বিশ্বের ১০ টি বিখ্যাত চিত্রকর্ম বের করছে গুগল সার্চ রেজাল্ট থেকে। সম্প্রতি এটা নিয়ে একটি একটি ফিচার প্রকাশ করেছে সিএনএন। প্রতি বছর বিলিয়ন ডলার মূল্যের চিত্রকর্ম আন্তর্জাতিক নিলাম ঘরগুলির মধ্য দিয়ে ক্রয়-বিক্রয় হয়। বিখ্যাত জাদুঘরগুলো হাজার হাজার শিল্পকর্ম তাদের সংগ্রহে রাখে। গুগলে সার্চ করার সময় নিচের পেইন্টিংগুলো সবচেয়ে বেশি ফলাফল পেয়েছে, রিপোর্ট সিএনএন।
বিশ্বের ১০ টি বিখ্যাত চিত্রকর্ম
১. মোনালিসা
মোনালিসা হল ইতালীয় শিল্পী লিওনার্দো দা ভিঞ্চির অর্ধ-দৈর্ঘ্যের প্রতিকৃতি চিত্র। আনুমানিক ১৫০৩ থেকে ১৫১৯ সালের মধ্যে লিওনার্দো দা ভিঞ্চি ‘মোনালিসা’ ছবিটি এঁকেছিলেন। বর্তমানে এটি ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে ল্যুভর জাদুঘরে রয়েছে। ল্যুভর জাদুঘরে হাজারো পেইন্টিং থাকলেও এই পেইন্টিংটিকে ঘিরে দর্শকদের আগ্রহ সবচেয়ে বেশি। সেখানে এতোই ভিড় থাকে যে, ‘মোনালিসা’কে পেছনে রেখে একটি ছবি তুলতে পারা ভাগ্যের ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়।
এই পেইন্টিংটি ইতালীয় রেনেসাঁর একটি প্রত্নতাত্ত্বিক মাস্টারপিস হিসাবে বিবেচিত। এটিকে “সর্বাধিক পরিচিত, সর্বাধিক প্রদর্শিত, সবচেয়ে বেশি লিখিত ভাবে আলোচিত, সর্বাধিক গানে উল্লেখিত, বিশ্বের সবচেয়ে প্যারোডি করা শিল্পকর্ম” হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে। চিত্রকলার অভিনব গুণাবলীর মধ্যে রয়েছে বিষয়ের রহস্যময় অভিব্যক্তি, রচনাটির স্মারকতা, ফর্মগুলির সূক্ষ্ম মডেলিং এবং বায়ুমণ্ডলীয় বিভ্রমবাদ।
২. দ্য লাস্ট সাপার
দ্য লাস্ট সাপার বা অন্তিম ভোজ (ইতালীয় – ইল সেনাকোলো বা লু’লতিমা সেনা) হল ইতালীয় চিত্রশিল্পী লিওনার্দো দা ভিঞ্চির আঁকা বিখ্যাত দেয়াল চিত্রকর্ম (ফ্রেস্কো)। তালিকার দুই নম্বর পেইন্টিংটিও লিওনার্দো দা ভিঞ্চির। মোনালিসার পর এই ছবিটিকেই লিওনার্দোর সেরা কীর্তি হিসেবে মনে করা হয়। ইতালির মিলানে সান্তা মারিয়া ডেল্লে গ্রেজি জাদুঘরে থাকা ‘দ্য লাস্ট সাপার’ পেইন্টিংটি ১৪৯৫ থেকে ১৪৯৮ সালের মধ্যে আঁকা হয়েছে বলে ধারণা করা হয়।
ছবিটিতে মাঝখানে উপবিস্ট যীশুখ্রীষ্টকে তাঁর চারপাশে শিষ্যদের নিয়ে শেষ নৈশভোজরত অবস্থায় দেখা যাচ্ছে। এই নৈশভোজের বর্ণনা রয়েছে সাধু যোহন লিখিত সুসমাচারের ১৩:২১ ছত্রে, যেখানে যীশু বলেন যে, তার বারোজন প্রেরিতদের মধ্য থেকে একজন পরদিনই তাঁর সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করবে। সেই টেবিলের চিত্রায়ন করা হয়েছে ২৮ দশমিক ৯ ফিট প্রশস্ত এবং ১৫ ফিট উচ্চতার এই চিত্রকর্মটিতে।
৩. দ্য স্ট্যারি নাইট
দ্য স্টারি নাইট একটি তেল-অন-ক্যানভাস চিত্রকর্ম। এটি ডাচ পোস্ট-ইম্প্রেশনিস্ট চিত্রশিল্পী ভিনসেন্ট ভ্যান গগ এঁকেছিলেন ১৮৮৯ সালের জুন মাসে। তিনি সেন্ট-রেমিতে তার ঘরের জানালা থেকে দেখা দৃশ্যটি ছবিতে চিত্রিত করেন। বর্তমানে এটি দেখতে হলে যেতে হবে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক সিটির মিউজিয়াম অব মডার্ন আর্টে।
৪. দ্য স্ক্রিম
ব্রিটিশ মিউজিয়ামের একটি ব্লগ অনুযায়ী, ‘দ্য স্ক্রিম’ একটি নয়, দুটি পেইন্টিংয়ের সমন্বয়। ১৮৯৩ সালে এডভার্ট মাঞ্চের আঁকা এই শিল্পকর্মটি ২০২০ সালের মে মাস পর্যন্ত নরওয়ের ওসলোতে মাঞ্চ জাদুঘরে দেখা যাবে। এরপর এটি স্থান পাবে ওসলোর জাতীয় জাদুঘরে।
৫. গের্নিকা
এই তালিকায় থাকা সবচেয়ে সাম্প্রতিক পেইন্টিং হচ্ছে পাবলো পিকাসোর ‘গোয়ের্নিকা’। ১৯৩৭ সালে আঁকা এই শিল্পকর্মটি স্থান পেয়েছে স্পেনের মাদ্রিদে অবস্থিত মুসেও রিনা সোফিয়া জাদুঘরে। স্পেনে গৃহযুদ্ধ চলাকালে গোয়ের্নিকা শহরে জার্মান বোমা হামলার প্রতিচ্ছবি এটি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এটি নিউইয়র্কের মিউজিয়াম অব মডার্ন আর্টে সরিয়ে নেওয়া হয়েছিলো। স্পেনে গণতন্ত্র ফিরে না আসা পর্যন্ত এই চিত্রকর্মটি যেনো ফিরিয়ে না আনা হয় সেই অনুরোধ করেছিলেন পাবলো পিকাসো।
৬. দ্য কিস
গুস্তাভ ক্লিম্ত ১৯০৭ থেকে ১৯০৮ সালের মধ্যে এঁকেছিলেন ‘দ্য কিস’। অস্ট্রিয়ার ভিয়েনাতে আপার বেলভেদ্রে জাদুঘরে রয়েছে এটি। ক্লিম্তের আঁকা সবগুলো চিত্রকর্মই অনেক দামে কেনাবেচা হলেও ‘দ্য কিস’ বিক্রির জন্য নয়।
৭. গার্ল উইথ এ পার্ল ইয়ারিং (একটি মুক্তার কানের দুল সঙ্গে মেয়ে)
নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগের মরিৎশুই জাদুঘরে জোহানেস ভার্মির ‘গার্ল উইথ এ পার্ল ইয়াররিং’ শিল্পকর্মটি রয়েছে। ১৬৬৫ সালে আঁকা এই চিত্রকর্মটিকে প্রায়শই ‘মোনালিসা’র সঙ্গে তুলনা করা হয়। ২০১২ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত মরিৎশুই জাদুঘরের সংস্কারকালে, ‘গার্ল উইথ এ পার্ল ইয়াররিং’ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইতালি এবং জাপানে ঘুরে এসেছে।
৮. দ্য বার্থ অব ভেনাস
সান্দ্রো বোত্তিসেল্লি আনুমানিক ১৪৮৫ সালে এঁকেছিলেন ‘দ্য বার্থ অব ভেনাস’। ইতালির ফ্লোরেন্সে উফিজি জাদুঘরে রয়েছে এটি। এই শিল্পকর্মটি সান্দ্রোর সাহসিকতার একটি পরিচয় বহন করে। কেননা, নগ্নতা প্রকাশ করা সে সময়ে বিরল ছিলো।
৯. লাস মেনিনাস
১৬৫৬ সালে দিয়েগো ভেলাজকুয়েজের আঁকা ‘লাস মেনিনাস’ রয়েছে স্পেনের মাদ্রিদে। প্রাদো জাদুঘরের এই পেইন্টিংয়ে স্প্যানিশ রাজপরিবারের সঙ্গে খোদ দিয়েগো ভেলাজকুয়েজও রয়েছেন!
১০. দ্য ক্রিয়েশন অফ অ্যাডাম (আদমের সৃষ্টি)
ভ্যাটিকানের সিস্টাইন চ্যাপেলে মিকেলেঞ্জেলোর সৃষ্টি ‘ক্রিয়েশন অব অ্যাডাম’ ১৫০৮ থেকে ১৫১২ সালের মধ্যে আঁকা হয়েছে বলে মনে করা হয়। এই শিল্পকর্মটি দেখার জন্যে সারাবছর পর্যটকের ভিড় জমে থাকে ভ্যাটিকানে।
পেইন্টিং সম্পর্কে বিস্তারিত আয়োজন থাকছে আমাদের গুরুকুল অনলাইন লার্নিং নেটওয়ার্ক এর ড্রইং এন্ড পেইন্টিং গুরুকুলে। সেখানের সব আয়োজনে অংশ নিতে ওয়েবসাইট, ফেসবুক পাতা ও ইউটিউব ভিজিট করুন।
আরও দেখুন: