রাজনৈতিক আন্দোলনে নজরুল

আজকের আমাদের আলোচনার বিষয় রাজনৈতিক আন্দোলনে নজরুল

রাজনৈতিক আন্দোলনে নজরুল

 

রাজনৈতিক আন্দোলনে নজরুল

রাজনৈতিক আন্দোলনে নজরুল

১৯২০ সালে কবি করাচি ব্যারাক থেকে বেরিয়ে কলকাতায় আসেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী আন্দোলনসমূহ নজরুলের কবিমনে বিশেষ প্রভাব ফেলে। কবি নজরুল ইসলাম এমন একটি সময়ে বেড়ে উঠেছেন যখন সর্বত্র মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার দ্বন্দ্ব, পাওয়া-না-পাওয়ার কোন্দল। এ সকলই তাঁর কবিত্বশক্তি বিকাশের হাতিয়ার হয়ে ওঠে। হয়ে ওঠে তাঁর সাহিত্যের মূল উপজীব্য।

সময়ের চাহিদায় তাঁকে জড়িয়ে পড়তে হয় নানা সামাজিক ও রাজনৈতিক আন্দোলনের সাথে। কবির নিম্ন বা মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম বলেই তিনি মানুষের অন্তরের সুধাটি প্রাণ দিয়ে উপলব্ধি করতে পারতেন। মুক্তি সংগ্রামের মধ্যদিয়ে তিনি পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙে বাঙালির ভাগ্যের পরিবর্তনে বিপ্লববাদ আন্দোলনকে কবিচিত্তে স্থান দেন।

সেই সময়ে সূর্য সেন, যতীন দাস, ক্ষুদিরাম বসু, গোপীনাথ সাহা প্রমুখ শহিদদের দেশের জন্যে আত্মত্যাগ ও দুঃসাহসিক কাজে উদ্যোগ কবির মনে নতুন সূর্যোদয়ের আশার সঞ্চার করে। তাঁকে প্রভাবিত করে কমিউনিস্ট আন্দোলনও। এই সকল আন্দোলনের রূপরেখা কবিচিত্তে এক বিদ্রোহের ভাব জাগ্রত করে। পরাধীন ভারতের মানুষের অস্থিরতা, বঞ্চনা কবিমনে প্রতিবাদের আগুন জ্বেলে দেয়।

তাঁর প্রতিবাদের ভাষার পরতে পরতে উচ্চারিত হয় বিদ্রোহের ধ্বনি। 1 নজরুল রাজনীতিকে বিশ্বাস করে নিজের মধ্যে নিজে তা লালন করতেন সুপ্তাকারে এবং তার প্রকাশ করতেন তাঁর লেখনির মধ্যদিয়ে। কবিতা, উপন্যাস, প্রবন্ধ এমনকি সাংবাদিকতার মধ্য দিয়েও তিনি অন্তরের লালিত রাজনীতিবোধকে দেশের স্বার্থে, দেশের মানুষের স্বার্থে প্রকাশ করেছেন।

বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনকাল থেকে বাংলাদেশের রাজনীতির ধারা পরিবর্তিত হতে থাকে। নজরুলের জন্মের কয়েক বছর আগে থেকেই দেশে বিপ্লববাদের সূচনা হয়। আর সাথে বঙ্গভঙ্গ আন্দোলন স্বদেশের যুবকদের মাঝে বৈপ্লবিক চেতনাকে আরো বিকশিত করে। নজরুল তখন শিশু। এই ছোট্ট সময় থেকে বেড়ে ওঠার সংগ্রামে তাঁকে দেখতে হয়েছে বহু আন্দোলনের বহুবিধ বিবর্তন। সেই বিবর্তনে কিছু অংশের উল্লেখ এক্ষেত্রে প্রাসঙ্গিক হবে।

স্বামী বিবেকানন্দের (১৮৬২-১৯০২) দেশাত্মবোধ তাঁর শিষ্যদের মধ্যে প্রতিফলিত হয়। ক্রমে তা বৈপ্লবিক চেতনায় বিকশিত হতে থাকে। স্বামী বিবেকানন্দের স্বাধীনতার মন্ত্রে দীক্ষিত ছিলো ব্রাহ্মসমাজভুক্ত প্রতিটি যুবক। স্বামীজীর স্বাধীনতার স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে এ চেতনার বিকাশে সহায়তা করেছেন, আত্মত্যাগের ব্রতে নিবেদিত ভগিনী নিবেদিতা। ভারতবর্ষকে স্বাধীন করতে এই বিদেশিনী বিপ্লবীদের নানাভাবে সহায়তা করেছেন স্বামীজীর দেখানো পথে।

নারীমুক্তির দ্বার উন্মোচন থেকে ভারতের প্রতিটি মানুষের ভাগ্যে ইংরেজ শোষণমুক্ত স্বাধীনতার সূর্যকে প্রত্যক্ষ অনুধাবন করতে সচেষ্ট ছিলেন তিনি। ১৯০২ সালে স্বামীজীর মৃত্যুর পরেও এই ধারা অব্যাহত ছিলো এবং আমৃত্যু এই সংগ্রাম চালিয়ে গেছেন এই মহিয়সী নারী। প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখ করা যায়- বিপ্লবদের বহুবিধ আন্দোলনের চেষ্টা অব্যাহত থাকে ১৯৩৪ সাল পর্যন্ত।

সে এক আগুনঝরা সময়। বিপ্লবীদের নানা প্রচেষ্টা ব্যর্থ হতে থাকে শক্তিহীন বোমা, গুলি-বন্ধুকের অভাব এবং অদক্ষতার কারণে। ইংরেজ বাহিনীর বার বার হামলায় বহু বিপ্লবীর জেলহাজত হয়, ফাঁসি হয়। তবুও তারা দমে যায়নি। ক্ষুদিরাম বসু, প্রফুল্ল চাকী, অরবিন্দ ঘোষ, বারীন্দ্র ঘোষ প্রমুখের আত্মত্যাগী বিপ্লবী সংগ্রামের কথা আমরা জানি।

অন্যদিকে পুলিন বিহারী দাস স্বদেশি আন্দোলনের নতুন ধারায় বিপ্লবীদের শারীরিক অনুশীলনের মাধ্যমে দক্ষ করতে ‘অনুশীলন সমিতি’ গঠন করেন। নিজে শেখেন লাঠি খেলা। এখানে উল্লেখ্য যে, “১৯০৬ হতে ১৯০৮ সালের মধ্যে ঢাকা সমিতির অধীনে প্রায় পাঁচশত সমিতি স্থাপিত এবং প্রায় ত্রিশ হাজার সভ্য সংঘবদ্ধ হয়।

প্রথমে এ সংগঠনের মূলে ছিলো মুসলমানদের হাত থেকে আত্মরক্ষার ব্যবস্থা; পরে তাদের প্রধান উদ্দেশ্য হয়ে দাঁড়ায় সরকারের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক বিপ্লব পরিচালনা। এভাবেই বিপ্লবী আন্দোলন এবং বহু আত্মত্যাগের মধ্যদিয়ে ১৯১১ সালের ১২ ডিসেম্বর বঙ্গভঙ্গ রদ ঘোষণা করা হয়। ইংরেজ বাহিনী বার বার বিপ্লবীদের কার্যকলাপকে সমূলে উচ্ছেদের চেষ্টা করতে থাকে।

তবে ইংরেজ বাহিনী কল্পনাও করতে পারেনি বাংলার বালক, যুবকদল এমন দুঃসাহসিক কর্মে লিপ্ত হতে পারে। ফলে বিপ্লবীদের উপর চলতে থাকে কঠিন রাজশক্তির প্রয়োগ। আবারো নতুন নতুন পন্থায় চলতে থাকে তাদের দেশমুক্তির শপথ ও দীক্ষা গ্রহণ। ইংরেজ কোষাগার, জমিদার ভাণ্ডার ডাকাতির মধ্যদিয়ে করতে থাকে অগ্রকেনার টাকার যোগান। এমন দুঃসাহসিক উদ্যোগের কথা এ যুগে শিক্ষিত যুবকদলের কাছ থেকে আমরা চিন্তাও করতে পারি না।

অথচ ভারতমাতাকে মুক্তির লক্ষ্যে আত্মজীবনকে তুচ্ছ জ্ঞান করে নির্ভীকচিত্তে তারা অগ্রসর হয়েছিল একই ব্রতে। প্রসঙ্গক্রমে উদ্ধৃতিটি উল্লেখ করা প্রয়োজন, “১৯০৬-১৯০৭ সালের মধ্যে অনুষ্ঠিত ডাকাতিগুলো বিশ্লেষণ করলে তাদের কার্য সহিষ্ণুতা, নিয়মানুবর্তিতা, ক্ষিপ্রকারিতা, নির্ভীকতা, লোভশূন্য মনোবৃত্তি প্রভৃতি সৎ প্রবৃত্তির পরিচয় পাওয়া যায়।

 

রাজনৈতিক আন্দোলনে নজরুল

 

অনন্ত সিংহ, গণেষ ঘোষ ও লোকেন্দ্র এমনকি পরবর্তীকালে সূর্য সেন (১৮৯৪-১৯৩৪) সশস্র বিদ্রোহের মধ্যদিয়ে ১৯৩০ সালে চট্টগ্রামে ইংরেজদের অস্ত্রাগারে হামলা চালিয়ে অস্ত্র সংগ্রহ করে। বাঙালিদের জন্য দুঃসাহসিকতার এক অভূতপূর্ব ঘটনা এটি। চারদিন বিপ্লবীরা চট্টগ্রাম শহর দখল করে রাখে। এই উদাহরণ নজরুল জীবনের অন্তর্নিহিত ভাবনাকে প্রজ্জ্বলিত করতে থাকে।

সেই ভাবনার বিকিরণ ঘটতে থাকে তাঁর বিদ্রোহী আগুনঝরা প্রতিটি শব্দের মধ্য দিয়ে। এখানে বিপ্লবীদের দুঃসাহসিক আচরণের
কথা ব্যক্ত করতে চাই। অরবিন্দ ঘোষের কারাকাহিনী গ্রন্থ থেকে উদ্ধৃতিটি উল্লেখ করা হলো: “কোর্টে ইহাদের আচরণ দেখিয়া বুঝিতে পারিয়াছি বঙ্গে নতুন যুগ আসিয়াছে; সেই নির্ভীক সরল চাহনী, সেই তোজপূর্ণ কথা, সেই ভাবনা শূন্য আনন্দময় হাস্য এই ঘোর বিপদের সময়ে সেই অক্ষুণ্ণ তেজস্বিতা,

মনের প্রসন্নতা, বিমর্ষতা বা ভাবনা বা সন্তাপের অভাব- সেকালের তমঃক্লিষ্ট ভারতবাসীর নহে, নূতন যুগের নূতন জাতির নূতন কর্মস্রোতের লক্ষণ। তাঁহারা ভবিষ্যতের জন্য বা মোকদ্দমার ফলের জন্য লেশমাত্র চিন্তা না করিয়া কারাবাসের দিন আমোদে, হাস্যে, ক্রীড়ায়, পড়াশুনায়, সমালোচনায় কাটাইয়াছিলেন। তাঁহারা জেলের সকলের সঙ্গে ভাব করিয়া লইয়াছিলো।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ইংরেজদের অত্যাচার ও একের পর এক প্রতারণার ঘটনা চরম হতে থাকে। ১৯১৯ সালের জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ড, ১৯২০ সালের খেলাফত অসহযোগ আন্দোলন নজরুলের মনে একটি রাজনৈতিক বিক্ষিপ্ততার চিত্র এঁকে দেয়। তিনি এ থেকে দেশবাসীকে পরিত্রাণের পথ খুঁজতে থাকেন। তারই ফলশ্রুতিতে তিনি একের পর এক পত্রিকার সাথে জড়িত থেকে গরম এবং তেজোদীপ্ত সব লেখা প্রকাশ করেন।

তাঁর সেসব জ্বালাময়ী উচ্চারণের জন্য ঐ পত্রিকাসমূহ ইংরেজ সরকারের রোষানলে পড়ে। তবে নজরুল প্রতিভা বিকাশে এই সকল পত্রিকার বিপুল ভূমিকা রয়েছে। রাজনীতির সাথে নজরুলের সম্পৃক্ততার বিষয়ে বলতে গেলে অবশ্যই উল্লেখ করতে হবে কমিউনিস্ট পার্টি গঠনের একেবারে শুরুর দিকে যে লেবার স্বরাজ পার্টি গঠন করা হয় তাতে নজরুলের নাম ছিলো।

কংগ্রেসের সর্বত্র সাম্যবাদী ভাবধারাকে ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে নজরুল ছাড়াও যে সকল উদ্যোক্তাগণ সম্পৃক্ত ছিলেন তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য বর্ধমানের কুতুবুদ্দিন আহমেদ, নদীয়ার হেমন্তকুমার সরকার, বীরভূমের সামসুদ্দিন হুসয়ন এবং কলকাতা থেকে আবদুল হালিম প্রমুখ।

পরবর্তীকালে বাস্তবিক প্রয়োজনে ‘লেবার স্বরাজ পার্টি’র নাম দুইবার পরিবর্তন করে করা হয় ‘বঙ্গীয় কৃষক শ্রমিক দল’ এবং আরো পরে করা হয় ‘ওয়াকার্স এন্ড পেজান্টস পার্টি। কমিউনিস্ট পার্টি যখন গঠিত হয় কাজী নজরুল ইসলামের নামেই লেবার স্বরাজ পার্টির কর্মসূচিসহ এর আদর্শ ও লক্ষ্য সম্বলিত খসড়াটি প্রকাশ করা হয়। তৎকালীন সময়ের রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে ধারণার জন্য খসড়াটি তুলে ধরা হলো।

“শ্রমিক-প্রজা স্বরাজ পার্টির গঠন প্রণালি :

১. নাম : ‘ভারতীয় জাতীয় মহাসমিতির শ্রমিক-প্রজা স্বরাজ পার্টি এই দলের নাম হইবে।

২. উদ্দেশ্য : নারী-পুরুষ নির্বিশেষে রাজনৈতিক, সামাজিক এবং অর্থনৈতিক সাম্যের উপর প্রতিষ্ঠিত ভারতের পূর্ণ স্বাধীনতাসূচক স্বরাজ লাভই এই দলের উদ্দেশ্য।

৩. উপায় : নিরস্ত্র গণ-আন্দোলনের সমবেত শক্তি প্রয়োগ উপরিউক্ত উদ্দেশ্য সাধনের মূল উপায় হবে।

৪. সভ্যপদ : ভারতীয় জাতীয় মহাসমিতির যে-কোনো সভ্য এই দলের উদ্দেশ্য, গঠন প্রণালী এবং কার্যপদ্ধতি অনুমোদন করেন তিনিই কেন্দ্রীয় কার্যাবলী সমিতির মত হইলে শ্রমিক-প্রজা স্বরাজ পার্টির সভ্য হইতে পারিবেন। শ্রমিক এবং চাষীর স্বার্থ সংরক্ষণ ও প্রসারণের কথা যতদিন স্বরাজ্যদলের কার্যপদ্ধতির অন্তর্ভুক্ত থাকিবে, ততদিন এই দলের সভ্যগণের স্বরাজ্যদলের সভ্য হওয়ায় বাধা নাই।

৫. চাঁদা : এই দলের প্রত্যেক সভ্য বার্ষিক এক টাকা চাঁদা দিবেন। শ্রমিক ও কৃষক হইলে বার্ষিক এক আনা চাঁদা লাগিবে। প্রয়োজন হলে প্রাদেশিক কেন্দ্রীয় সমিতি চাঁদা না লইতে পারেন।

৬. কেন্দ্রীয় পঞ্চায়েত : কেন্দ্রীয় পঞ্চায়েত কমবেশি পনেরজন সভ্য লইয়া গঠিত হইবে। দলের সৃষ্টিকর্তাগণে তাঁহাদের প্রথম সভায় তিন বৎসরের জন্য ইহাদিগকে নির্বাচিত করিবেন। পঞ্চায়েতগণ নিম্নলিখিত বিভাগগুলোর এক বা ততোধিক বিভাগের ভার লইবেন এবং তদ্বিষয়ে চরম ক্ষমতা পাইবেন ১ম-প্রচার, ২য়-অর্থ, ৩য় দল গঠন, ৪র্থ-শ্রমিক, ৫ম চাষী, ৬ষ্ঠ-ব্যবস্থাপক সভ্য।

পঞ্চায়েতের প্রত্যেক সভ্যের এক ভোট থাকিবে। সমান সমান হলে যে ব্যক্তি সভাপতির কাজ করিবেন, তিনি কাস্টিং ভোট দিতে পারিবেন। তিনজন সভ্য থাকিলেই পঞ্চায়েতের কার্য চলিতে পারিবে।

৭. প্রাদেশিক পঞ্চায়েত : কেন্দ্রীয় পঞ্চায়েতের দ্বারা নিযুক্ত পাঁচ হইতে নয়জন সভ্য লইয়া ভারতীয় জাতীয় মহাসমিতি নির্দিষ্ট প্রত্যেক প্রদেশে প্রাদেশিক পঞ্চায়েত গঠিত হইবে।

৮. প্রাদেশিক পরিষৎ : প্রাদেশিক পঞ্চায়েতের দ্বারা প্রথম অবস্থায় এক বৎসরের জন্য এক বা একাধিক প্রতিনিধি লইয়া প্রাদেশিক পরিষৎ গঠিত হইবে।

এই সকল কিছু সত্ত্বেও নজরুল ইসলাম সরাসরি রাজনীতির সাথে নিজেকে জড়াননি বরং প্রতিটি অধিবেশনের জন্য গান লিখেছেন, প্রবন্ধ লিখেছেন। তাঁর কবি প্রতিভাতে তিনি রাজনীতিকে কাব্য ও সংগীতের মিশ্রণে একটি নতুন ধারা প্রবর্তন করেছিলেন।

নদীয়া জেলার কৃষ্ণনগরে অনুষ্ঠিত ‘বঙ্গীয় কৃষক শ্রমিক দলে’র দ্বিতীয় অধিবেশনে তিনি উদ্বোধনী সংগীত হিসেবে রচনা করেন ‘ধীবরদের গান’ এবং নিজেই তা পরিবেশন করেন। এ প্রসঙ্গে ‘কাজী নজরুল ইসলাম : স্মৃতিকথা’ গ্রন্থে মুজফফর আহমদের উদ্ধৃতি তুলে ধরা হলো :

“১৯২৯ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে কাজী নজরুলের সঙ্গে কুষ্টিয়ায় তাঁর শেষ দেখা। কুষ্টিয়া এক কৃষক সম্মেলনে কাজী নজরুল ইসলাম সপরিবারে গিয়েছিলেন। সে সম্মিলনীতে বঙ্গীয় কৃষক লীগ নামে কৃষকদের স্বতন্ত্র একটা সংগঠন গড়া হয়েছিল। এই সংগঠনকে আজকের কৃষক সমিতির সূচনা বলা যেতে পারে। কমিউনিস্ট ইন্টারন্যাশনালের পরামর্শ অনুসারে এক শ্রেণীভিত্তিক সংগঠন গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে এই কৃষক লীগ গঠিত হয়েছিল।

 

রাজনৈতিক আন্দোলনে নজরুল

 

এই সম্মেলনে মুজফ্ফর আহমদ, কাজী নজরুল, আব্দুল হালিম, হেমন্ত সরকার প্রমুখ যোগদান করেছিলেন। ১৯২৯ সনের ২০ মার্চ মুজফ্ফর আহমদ মিরাট ষড়যন্ত্র মামলায় গ্রেফতার হয়ে দীর্ঘদিন বাংলার বাইরে ছিলেন। মিরাট জেল থেকে তিনি গোপনে নজরুলকে চিঠি লিখেছিলেন কিন্তু চিঠিটি ধরা পড়ায় মুজফ্ফর আহমদকে বিপদে পড়তে হয়েছিলো।

আরও দেখুন :

Leave a Comment