আজকের আমাদের আলোচনার বিষয় বাল্মিকী প্রতিষ্ঠার পটভূমি
বাল্মিকী প্রতিষ্ঠার পটভূমি
বাল্মিকী প্রতিষ্ঠার পটভূমি
দেশে প্রত্যাগমনের পর ইউরোপীয় সঙ্গীতের সুরে গান রচনার চেষ্টা করাটাই তাঁর পক্ষে স্বাভাবিক। ইতিপূর্বে জ্যেতিরিন্দ্রনাথের ‘মানময়ী’ রচিত ও অভিনীত হয় বিদ্বজ্জনসমাগম উপলক্ষ্যে। এরই কিছু আগে ‘বসন্ত উৎসব’ গীতিনাট্যও অভিনীত হয়েছিলো। এই সময়েই এই দেশী ও বিলাতি সুরের চর্চার মধ্যে বাল্মীনি প্রতিভার জন্ম হল ১৮৮১ খৃষ্টাব্দে। পরের বছর ‘কালমৃগয়া’।
এরও পরে মায়ার খেলা’র। প্রথম গীতিনাট্যের মধ্যে যে কী অপরিসীম আনন্দ রূপায়িত হয়ে উঠেছে তা বোঝা যায় সহজেই- “বাল্মীকিপ্রতিভা’ ও ‘কালমৃগয়া যে উৎসাহে লিখিয়াছিলাম সে উৎসাহে আর কিছু রচনা করি নাই। ”
এই দুটি গ্রন্থে সেই সময়কার একটা সঙ্গীতের উত্তেজনা প্রকাশ পায়। অবশ্য, এই গীতিনাট্যের পিছনে প্রত্যক্ষভাবে অন্য কোন গীতিনাট্যের এভাব আছে কিনা বলা কঠিন। তবে একটা কথা বলা চলে যে, তিনি নিঃসন্দেহে জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ও বিহারীলালের কাছে ঋণী। বিহারীলালের প্রভাব কবি নিজেই স্বীকার করেছেন তাঁর আত্মজীবনীতে। সর্বোপরি, সবগুলি গান রবীন্দ্রনাথেরই সুরারোপ কিনা, তাও সঠিকভাবে বলা তর্কার্ড ত নয়।

এ ক্ষেত্রেও জ্যোতিরিন্দ্রনাথের যে হাত ছিলো, তার প্রমাণ রয়েছে। এখানে শুধু একটা কথা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য, বাংলা গীতিনাট্য যা নীহারিকা রূপে প্রাচীন ও মধ্যযুগে নানাভাবে বিক্ষিপ্ত অবস্থায় ছড়িয়েছিলো, তা অবশেষে একটি প্রান্তভূমিতে আত্মপ্রকাশের সুযোগ দেয়েছে। উনিশ শতকে পাশ্চাত্য অপেরার সঙ্গে পরিচয় ঘটার ফলে পূর্ববর্তী নাট্যগীতের ধারাই অবশেষে নাগরিক পরিবেশে গীতিনাট্যে রূপান্ত রিত হলো।
এর পিছনে নব্য নাটক বা থিয়েটারের প্রভাবও স্বীকার করা হয়েছে। ইউরোপে ‘অপেরার’ ভাগ্যে প্রশংসা ও নিন্দা দুইই জুটেছিল। ইংল্যান্ডে অনেক সঙ্গীতবিদদের অভিমত ছিল যে, অপেরা সঙ্গীতকে কোনোরকম প্রশ্রয় দেওয়া উচিত নয়। অষ্টাদশ শতাব্দীতে
অধিকাংশ অপেরা শিল্পী নাকি অনৈতিক জীবনযাপন করতেন।
সর্বোপরি, অপেরা ছিলো মূলতঃ অভিজাতদের বিলাস ও উপভোগের বস্তু। Becthoven এবং Wagner এর সময় থেকে অবশ্য এ ধারণা বদলাতে থাকে যেদিন থেকে তাঁরা অপেরার ইউরোপীয় সঙ্গীতের একটি উচ্চ আদর্শ ও মান প্রতিষ্ঠা করলেন। অন্যদিকে, অপেরা ইউরোপে এত বেশী জনপ্রিয় যে, ইউরোপীয় সংস্কৃতির একটি বিশিষ্ট নিদর্শন বললে বিন্দুমাত্র অত্যুক্তি হয় না।
আরও দেখুন :