আজকের আমাদের আলোচনার বিষয় বৌঠাকুরানীর হাট
বৌঠাকুরানীর হাট
বৌঠাকুরানীর হাট
বৌঠাকুরানীর হাট-এর নাট্যরূপ প্রায়শ্চিত্ত ১৩১৬ সালে প্রকাশিত হয় এবং পুন:লিখিত হয়ে ১৩৩৬ সালে ‘পরিত্রাণ’ নামে প্রকাশিত হয়। বৌঠাকুরানীর হাট উপন্যাসে অনেকগুলি গান আছে, প্রায়শ্চিত্তেও রবীন্দ্রনাথ সেসব গান ব্যবহার করেছেন।
তাছাড়া ধনঞ্জয় বৈরাগীর চরিত্র সন্নিবেশের মাধ্যমে একটি নতুন সাংগীতিক মাত্রাও যুক্ত হলো এ নাটকে। তখন রবীন্দ্রনাথের জীবনে সঙ্গীত সৃষ্টির এক নতুন পর্যায় চলছে। হাতে একতাল ও কণ্ঠে গান নিয়ে আবির্ভূত হলেন যে ধনঞ্জয় বৈরাগী, তিনি রবীন্দ্রনাথেরই প্রতিরূপ। উপন্যাসের বসন্ত রায়ের গানগুলো নাটকেও রক্ষা পেয়েছে। তবে অনেক ক্ষেত্রেই গানের ভাষার কিছু কিছু পরিবর্তন করা হয়েছে। যেমন
‘বধুঁয়া অসময়ে কেন হে প্রকাশ’ গানটি বিশেষভাবে পরিমার্জিত হয়েছে। তাতে গানটির উৎকর্ষ বৃদ্ধি পেয়েছে।
‘মলিন মুখে ফুটুক হাসি’ ও
‘আজ তোমারে দেখতে এলেম’ গান দুটিও পরিমার্জন করা হয়েছে। ধনঞ্জয়ের গাওয়া গানসমূহ
এ নাটকের বিশেষ সম্পদ।
‘আরো আরো প্রভু আরো আরো’,
“আমাকে যে বাঁধবে ধরে’,
“বাঁচান বাঁচি, মারেন মারি’,
“আমারে পাড়ায় পাড়ায় খেপিয়ে বেড়ায়’,
ওরে আগুন আমার ভাই’,
‘রইল বলে রাখলে কারে’ প্রভৃতি গানের ভেতর দিয়ে ধনঞ্জয়ের হৃদয়াবেগ আমাদের স্পর্শ করে যায়। এ নাটকের সর্বশ্রেষ্ঠ গান
“গ্রাম ছাড়া ঐ রাঙ্গা মাটির পথ’।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা
বীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রথম জীবনে ছিলেন বিহারীলাল চক্রবর্তীর (১৮৩৫-১৮৯৪) অনুসারী কবি। তার কবি কাহিনী, বনফুল ও ভগ্নহৃদয় কাব্য তিনটিতে বিহারীলালের প্রভাব সুস্পষ্ট। সন্ধ্যাসংগীত কাব্যগ্রন্থ থেকে রবীন্দ্রনাথ নিজের বক্তব্য প্রকাশ করতে শুরু করেন। এই পর্বের সন্ধ্যা সঙ্গীত, প্রভাতসংগীত, ছবি ও গান ও কড়ি ও কোমল কাব্যগ্রন্থের মূল বিষয়বস্তু ছিল মানব হৃদয়ের বিষণ্ণতা, আনন্দ, মর্ত্যপ্রীতি ও মানবপ্রেম।
১৮৯০ সালে প্রকাশিত মানসী এবং তার পর প্রকাশিত সোনার তরী (১৮৯৪), চিত্রা (১৮৯৬), চৈতালি (১৮৯৬), কল্পনা (১৯০০) ও ক্ষণিকা (১৯০০) কাব্যগ্রন্থে ফুটে উঠেছে রবীন্দ্রনাথের প্রেম ও সৌন্দর্য সম্পর্কিত রোম্যান্টিক ভাবনা। ১৯০১ সালে ব্রহ্মচর্যাশ্রম প্রতিষ্ঠার পর রবীন্দ্রনাথের কবিতায় আধ্যাত্মিক চিন্তার প্রাধান্য লক্ষিত হয়। এই চিন্তা ধরা পড়েছে নৈবেদ্য (১৯০১), খেয়া (১৯০৬), গীতাঞ্জলি (১৯১০), গীতিমাল্য (১৯১৪) ও গীতালি (১৯১৪) কাব্যগ্রন্থে।
১৯১৫ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সূচনা ঘটলে বলাকা (১৯১৬) কাব্যে রবীন্দ্রনাথের কবিতায় আধ্যাত্মিক চিন্তার পরিবর্তে আবার মর্ত্যজীবন সম্পর্কে আগ্রহ ফুটে ওঠে। পলাতকা (১৯১৮) কাব্যে গল্প-কবিতার আকারে তিনি নারীজীবনের সমসাময়িক সমস্যাগুলি তুলে ধরেন। পূরবী (১৯২৫) ও মহুয়া (১৯২৯) কাব্যগ্রন্থে রবীন্দ্রনাথ আবার প্রেমকে উপজীব্য করেন
এরপর পুনশ্চ (১৯৩২), শেষ সপ্তক (১৯৩৫), পত্রপুট (১৯৩৬) ও শ্যামলী (১৯৩৬) নামে চারটি গদ্যকাব্য প্রকাশিত হয়।জীবনের শেষ দশকে কবিতার আঙ্গিক ও বিষয়বস্তু নিয়ে কয়েকটি নতুন পরীক্ষানিরীক্ষা চালিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ।
এই সময়কার রোগশয্যায় (১৯৪০), আরোগ্য (১৯৪১), জন্মদিনে (১৯৪১) ও শেষ লেখা (১৯৪১, মরণোত্তর প্রকাশিত) কাব্যে মৃত্যু ও মর্ত্যপ্রীতিকে একটি নতুন আঙ্গিকে পরিস্ফুট করেছিলেন তিনি। শেষ কবিতা “তোমার সৃষ্টির পথ” মৃত্যুর আট দিন আগে মৌখিকভাবে রচনা করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ।
রবীন্দ্রনাথের কবিতায় মধ্যযুগীয় বৈষ্ণব পদাবলি, উপনিষদ্, কবীরের দোঁহাবলি, লালনের বাউল গান ও রামপ্রসাদ সেনের শাক্ত পদাবলি সাহিত্যের প্রভাব লক্ষিত হয়। তবে প্রাচীন সাহিত্যের দুরূহতার পরিবর্তে তিনি এক সহজ ও সরস কাব্যরচনার আঙ্গিক গ্রহণ করেছিলেন। আবার ১৯৩০-এর দশকে কিছু পরীক্ষামূলক লেখালেখির মাধ্যমে বাংলা সাহিত্যে আধুনিকতা ও বাস্তবতাবোধের প্রাথমিক আবির্ভাব প্রসঙ্গে নিজ প্রতিক্রিয়াও ব্যক্ত করেছিলেন কবি।
বহির্বিশ্বে তার সর্বাপেক্ষা সুপরিচিত কাব্যগ্রন্থটি হল গীতাঞ্জলি। এ বইটির জন্যই তিনি সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেছিলেন। নোবেল ফাউন্ডেশন তার এই কাব্যগ্রন্থটিকে বর্ণনা করেছিল একটি “গভীরভাবে সংবেদনশীল, উজ্জ্বল ও সুন্দর কাব্যগ্রন্থ” রূপে।
আরও দেখুন :