Site icon Arts and Culture Gurukul [ শিল্প ও সংস্কৃতি গুরুকুল ] GOLN

বাদ্যযন্ত্রের আকৃতিগত পার্থক্য (শ্রেণীবিভাগ)

বাদ্যযন্ত্রের আকৃতিগত পার্থক্য (শ্রেণীবিভাগ)

আজকের আমাদের আলোচনার বিষয় বাদ্যযন্ত্রের আকৃতিগত পার্থক্য (শ্রেণীবিভাগ)

বাদ্যযন্ত্রের আকৃতিগত পার্থক্য (শ্রেণীবিভাগ)

 

 

বাদ্যযন্ত্রের আকৃতিগত পার্থক্য (শ্রেণীবিভাগ)

গঠন ও আকার ভেদে বাদ্যযন্ত্রের রকমভেদ রয়েছে। আর এই রকমভেদের মধ্যেই তাদের সৃষ্টির রহস লুক্কায়িত রয়েছে।
কোন কোন দেশে গঠন উপাদানের উপর ভিত্তি করে বাদ্যযন্ত্রের শ্রেণীবিভাগ করা হয়। যেমন চীনদেশে বাদ্যযন্ত্রের শ্রেণীবিভাগের ভিত্তি হলো বাদ্যযন্ত্র নির্মাণের উপাদান। সে দেশে চার ধরণের উপাদানের উপর ভিত্তি করে বাদ্যযন্ত্রের চারটি শ্রেণীকরণ করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে:

১। ‘কিন’ (ধাতু)

২। ‘চে’ (পাথর)

৩। ‘ভু’ (পাথর) এবং

৪। ‘চু’ (বাঁশ)

বর্তমানে আন্তর্জাতিকভাবে সকল দেশে গৃহীত যে শ্রেণীবিণ্যাস সেটি আবার অন্য রকম। এখানেও বাদ্যযন্ত্রসমূহকে চারভাগে ভাগ করা হয়েছে। যেমন,

১। ‘অটোফোন্‌স’ (পরবর্তী নাম ইডিওফোন্‌স ) – অর্থাৎ যা একবার তৈরি করার পর আর সুর বাঁধার দরকার হয় না। যেমন, নানা ধরণের ঘন্টা রড ইত্যাদি। বেল,

২। ‘মেমব্রানোফোন্‌স’ (এটি ‘ডাম্‌স’ গোত্র) – অর্থাৎ যে সকল যন্ত্র পিটিয়ে বা তালি দিয়ে বাজাতে হয়।

৩। কর্ডোফোন্‌স – অর্থাৎ তারের যন্ত্র। তারের সাহায্যে নানা ধরণের সুর উৎপন্ন করা হয়।

৪। ‘এয়ারোফোন্‌স’ – অর্থাৎ যে সকল যন্ত্র ফুঁ দিয়ে বাজাতে হয়।

এই শ্রেণীবিভাগ করেছেন উনিশ শতকের পাশ্চাত্য পণ্ডিত যাইয়ো। অথচ বর্তমানে সমগ্র বিশ্বে প্রচলিত শ্রেণীবিভাগটি আমাদের দেশে করা হয়েছিলো প্রায় দুই হাজার বছর আগে। প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায় ভরতের নাট্যশাস্ত্রে। নাট্যশাস্ত্রের ২৮ পরিচ্ছেদে ‘লক্ষণান্বিতম্ আতোদ্য’ (বা পুত সংগীতযন্ত্র) সম্বন্ধে বলতে গিয়ে ভরত বাদ্যযন্ত্রকে চার ভাগে ভাগ করেছেন। যেমন, ১। তত যন্ত্র (তার যন্ত্র), ২। আনদ্ধ বা অনবদ্ধ যন্ত্র, ৩। ঘন যন্ত্র এবং ৪। শুষির যন্ত্র

তত যন্ত্র (তার যন্ত্র) :

যে সকল বাদ্যযন্ত্র বাজাতে তত বা তারের দরকার হয় সেগুলোকে তত যন্ত্র বলে । তত যন্ত্র দু’প্রকারের অংগুলিত্র তত যন্ত্র এবং ধনুস্তত বা ধনুযন্ত্র। যে সকল যন্ত্র মিজরাব ও জওয়া দিয়ে বাজাতে হয়। সেগুলোকে অংগুলিত্রা তত যন্ত্র বলে। যে সকল যন্ত্র ছড় দিয়ে বাজানো হয় সেগুলোকে ধনুস্তত বা ধনুযজ্ঞ বলে। সেতার, সরোদ, সুরবাহার ইত্যাদি প্রথম প্রকার ততযন্ত্র। এস্রাজ, বেহালা, দিলরুবা ইদ্যাদি দ্বিতীয় প্রকার ততযন্ত্র ।

আনদ্ধ যন্ত্র :

যে সকল যন্ত্র চামড়ার আচ্ছাদন বা ছাউনি দিয়ে তৈরি সেগুলোকে আনদ্ধ যন্ত্র বলা হয়। এই যন্ত্রের ছাউনির উপর হাত দিয়ে অথবা কাঠি দিয়ে শব্দ উৎপন্ন করা হয়। যেমন, তবলা বাঁয়া, মৃদঙ্গ, ঢাক, ঢোল, পাখোয়াজ, মাদল ইত্যাদি।

শুষির যন্ত্র

যে সকল যন্ত্র ফুঁ দিয়ে বাজাতে হয় সেগুলোকে শুষির যন্ত্র বলা হয়। যেমন, বাঁশি, সানাই, শাঁখ ইত্যাদি। এগুলো অবশ্যই ফাঁপা ধরণের যার মধ্য দিয়ে বায়ু প্রবাহিত হয়। ফুৎকার এবং আঙুলের সাহায্যে বায়স্তম্ভ নিয়ন্ত্রণ করে বিভিন্ন সুর উৎপন্ন করা হয়।
লক্ষ্য করলে দেখ যাবে প্রাচীনকালে প্রদত্ত ভরতের শ্রেণীবিভাগ অত্যন্ত বিজ্ঞানভিত্তিক যা আধুনিক শ্রেণীবিভাগের সাথে সম্পূর্ণ সামঞ্জস্যপূর্ণ। ভরতের শ্রেণীবিভাগ এবং মাইয়ো প্রদত্ত শ্রেণীবিভাগের সামঞ্জস্য নিম্নরূপে দেখানো যায় –

ঘন – যজ্ঞ ইডিওফোন্‌স

আনদ্ধ যন্ত্র – মেমব্রানোফোন্‌স

শুষির যন্ত্র – এয়ারোফোনস

তত যন্ত্র – কর্ডোফোনস

আধুনিক আলোচনায় আটোফোন এবং মেমব্রানোফোনকে অনেক সময় একত্রিত করে একে বলা হয় ‘পারকাশন্‌স’ এবং সেই সাথে নতুন আরেকটি শ্রেণী অন্তর্ভুক্ত করা হয়, সেটি হচ্ছে ইলেকট্রনিক বাদ্যযন্ত্র।” সেইক্ষেত্রে শ্রেণী হলো মোট চারটিই। আর যদি পূর্বোক্ত চারটি শ্রেণী বজায় রেখে তার সাথে ইলেকট্রনিক বাদ্যযন্ত্র যোগ করা হয় তাহলে শ্রেণী হবে মোট পাঁচটি।

এই শ্রেণীবিভাগ সর্বসম্মতভাবে গৃহীত এবং প্রচলিত হলেও কয়েকটি বাদ্যযন্ত্র রয়েছে যেগুলোকে উল্লিখিত কোন শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত তরা যায় না। এই শ্রেণীর মধ্যে রয়েছে ‘তরঙ্গ’ গোত্রভুক্ত বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র, যেমন, জল তরঙ্গ, কাষ্ঠ তরঙ্গ, নল তরঙ্গ, তবলা তরঙ্গ, মৃদঙ্গ তরঙ্গ ইত্যাদি। ড. লাল মণি মিশ্রর মতে এই সকল বাদ্যযন্ত্রকে “তরঙ্গ যন্ত্র’ নাম দিয়ে পৃথক একটি শ্রেণীভুক্ত করা দরকার।

 

 

আধুনিক যুগে বিভিন্ন তারের যন্ত্রে আওয়াজ জোরালো করার জন্য বিদ্যুতের সাহায্য নেওয়া হয়। এসব যন্ত্রে শব্দ প্রকোষ্ঠের দরকার হয় না। বৈদ্যুতিক এমপ্লিফায়ার এর সাহায্যে আওয়াজ বর্ধিত করা হয়। যেমন ইলেকট্রিক গিটার। এছাড়া বৈদ্যুতিক কি-বোর্ড জাতীয় যে সকল বাদ্যযন্ত্র রয়েছে সেগুলোর আওয়াজ বর্ধিতকরণের ক্ষেত্রেও একই ধরণের ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

কিন্তু বৈদ্যুতিক সুবিধার সাহায্য ব্যতীত প্রচলিত এবং ঐতিহ্যবাহী অনেক বাদ্যযন্ত্র আধুনিক যুগেও ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। যেমন, সেতার, সরোদ, বেহালা ইত্যাদি। এসব যন্ত্র থেকে যে আওয়াজ উৎপন্ন হয় বৈদ্যুতিক সিনথেসাইজারের সাহায্যে তার বিকল্প উপস্থাপন করা সম্ভব নয়। কারণ শুধু নির্দিষ্ট আওয়াজ এই সকল যন্ত্রের বৈশিষ্ট্য নয়।

এর বাদন পদ্ধতিতে যে সকল বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যেমন, মীড়, গমক, রেশ হ্রস্ব অথবা দীর্ঘায়িত করা ইত্যাদি কৌশল, এসব বিষয় মানুষের হাতের স্পর্শ ব্যতীত আনয়ন করা সম্ভব নয়। এই ধরণের সকল যন্ত্র দলগতভাবে একোয়াস্টিক (Acoustic) যন্ত্র নামে পরিচিত। সেই অর্থে বর্তমানে প্রচলিত সকল বাদ্যযন্ত্র একোয়াস্টিক এবং ইলেকট্রিক এ দু’টি দলভুক্ত।

বাদ্যযন্ত্রের নির্মাণ প্রসঙ্গে একটি বিষয় লক্ষণীয়, তা হলো, বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র বিভিন্ন আকার আকৃতির হয়ে থাকে এবং এদের অঙ্গগুলো বিভিন্ন রকমের হয়ে থাকে। তাই এগুলোর বিভিন্ন অংশগুলো স্বতন্ত্রভাবে আলোচনা করা দরকার। বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্রের অঙ্গগুলো মোটামুটি নিম্নরূপ হয়ে থাকে : –

তুম্বা, খোল

কোন কোন যন্ত্রের খোলস ( যেমন, সরোদ, এস্রাজ্ঞ, কয়েক প্রকার বীণা ইত্যাদি) আস্ত কাঠ কুঁদে তৈরি হয়। এতে নানা রকমের বিশেষ কাঠ ব্যবহৃত হয়। এগুলো কেটে প্রয়োজনীয় আকারে আনা হয়। সেতার ও বীণার তুলনায় সরোদ, এস্রাজ এই যন্ত্রগুলো অপেক্ষাকৃত ছোট – কোলে রেখে বাজানো হয়, খোলের গোড়ার দিকটা নৌকার মত হয়।

সেতারে খোল জাতীয় অংশ শুকনো লাউ দিয়ে তৈরি হয়। একে তুম্বা বলে। সুদৃশ্য সুডৌল লাউয়ের খোল বীণা, তানপুরা, সেতার, সুরবাহার ইত্যাদি যন্ত্রে প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যবহার করা হয়। কোন কোন যন্ত্রে দু’টো তুম্বা ব্যবহৃত হয়। উপরের দিকের তুম্বা আকারে ছোট হয় এবং স্বতন্ত্রভাবে লাগানোর ব্যবস্থা থাকে। অর্থাৎ ক্রুর সাহায্যে লাগানো যায়, প্রয়োজনবোধে খুলে রাখা যায়।

যে সব বীণা শোয়ানো অবস্থায় বাজানো হয় সেগুলোর মাথার তুম্বা আকারে বড় থাকে। সুরবাহার যন্ত্রে তুম্বা তৈরি করার জন্য লাউ চেষ্টা বা চেটাল আকারে কাটা হয়। তুম্বা প্রস্তুতের জন্য শক্ত খোলের বিশেষ ধরণের লাউ গাছ রেখেই যতটা প্রয়োজন পরিপক্ক ও আকারে বড় করা হয়।

এরপর ধুমায়িত আগুনের উপরে ঝুলিয়ে রেখে ফলটা শুকাতে দেওয়া হয়। কয়েক বছর ধরে রেখে দেওয়া হয় যাতে সেটা উপযুক্ত হতে পারে। তারপর আকৃতি অনুযায়ী কাটা হয় এবং ভিতরকার শাঁস বের করে নেওয়া হয়।

তবলী, চামড়ার ছাউনি

তানপুরা, সেতার বা সুরবাহার তৈরি করবার জন্য নির্দিষ্ট মাপে কাটা লাউয়ের কাটা অংশটি পাতলা একটি কাঠের তক্তা দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়। এই পাতলা কাঠের অংশটির নাম তবলী। অর্থাৎ তৰলী হলো তুষার উপরকার আচ্ছাদনী। তবলী প্রয়োজন অনুসারে কোনটা সমান্তরাল পাতের মত, শেষাংশ ঈষৎ বাঁকানো, কোন কোনটা অনেকটা কিছুটা গোলচে ধরণের, যেমন, তানপুরার তবলী।

তবলীর বদলে অনেক যন্ত্রে কাঠের তুম্বার উপরে চামড়ার ছাউনি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। যেমন, সরোদ। এস্রাজের ছোট কাঠের তুম্বাটির ছাউনি চামড়া দিয়ে করা হয়। কাঠের খোদাই করা সারেঙ্গী এবং দোতরার খোলের অংশেও থাকে চামড়ার ছাউনি।

দণ্ড এবং পটরী

তারযন্ত্রে খোল বা তুম্বা থেকে উপরের দিকে লম্বা গলার মত যে অংশ বের হয় তাকে দণ্ড বলে। সরোদ যন্ত্রে এই অংশ কাঠ খুদে তৈরি করা হয়। এটি নিচের কাঠের অংশের সাথে সংযুক্ত থাকে। এটি কোণ আকৃতির হয়ে থাকে। সেতার, এস্রাজ এই ধরণের যন্ত্রে দণ্ডটির প্রস্থ নিচ থেকে উপরে সমান, অর্থাৎ সমান্তরাল দু’টি রেখার মত। যন্ত্রের প্রয়োজন অনুসারে এই অংশ মাপমতো তৈরি করা হয়। এটি আলাদা তৈরি করে জুড়ে দেওয়া হয়।

দণ্ডের উপরিভাগে সাধারণত অঙ্গুলি চালনার ব্যবস্থা করতে হয়। সেজন্য এই অংশটি চেপ্টা পাতের আকারে তৈরি করতে হয়। প্রকৃতপক্ষে দণ্ড অংশটি ফাঁপা। এর পেছনের অংশ কিছুটা গোলচে ধরণের এবং সামনের অংশ বাজানোর সুবিধার্থে চেপ্টা কাঠের পাতে তৈরি। সেতার, সুরবাহার, এস্রাজ ইত্যাদি যন্ত্রে এর উপরে পর্দা বাঁধা হয় এবং পর্দার উপর দিয়েই তারগুলো মাথা থেকে গোড়া পর্যন্ত জুড়ে রাখা হয়।

এই পর্দার উপরে বাঁ হাতের তার আঙুল দিয়ে টিপে ধরে বাজাতে হয়। অংগুলি চালনার এই অংশটিকে বাংলায় পটরী এবং ইংরেজিতে ফিংগারবোর্ড বলে। সরোদে ফিংগারবোর্ডে কোন পর্দা থাকে না এবং ফিংগারবোর্ডটি তৈরি হয় স্টিলের পাতলা পাত দিয়ে।

 

গুগল নিউজে আমাদের ফলো করুন

 

 

মাধা

দণ্ডের উপরের ভাগ অর্থাৎ ফিংগারবোর্ডের শেষ অংশকে মাথা বলে। এতে নানা ধরণের সজ্জামূলক এবং কারিগরী কাজ দেখা যায়। সেতারে এই অংশটি সমান হলেও সুরবাহারে তা ময়ূরের মাথার মত। সরোদে এই অংশে নানা অলঙ্কার দেওয়া হয়। প্রধাণ তারগুলো এই অংশে নানান রকম খুঁটি বা বয়লার সাহায্যে জড়ানো থাকে। এ কারণে ইংরেজিতে একে Peg box (পেগ বক্স) বলে।

বয়লা থেকে তারগুলো ছোট একটা বেড়ার মত শক্ত পাতের উপর দিয়ে দণ্ডের উপর দিয়ে যন্ত্রের নিচের অংশের দিকে চলে যায়। যাওয়ার আগে আরেকটি দাঁড় করানো ছিদ্রযুক্ত পাতের ছিদ্রের ভিতর দিয়ে যায়। হাড়ের তৈরি বেড়ার মত অংশটিকে মেরু বলা হয়। ছিদ্রযুক্ত পাতটিকে বলা হয় তারগহন। যন্ত্রের প্রধাণ তারগুলো এর ছিদ্রের ভিতর দিয়ে চালিত হয়।

জওয়ারি, সওয়ারি বা ব্রিজ

তারগুলো যন্ত্রের নিচের অংশে এসে তবলীর উপরে অবস্থিত একটি খুব ছোট আকারের চৌকীর উপর দিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। একে বলে জওয়ারি বা সওয়ারি। এটি দেখতে ছোট চৌকী অথবা ছোট সেতুর মত। ইংরেজিতে একে ব্রিজ বলা হয়। এটি সাধারণত হাড়ের তৈরি হয়ে থাকে। আধুনিক যুগে প্লাস্টিক জাতীয় সিনথেটিক পদার্থের তৈরি ব্রিজের প্রচলন শুরু হয়েছে।

সেতার, তানপুরা এ ধরণের যন্ত্রে এই ব্রিজটি এমন একটি বিশেষ স্থান যেখানে প্রয়োজন অনুসারে এর উপরের পাতটিকে ঘসে এমনভাবে সমান করা হয় যেন আঘাত পেলে তারটিতে কম্পন এবং ঝঙ্কার সৃষ্টি হতে পারে। অনেক যন্ত্রে যেখানে প্রয়োজন নাই সেখানে তার বসানো হয় শুধু পাতের উপর দিয়ে, যেমন, সরোদ। আঘাতেই বাজে, জওয়ারির দরকার হয় না।

মানকা

মানুকা সাধারণত রঙীন কাচ দিয়ে অথবা প্লাস্টিক দিয়ে তৈরি করা হয়। তবে হরিণের শিং এবং হাতীর দাঁত দিয়েও তৈরি করা যায়। মানকা বড় একুট পুঁতির মত, এর এপিঠ ওপিঠে একটা সরু ছিদ্র থাকে। এই ছিদ্রের ভিতর দিয়ে তার ঢুকিয়ে মাকাটিকে সওয়ারীর নিচে তবলীর উপর আটকিয়ে রাখা হয় ।

সাধারণত সেতার ও সুরবাহার যন্ত্রের প্রধান তার বা নায়কী তারে মানুকা ব্যবহার করা হয়। তবে একাধিক তারেও ব্যবহার করা চলে। বয়লা মুচড়ে তারে সুর বাঁধবার পরও সূক্ষভাবে সুর মেলাবার জন্য (Fine tuning) মানুকা আবশ্যক ।

 

 

মিজরাব ও জওয়া

মিজরাব আরবী শব্দ। আরবী ভাষায় আঘাত করাকে ‘জাব’ বলে। ‘জাব’ শব্দ থেকে মিজরাব শব্দটির উৎপত্তি। এটি দিয়ে তারে আঘাত করে শব্দ উৎপন্ন করা হয়। ইস্পাতের শক্ত তার দিয়ে মিজরাব তৈরি হয়। ডান হাতের তর্জনীতে এটি পরে এর সাহায্যে সেতার, সুরবাহার, একতারা প্রভৃতি বাজাতে হয়। সরোদ বাজাতে হয় জওয়া দিয়ে।

এটিও আরবী শব্দ। এটি ত্রিভুজাকার একটি প্লেট্রাম। নারকেলের মালা ত্রিভুজাকারে কেটে জাওয়া তৈরি করা হয়। যে অংশটি দুই আঙুলে চেপে ধরতে হয় সে অংশটিতে মোম ও পাতলা কাপড়ের প্রলেপ দেওয়া হয় পিছলানো প্রতিরোধ করার জন্য।

ছড়

সরল বা ধনুকাকৃতির পাতলা দণ্ডের সঙ্গে সমান্তরাল করে ঘোড়র লেজের চুল বেঁধে ছড় তৈরি করা হয়। ডান হাতে ছড় ধরে এর ঘোড়ার লেজের চুলের অংশ দিয়ে বেহালা, এস্রাজ, সারেঙ্গী প্রভৃতি যন্ত্রের তারে ঘর্ষন করে যন্ত্রগুলো বাজাতে হয়।

আরও দেখুন :

Exit mobile version