বাংলা গীতিনাট্য-নৃত্যানাট্য এবং রবীন্দ্র নাটকের গান সূচি

বাংলা গীতিনাট্য-নৃত্যানাট্য এবং রবীন্দ্র নাটকের গান সূচি। রবীন্দ্র-নাটকের সাথে গানের সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড়। ঘোষ বলেছেন, “কখনো কখনো রবীন্দ্রনাথ জীবনের নির্যাস হিসেবেই গানকে বুঝে নিতে চেয়েছেন, আর তখন গান তাঁর নাটকের বিন্যাস মাত্র নয়, নাটকের বিষয়ও বটে।” তবে রবীন্দ্রনাথ তাঁর নাটকের সব গানই কিন্তু সেই বিশেষ নাটকের জন্য লেখেননি। আবার অনেক সময় ভিন্ন উপলক্ষে রচিত গানও নাটকে স্থান পেয়েছে।

বাংলা গীতিনাট্য-নৃত্যানাট্য এবং রবীন্দ্র নাটকের গান এর সূচিপত্র

বাংলা গীতিনাট্য-নৃত্যানাট্য এবং রবীন্দ্র নাটকের গান সূচি

 

প্রথম

দ্বিতীয়

তৃতীয়

চতুর্থ

পঞ্চম

 

বাংলা গীতিনাট্য-নৃত্যানাট্য এবং রবীন্দ্র নাটকের গান এর সূচিপত্র

 

ষষ্ঠ

সপ্তম

অষ্টম

নবম

দশম

 

বাংলা গীতিনাট্য-নৃত্যানাট্য এবং রবীন্দ্র নাটকের গান এর সূচিপত্র

 

একাদশ

 

“বাংলা গীতিনাট্য-নৃত্যনাট্য ও রবীন্দ্রনাটকের গান’ শীর্ষক সামগ্রিক আলোচনায় যে বিষয়টি বিষেশভাবে উপলব্ধিতে আসে তা হল রবীন্দ্রনাথের শিল্প, সাহিত্য ও সঙ্গীত অন্তকরণ কে রিগ্ধ করে। মনকে নিয়ে যায় অসীমের দিকে, মনুষ্যত্বের দিকে। চিনিয়ে দেয় নিজেকে, মানুষকে সমাজকে, দেশকে আর বিশ্বকে। শিল্পগুরু অবনীনন্দ্রনাথ বলেছেন, ‘মানুষকে রবীন্দ্রনাথ যা দিয়ে গেছেন তার মধ্যে শ্রেষ্ঠ তাঁর গান।

মানুষকে বেীন্দ্রনাথের দান এত বিচিত্র ব্যাপক প্রচুর অমূল্য যে, তার মধ্যে কোন দান শ্রেষ্ঠ তা বলা বড় কঠিন। কিন্তু একথা বোধ হয় নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, তাঁর গানের চেয়ে আর কোনো দান বড় নয়।’ রবীন্দ্রনাথ নিজে বলেছেন, ‘এই পার্থিব জীবন ও পৃথিবীর মানুষকে আমি ভালোবেসেছি। এই ভালোবাসা রেখে গেলাম আমার গানের সুরে গেঁথে। মানুষ যদি আমায় মনে রাখে তাবে এই গান দিয়েই রাখবে।

‘ রবীন্দ্রগবেষক ড.সুধাংশুশেখর শাসমল লিখেছেন, রবীন্দ্রসাহিত্য বাকরূপের দিব্যশক্তিতে উদ্দীপিত । রবীন্দ্রসঙ্গীত শব্দের মায়াপুরী। রবীন্দ্রসঙ্গীতে সৃষ্টির ধ্বনির মন্ত্র প্রতিধ্বনিত। কথা ও সুরে সমন্বিত রবীন্দ্রসংগীত কল্পান্তকালবাহী মানব চেতনাকে জাগ্রত করে। সে জাগৃতি শিল্পীজীবনে বয়ে আনে পরিপূর্ণতা বা চরম স্বার্থকতা। পরমসত্যকে প্রকাশ করতে সাহিত্য না পারলেও সঙ্গীতই পারে। তার গানই সর্বশ্রেষ্ঠ ললিতকলা।

রবীন্দ্রনাথ চিত্র ও সঙ্গীত এই দুটো উপাদানের মাধ্যমে মূর্ত ও বিমূর্তকে ছবি ও সুরের আকারে আনার স্বার্থক উপায় বলে মনে করেছিলেন। সঙ্গীতের গুরুত্ব সম্বন্ধে রবীন্দ্রনাথ বহু কথা বলে গিয়েছেন। বলেছেন, মানুষের যে আনন্দ ও আত্মপ্রকাশ মৃত্যুকে অতিক্রম করে, সঙ্গীত তার শ্রেষ্ঠ বাহন। সুর ও ছন্দের সম্মিলিত রূপই সঙ্গীত। স্বর-সমাহারের মনীষীরা সঙ্গীতকে ধ্বনির শিল্প মনে করে বলেছেন “The beautiful in music consists of sounds artistically combined.’

রবীন্দ্রগানে যেমন বিভিন্ন ধারার গান এসে মিশেছে, রবীন্দ্রনৃত্যেও তেমনি বিচ্ছিন্ন নৃত্যের সমাবেশ ঘটেছে বটে কিন্তু কোন নৃত্যধারাতেই বাঁধাধরা নিয়ম মানা হয়নি। তাই শান্তি নিকেতনে রবীন্দ্রনাথ যে নৃত্যধারার প্রচলন করেন তা আধুনিক নৃত্যেরই একটি নতুন দিগন্ত ।

বিভিন্ন ধ্রুপদী নৃত্যধারার কিছু গ্রহণ কিছু বর্জনের মাধ্যমে তা তৈরী হয়েছিল আর নেপথ্যে ছিল শান্তিনিকেতনের আশ্রম জীবনের সহজ সরল নির্মল আনন্দের আবেগ এবং মানুষের প্রকাশ ধর্মিতার কিছু স্বাভাবিক অঙ্গভঙ্গি এবং লীলায়িত নন্দময়তা।

জীবনপ্রান্তে দাঁড়িয়ে কবি তাঁর যে সত্য উপলব্ধি সাধারণ্যে জানিয়ে গিয়েছিলেন, তা নিছক উপলব্ধি মাত্র নয়, তাঁর সমগ্র সৃষ্টিকর্মের অন্তর্নিহিত তাৎপর্য। কবির শিল্পীমানসে এই বিচিত্র জগৎ তার রূপরস সৌন্দর্যময়তা, আনন্দ বেদনা, দুখদৈন্য, রসরহস্য এবং বাস্তবতা নিয়েই বার বার ধরা দিয়েছে। কবি এই গতিশীল ভাগতের বৈচিত্র্য বিচিত্রের দূতরূপে সঞ্চয় করে বিচিত্র রূপকগুলোকে নানা রঙ্গে-রসে সাজিয়ে তাঁর সৃষ্টিশীল তৎপরতাকে রূপায়িত করেছেন।

তাঁর প্রথম গীতিনাট্য ‘বাল্মিকী-প্রতিভা’ থেকে শুরু করে রূপক সাংকেতিক নাট্যের ধারণাবর্তনে নৃত্যনাট্য ‘শ্যামা’ পর্যন্ত পর্যালোচনা করলে এ সত্যই ধরা পড়ে যে, রূপরস ও ছন্দের বৈচিত্র রবীন্দ্রনাট্যে অভিনব বৈশিষ্ট্যে অভিব্যক্ত হয়েছে। রবীন্দ্রনাথের গীতিনাট্য, নৃত্যনাট্য এবং রূপক সাংকেতিক নাট্যসহ সব ধরনের নাটকগুলোর বিশেষ লক্ষণীয় দিক গান।

জীবনের প্রথম লগ্নে রয়েছে গীতিনাট্যের পর্ব, শেষ পর্বে তার নৃত্যনাট্যের। মাঝে রয়েছে তার প্রতিভা বিকাশের বিচিত্র আয়োজন ও অভিজ্ঞতার পর্ব। শিল্প সৃষ্টির বিচারে এ সমাবেশের মধ্যে এমন এক অন্তর্নিহিত সঙ্গতি লক্ষ্য করা যায় যা, রবীন্দ্রপ্রতিভার সামগ্রিক মূল্যায়ণে গভীর তাৎপর্যপূর্ণ সংগঠন। গীতিনাট্যগুলো তার প্রথম প্রয়াস হওয়ায় কবির ছন্দচেতনা অবিভাজ্য রূপ
পায়নি, সেটা পেয়েছে নৃত্যনাট্যে।

যেখানে নৃত্যের তালে তালে সবার অলক্ষ্যে আবির্ভাব ঘটে নটরাজের। উন্মুক্ত হয় মুক্তির রূপ, সৃষ্টি হয় অনির্বচনীয় মায়ালোক। রবীন্দ্রধারা সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথের উক্তি দিয়েই এই লেখার ইতি টানা হচ্ছে। আমি পূর্বদেশের নানা স্থানে বেড়াবার গলে নৃত্যকলা দেখবার সুযোগ পেয়েছি। জাভায় বালীতে, শ্যামে, চীনে, জাপানে আমাদের দেশে কোচিন, মালাবার মণিপুরে ব্যূরোপের ফোকডান্স এবং অন্যান্য নাচের সঙ্গে আমি পরিচিত।

এ সম্বন্ধে আমার অভিজ্ঞতা আছে, বলবার অধিকার আছে। এই কথা আপনাদের বলতে দ্বিধা করবো না যে, আমাদের আশ্রমে নৃত্যকলার ভিতরে সকল ধারা মিলিয়ে, তার পেছনে যে সাধনা, যে শিল্পবোধ রয়েছে এবং সমগ্রের সৌন্দর্যবিকাশ আছে তা যে কোনখানেই দুর্লভ।

আরও দেখুন :

Leave a Comment