-দ্বি। আমরা তবে চলে যাব, জলে নাবো না,

সকলে। আর ভাই সাঁতরে সাঁতরে,

এপারে ওপারে করি আনাগোনা। ( ব্রজলীলা। ১২৮৯। অমৃতলাল বসু)

আরও দেখুন :

Leave a Comment