আমাদের আজকের বিষয়ঃ শরৎ আসে মেঘের ভেলায়। এই পাঠটি সাধারণ শিক্ষার, সপ্তম শ্রেণির বিষয় শিল্প ও সংস্কৃতি। শরৎ হচ্ছে আকাশ ও মাটির মিলন। একদিকে নীলাকাশ, আরেক দিকে কচি ফসলের দুরন্তপনা। একদিকে সোনারোদ, আরেক দিকে সবুজের কচি মুখ। সঙ্গে আকাশ ও মৃত্তিকার যে হৃদয়াবেগ, তা আমাদের হৃদয়কে নাড়া দিয়ে যায়। ভাদ্র মনকে উদ্বেলিত করে। প্রকৃতির সবুজ ছড়িয়ে পড়ে মাঠে-ঘাটে। প্রকৃতি তার ভালোবাসা দিয়ে আপন করে নিতে চায় সব মনকে।
শরৎ আসে মেঘের ভেলায়
সাদা মেঘের ভেলায় ভেসে
শরৎ আসে আমার দেশে।
নীল সাদা জামা গায়ে,
লুকোচুরি খেলা খেলে,
মেঘবাদল আর রৌদ্রছায়ে।
তোমরা কি খেয়াল করেছ এর মাঝে আকাশটা হয়ে উঠেছে উজ্জ্বল নীল রঙের। তার মাঝে ভেসে বেড়াচ্ছে সাদা মেঘের ভেলা। এ সময়ে ভোরের বেলা ঘাসের ডগায় থাকা শিশিরে পা ভিজিয়ে বুঝতে পারি শরৎ কাল এসে গেছে। বাংলা বর্ষপঞ্জিটি দেখে নেয়া যাক। আমরা তো জানি, ভাদ্র ও আশ্বিন এই দুমাস শরৎকাল। ইংরেজি আগস্ট মাসের মাঝামাঝি থেকে অক্টোবর মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত শরৎকাল স্থায়ী হয়।
আমরা এরই মধ্যে জেনেছি যে, নীল একটি মৌলিক রং। এই নীল আকাশের সাদা মেঘগুলো কত রকমের আকৃতি বদলায়! কখনো ঘোড়া কখনো গাছ কখনো হাতি তো আবার কখনো মানুষের আকৃতির মতো। আকাশের এলোমেলো মেঘগুলোতে নিজের পছন্দের কিছু খুঁজে পাও কি না দেখো তো!
আমরা আকাশটাকে ভালোভাবে লক্ষ করলে দেখব, কিছু দিন পরপরই আকাশ তার রূপ পরিবর্তন করছে। আকাশের মাঝে নানান রং খেলা করে। এই রং ছড়িয়ে পড়ে প্রকৃতিতে। এর প্রভাব দেখা যায় রূপসি বাংলার রূপেও। একেক সময়ে বাংলা মায়ের একেক রূপ ধরা পড়ে আমাদের চোখে।
এই অধ্যারে আমরা যেভাবে অভিজ্ঞতা পেতে পারি—
- শরতের প্রকৃতি দেখে, শুনে ও অনুভব করে প্রকৃতির মধ্য থেকেই ছবি আকাঁর উপাদান আলো-ছায়া ও বুনটের ধারণা পেতে পারি।
- শরতের প্রকৃতির সাথে মিলিয়ে আমাদের অনুভূতি আনন্দ, কষ্ট, হাসি, কান্নাসহ নানারকম ভঙ্গি সম্পর্কে জানতে পারি।
শরৎ হলো স্নিগ্ধতা ও কোমলতার প্রতীক। বর্ষার গাঢ় রঙের মেঘ কেটে গিয়ে শরতের আকাশ হয়ে উঠে ঝকঝকে। কখনো মেঘ আবার কখনো বৃষ্টি। শরতের প্রকৃতি জুড়ে চলতে থাকে আলোছায়ার খেলা। শরতের মসৃণ নীল আকাশের গায়ে নরম সাদা মেঘ যেন বুনে চলে রূপকথার গল্প। এবার আমরা আরো কিছু ছবি আঁকার উপাদান সম্পর্কে জানব –
আলোছায়া ও বুনট ছবি আঁকার আরো দুটি উপাদান।
আলোছায়া :
কোনো বস্তুর যে অংশে আলো পড়ে তাকে আলো আর যে অংশে আলো না পড়ার কারণে অন্ধকার থাকে তাকে ছায়া বলে। রঙের ক্ষেত্রে তা হালকা থেকে গাঢ় অর্থেও ব্যবহার করা হয়।
বুনট :
কোনো বস্তুর ওপরের অংশের গুণমান দেখা এবং অনুভব করা যায় তাকে বুনট বলে। বুনটকে প্রধানত চারটি ভাগে ভাগ করা যায়, যেমন—রুক্ষ, মসৃণ, নরম ও কঠিন।
অসময়ে আকাশের বুকে উড়ে বেড়ায় ঝাঁকেঝাঁকে বক। খালে-বিলে দেখা যায় লাল সাদা শাপলা ফুল। নদীর দুই ধারের কাশবনে আসে নতুন প্রান। হালকা বাতাসে দুলে দুলে ওঠে কাশবন, যেন এক অপরূপ নৃত্যভঙ্গিমা। নদীর বুকে ভাসে সারি সারি পালতোলা নৌকা। আর দূর থেকে ভেসে আসে মাঝি- মান্নানের কন্ঠের গান। আমর আগের পাঠে জেনেছিলাম মাত্রা সম্পর্কে। এবার আমরা জানব কেমন করে ঘরের সঙ্গে মাত্রা বন্ধুত্ব হয়।
১ মাত্রা
সা / সা / রে / রে / গা / গা / নি
২ মাত্রা
সা সা /রে রে / মা মা / পা পা / নি নি
৩ মাত্রা
সা সা সা / রে রে রে / গা গা গা / মা মা মা / পা পা পা / ধা ধা ধা / নি নি নি
৪ মাত্রা
সা সা সা সা / রে রে রে রে / গা গা গা গা / মা মা মা মা / পা পা পা পা / ধা ধা ধা ধা / নি নি নি নি
এ অধ্যায়ে আমরা যা করতে পারি-
- শরতের আকাশের রং, মেঘের ভেসে বেড়ানো, কাশবন, কাশফুল, ফুটন্ত শাপলা, বক এইসব সম্পর্কে আমরা বন্ধু খাতায় লিখে রাখর বা এঁকে রাখব।
- মেঘের ভেসে যাওয়া, পাখির উড়ে চলা, গাছের দোলার বাস্তব অভিজ্ঞতা নিয়ে হাতের ভঙ্গিমার মাধ্যমে প্রকাশ করতে পারি।
- বইতে দেয়া কাব্য নাটিকায় অভিনয়ের প্রস্তুতি নেব।
- কাব্য নাটিকায় অভিনয় করব।
শরৎকালের রূপ বৈচিত্র্য দেখে আমরা যে অভিজ্ঞতা অর্জন করলাম, তার সঙ্গে আমরা আমাদের নিজস্ব ভাবনাকে মিলিয়ে একটা নতুন কিছু তৈরির চিন্তা করতে পারি। মনে আছে, আমরা এর আগে কী করেছিলাম? আমরা আঙুলের পাপেট বানিয়েছিলাম। এবার আমরা দুটো হাতকে ব্যবহার করে পুতুল তৈরি করব। হাতের বিভিন্ন ভঙ্গিমার মাধ্যমে কোনো কিছু পরিবেশনের প্রস্তুতি নিলে কেমন হয় বলো তো? হুম, দারুণ মজার একটা কাজ হবে তাই না!
রাফি
স্কুলে যায় রাফি রোজ সকালে
হেসে খেলে সদলবলে।
আজ ঘুম ভেঙেছে তার বেলা করে
দ্যাখে, আগেই সবাই গেছে চলে।
তাই তো চলছে একা একা
সাথে নেই কোনো বন্ধু সখা।
হাঁটছে রাফি আপন মনে, তাকায় সে নদীর পানে।
ছুটছে মাঝি গুন টেনে, ভাটিয়ালি গানের তানে।
রাফি : ও মাঝি ভাই যাচ্ছ কোথায়?
মাঝি : উত্তরের ঐ শ্যামল গাঁয়, নাইওর নিয়ে চললাম হেথায়।
রাফি : যাও, তবে চলছ যেথায়।
হঠাৎ একদল বকপাখি করছে এমন ডাকাডাকি
কাছে গিয়ে বলে রাফি দুই আঙুলে বাজিয়ে তুড়ি
রাফি : করছ কেন এত হুড়োহুড়ি?
বক : ওমা তুমি বলছ এ কী!!
মন দিয়ে শোনো কথাটি,
আমরা নিজেদের মধ্যে কথা বলি, মাছ ধরি আর সাঁতার
কাটি।
রাফি : ফিরে যাবে কখন ঘরে?
বক : বেলা যখন যাবে পড়ে।
খোকা : তুমি এখন যাওগো ফিরে।
রাফি, নদীর ধারে দাঁড়াল আসি
অমনি কাশবন উঠল হাসি।
সেজেছে সে সাদা ফুলে, একটু বাতাসেই উঠছে ঢলে।
কাশবন : দূরে কেন তুমি কাছে এসো,
একটুখানি ছায়ায় বসো।
হবে তুমি আমার বন্দে
মনখানি দুলিয়ে নাও আমার ছন্দে। রাফি, একটুখানি বসল ছায়।
হঠাৎ চোখ যায় আকাশের গায়,
নীল আকাশের এক কোণ জুড়ে
একখানা সাদা মেঘ আসল উড়ে।
রাফি : ও মেঘ, একটু খানি দাঁড়াবে ভাই?
চলছ কোথায়? জানতে চাই।
কথা শুনে দাঁড়াল সে, একটু পেছনে আসল ভেসে।
ফিক করে দিলো হেসে। ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি হয়ে ঝরল শেষে।
ভিজিয়ে দিয়ে উড়ে চলল পাখির বেশে।
রাফিও চলল ইশকুলের দিকে
পায়ে পায়ে সরে সরে রোদ-ছায়ার ফাঁকে ফাঁকে।
পোশাক ও সাজস্বজ্জা
পরিবেশ সৃষ্টিতে এবং চরিত্রের অলঙ্করণে পোষাক, সাজসজ্জা ও মঞ্চসজ্জা ইত্যাদি হলো নাচ এবং অভিনয়ের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।
চলো, উপরের কাব্য নাটিকাটি নিয়ে একটা কাজ করা যাক। আমরা নিজেরাই যদি চরিত্রগুলো হয়ে যাই তো কেমন হয়!
- এবার আমরা কয়েকটি ছোটো ছোটো দলে ভাগ হয়ে যাই। তারপর নাটিকাটি কয়েকবার পড়ি। দেখি তো কয়টি চরিত্র আছে?
- আমরা নিজেরাই চরিত্রগুলো হয়ে নাটিকাটি চর্চা করব। তবে মনে রাখতে হবে, এটা আমরা করব হাত-পুতুলের মাধ্যমে অথবা হাতে ভঙ্গিমার মাধ্যমে।
- এবার আমরা প্রথমেই পায়ের পুরোনো মোজা নিব অথবা একটু বড়ো কাপড়ের টুকরো/যে কোনো কাগজ কিংবা খালি হাত দুটোও ব্যবহার করতে পারি। এখন সেই মোজায়/কাপড়ে/কাগজে অথবা খালি হাতে বিভিন্ন রঙের সুতো/টুকরো কাগজ/দড়ি/বোতাম/গাছের পাতা/ডাল/ফুল/ফেলনা জিনিস ইত্যাদি দিয়ে বিভিন্ন চরিত্র তৈরি করব। এবার সেই চরিত্র অনুযায়ী গলার স্বর পরিবর্তন করে কথা বলব, শব্দ করব, ভঙ্গি করব।
মূল্যায়ন
শরৎ আসে মেঘের ভেলায়
শিক্ষার্থীর নাম:
রোল নম্বর:
তারিখ:
শিক্ষক পূরণ করবেন: টিজিতে নির্দেশিত কাজ শেষ করে তার আলোকে প্রযোজ্য বিবৃতিতে টিক দিন
অভিভাবকের মন্তব্য ও স্বাক্ষর: তারিখ:
আরও দেখুনঃ