লন্ডন, ২৩ মার্চ ২০২৫ (বিএসএস/এএফপি) – বিশ্বখ্যাত ফরাসি লেখক ভিক্টর হুগো তাঁর সাহিত্যকর্মের জন্য সুপরিচিত, বিশেষ করে দ্য হাঞ্চব্যাক অব নটর-ডেম এবং লে মিজারেবলস এর জন্য। তবে তাঁর শিল্পকলার আরেকটি কম পরিচিত দিক—অঙ্কন—এবার লন্ডনের এক ব্যতিক্রমী প্রদর্শনীর মাধ্যমে উঠে আসছে আলোচনায়।
অ্যাস্টনিশিং থিংস: দ্য ড্রয়িংস অব ভিক্টর হুগো শীর্ষক এই প্রদর্শনী শুক্রবার রয়্যাল একাডেমি অফ আর্টসে উদ্বোধন করা হয়েছে, যা তাঁর মৃত্যুবার্ষিকীর ১৪০ বছর পূর্তিতে তাঁর অঙ্কনের প্রতি অনুরাগকে অনুসন্ধান করছে। ১৯শ শতকের ফ্রান্সে সাহিত্যিক ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে হুগো ছিলেন এক বিশাল ব্যক্তিত্ব, তবে তাঁর ব্যক্তিগত আশ্রয় ছিল অঙ্কনের জগতে।
সাহিত্যিক প্রতিভার অন্তরালে শিল্পী সত্তা
রয়্যাল একাডেমি অফ আর্টসের মতে, হুগোর কালির চিত্রকর্ম—স্বপ্নময় দুর্গ, ভয়ঙ্কর চরিত্র ও গম্ভীর সমুদ্রতট চিত্রায়িত করা—তাঁর লেখনীর মতোই কবিতার আবেগ বহন করে। তাঁর অঙ্কন রোমান্টিক ও প্রতীকবাদী কবিদের অনুপ্রাণিত করেছিল এবং বহু শিল্পীর, এমনকি সাররিয়ালিস্টদেরও অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে। ভিনসেন্ট ভ্যান গগ একবার হুগোর চিত্রকর্মকে “অবিশ্বাস্য জিনিস” বলে প্রশংসা করেছিলেন।
বহু বছর ধরে হুগো তাঁর অঙ্কন শুধুমাত্র ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের দেখাতেন, তবে তিনি সেগুলোর সংরক্ষণের ব্যবস্থা করেছিলেন ফ্রান্সের জাতীয় গ্রন্থাগারে দান করে। বর্তমান প্রদর্শনীতে প্রায় ৭০টি দুর্লভ চিত্র প্রদর্শিত হচ্ছে, যা শেষবার যুক্তরাজ্যে ৫০ বছরেরও বেশি সময় আগে প্রদর্শিত হয়েছিল।
প্রদর্শনীর প্রধান আকর্ষণ
এই সংগ্রহটি হুগোর শিল্পী হিসেবে বিবর্তনের একটি চিত্র তুলে ধরে, তাঁর প্রাথমিক ব্যঙ্গচিত্র ও ভ্রমণচিত্র থেকে শুরু করে শক্তিশালী ল্যান্ডস্কেপ এবং বিমূর্ত পরীক্ষার দিকে প্রবাহিত হয়েছে। অনেক চিত্রকর্ম ১৮৫০ থেকে ১৮৭০ সালের মধ্যে তৈরি, যখন তিনি নেপোলিয়ন III-এর ১৮৫১ সালের অভ্যুত্থানের পরে নির্বাসিত হয়ে গার্নসি দ্বীপে ছিলেন।
এই নির্বাসনকালেই হুগো তাঁর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যকর্ম সম্পন্ন করেন, যার মধ্যে লে শাতিমঁ (দ্য ক্যাস্টিগেশনস) এবং লে মিজারেবলস অন্তর্ভুক্ত। একই সময়ে, তাঁর শিল্পকলার দক্ষতাও প্রস্ফুটিত হয়, যা তাঁর সবচেয়ে আবেগপূর্ণ চিত্রগুলোর জন্ম দেয়।
সময়কাল | শিল্পকলার দিক | উল্লেখযোগ্য প্রদর্শনী চিত্রকর্ম |
---|---|---|
প্রাথমিক বছর | ব্যঙ্গচিত্র ও ভ্রমণচিত্র | শিরোনামহীন ব্যঙ্গচিত্র (প্রায় ১৮৩০-এর দশক) |
গার্নসি নির্বাসন (১৮৫০-১৮৭০) | নাটকীয় ল্যান্ডস্কেপ ও রাজনৈতিক প্রতীকবাদ | এক্কে লেক্স (আইনের সাক্ষাৎ) – এক ফাঁসির দৃশ্যের চিত্রায়ন |
পরবর্তী বছর | বিমূর্ত পরীক্ষাধর্মী কাজ | মাশরুম – এক রহস্যময়, মানবসদৃশ ছত্রাক |
রাজনৈতিক প্রতীক ও রহস্যময় প্রতিচিত্র
যদিও হুগোর সাহিত্য বাস্তববাদে গভীরভাবে প্রোথিত এবং সামাজিক বৈষম্য ও মৃত্যুদণ্ডের মতো বিষয় নিয়ে আলোচনা করে, তাঁর অঙ্কন বাস্তব ও রহস্যময়তার মধ্যে দোদুল্যমান। এক্কে লেক্স চিত্রটি তাঁর মৃত্যুদণ্ড বিরোধিতার প্রতিচ্ছবি। অন্যদিকে, মাশরুম চিত্রকর্মটি সাররিয়ালিজম এবং বিমূর্ততার সন্ধান করে, যা তাঁর কল্পনার গভীরতা প্রকাশ করে।
এক বিরল সুযোগ
এই প্রদর্শনী কেবল হুগোর শিল্পী প্রতিভাকেই আলোকিত করছে না, বরং তাঁর চিত্রকর্ম ও সাহিত্যকর্মের মধ্যে সংযোগও স্থাপন করছে। ২৯ জুন পর্যন্ত চলবে এই প্রদর্শনী, যা শিল্প ও সাহিত্যপ্রেমীদের জন্য হুগোর অজানা এক দিক আবিষ্কার করার বিরল সুযোগ এনে দিচ্ছে।