আজকের আমাদের আলোচনার বিষয় রবীন্দ্র রচনার বিভিন্ন আঙ্গিকে স্বদেশ
রবীন্দ্র রচনার বিভিন্ন আঙ্গিকে স্বদেশ
রবীন্দ্র রচনার বিভিন্ন আঙ্গিকে স্বদেশ
হিন্দুমেলা থেকে জীবনের শেষবেলা পর্যন্ত নানাভাবে নানাআঙ্গিকে তার বহুমাত্রিক সৃষ্টির ছন্দে তিনি স্বদেশ ভক্তির কথা ব্যক্ত করেছেন। বহু কবিতা, গান, প্রবন্ধ, উপন্যাস ও নাটকে এমনকি গীতিনাট্যেও স্পষ্ট, কখনো অস্পষ্ট ভাবে প্রকাশ পেয়েছে দেশমাতৃকার প্রতি তাঁর অন্তরের গভীর অনুভূতি। সেখানে স্থান পেয়েছে রাজনীতি, ঐক্য, প্রকৃতি থেকে শুরু করে স্বদেশের ধর্ম ও মানুষ। রয়েছে বহুবিধ ভাবনার মিশ্রণ ও স্ববিরোধিতা।
রবীন্দ্রনাথের স্বদেশ ভাবনার মোটামুটি দুটি দিক প্রকাশ্য- যেমন রাজনৈতিক চিন্তা ও অন্যটি সমাজকেন্দ্রিক ভাবনা। সমাজনির্ভর প্রাচীন ও সনাতনী ভারতবর্ষের উন্নয়নে এক পর্যায়ে যুক্ত হয় পল্লী উন্নয়নের নানা আধুনিক উপকরণ। অপরদিকে জাতীয়তাবাদী আন্দোলন, হিন্দু-মুসলিম দ্বন্দ্ব, ধনী-গরিবের বিভেদ ও বিশ্ব সাম্রাজ্যবাদ নিয়ে তাঁর স্বদেশ ভাবনার রাজনৈতিক দিক।
পাশ্চাত্য সভ্যতা সংস্কৃতি রেনেসাঁর জন্য রবীন্দ্রনাথসহ উনিশ শতকের নবজাগরণবাদী রামমোহন, বিদ্যাসাগরসহ ব্রাহ্মসমাজের সদস্যদের কাছে ইংরেজদের শিক্ষা-সংস্কৃতি ও আধুনিক ব্যবস্থার পত্তন গুরুত্ব পায়। যদিও সেই সময় আধুনিকতার অন্তরালে চলতে থাকে ভারতীয়দের প্রতি ইংরেজদের বর্বর অত্যাচার, ঘৃণা, নিপীড়ন, শোষণ ও বঞ্চনা। রাজনৈতিক আন্দোলন ছাড়া যার প্রতিকার কখনো সম্ভবপর ছিলো না।
রামমোহন রায় সতীদাহ প্রথা বন্ধ করার জন্য এবং বিদ্যাসাগর বিধবা বিবাহ প্রবর্তন ও শিক্ষাব্যবস্থা বিস্তারের জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন সমাজ সংস্কারক ভূমিকা হিসেবে। কারণ তাঁরা বিশ্বাস করতেন সমাজ, সংস্কৃত, কুসংস্কারমুক্ত ও ঐক্যবদ্ধ হলে শাসক- শোষকের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী ভূমিকা গ্রহণযোগ্য ও সহজতর হবে।
রবীন্দ্রনাথ সমন্বয়বাদী মানসিকতার অধিকারী ছিলেন বলে এক্ষেত্রেও চেয়েছিলেন শাসকগোষ্ঠীর ভুলগুলো ধরিয়ে দিতে। যে কারণে বহু প্রবন্ধে ইংরেজদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে তাঁর জোরালো বক্তব্য রেখেছেন এবং অতঃপর সমন্বয়ের পন্থা খুঁজতে চেয়েছেন। রবীন্দ্রনাথ সারাজীবন ঐক্যের জয়গান গেয়েছেন তাঁর জীবনের সামগ্রিক রচনায়।
তিনি কল্পনা করতে পারেননি উপনিবেশবাদী শোষকগোষ্ঠী কখনো ভারতবর্ষকে নিজের দেশ ভাবতে পারেনি। নিজস্বার্থ কায়েমের জন্য বহুবিধ প্রচেষ্টায় জর্জরিত করেছে ভারতবর্ষের মানুষের জীবন, রক্ত চোষা হয়ে নিরীহ মানুষকে করে দিয়েছে কাঙাল। রবীন্দ্রনাথের সংগীতে স্বদেশ ভাবনা বা চেতনার বিষয়টি আলোচনার পূর্বে তাঁর সৃষ্টির অন্য আঙ্গিকে এর প্রতিচ্ছায়া বিষয়ে আলোকপাত প্রাসঙ্গিক।
আরও দেখুন :