আজকের আমাদের আলোচনার বিষয় হিন্দুমেলার ভূমিকা
হিন্দুমেলার ভূমিকা
হিন্দুমেলার ভূমিকা
১৮৬৭ সালের ১২ এপ্রিল হিন্দুমেলার উদ্বোধন হয়। জাতীয় সংগীত, কবিতা পাঠ, ক্রীড়া, কৌতুকসহ নানাবিধ সাংস্কৃতিক আয়োজন ও বক্তৃতাদির মাধ্যমে জনগণের মনে দেশভক্তি উজ্জীবিত করাই এ মেলার মূল উদ্দেশ্য। শুরুর দিকে কয়েক বছর কলকাতার উপকণ্ঠে এক উদ্যান স্থানে চৈত্র সংক্রান্তির দিনে মেলাটি অনুষ্ঠিত হতো বলে একে চৈত্রমেলাও বলা হতো।
পরে নাম বদলে নামকরণ হয় “হিন্দুমেলা”। এই মেলাতে যোগ্য গুণিজনদের পুরস্কৃতও করা হতো। দ্বিজেন্দ্রনাথ, গণেন্দ্রনাথ, সত্যেন্দ্রনাথ, জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ও গুণেন্দ্রনাথ এই মেলা উপলক্ষ্যে স্বদেশি গানের রচনা শুরু করেন এবং এই স্বদেশি গানের প্রেরণাই পরবর্তীকালে রবীন্দ্রনাথে প্রবাহিত হয়, যদিও তৎসময়ে রবীন্দ্রনাথ নিতান্তই ছোট।
হিন্দুমেলাকে কেন্দ্র করে ঠাকুরবাড়ির সদস্যদের রচিত স্বদেশি-গানের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সত্যেন্দ্রনাথ রচিত ‘মিলে সবে ভারত সন্তান/একতান মন-প্রাণ/গাও ভারতের যশোগান/ গণেন্দ্রনাথ রচিত ‘লজ্জায় ভারতযশ গাইব কী করে / নুঠিতেছে পরে এই রত্নের আকরে / সাধিলে রতন পাই, তাহতে যতন নাই/হারাই আমোদে মাতি অবহেলা করি এবং দ্বিজেন্দ্রনাথ রচিত ‘মলিন মুখ চন্দ্ৰমা ভারত তোমারি/রাত্রি দিবা ঝরিছে লোচনো বারি/চন্দ্রজিনি কান্তি নিরখিয়ে,
ভাসিতাম আনন্দে / আজিয়ে এ মলিনমুখ কেমনে নেহারি, এ দুঃখ তুমার হায় সহিতে না পারি। এই সকল গানের মধ্যদিয়ে তৎকালীন ভারতবর্ষের নিদারুণ অবস্থার কথা বর্ণিত হয়েছে এবং এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণের জন্য সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান করা হয়েছে। এই হিন্দুমেলাতেই বালক রবীন্দ্রনাথ প্রথমবারের মতো সাধারণের সামনে আত্মপ্রকাশ করেন।
তারিখটি ছিলো ১৮৭৫ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার। দিনটি বিশেষভাবে স্মরণযোগ্য। কারণ ঐ দিন তেরো বছরের বালক রবীন্দ্রনাথ হিন্দুমেলার একটি দীর্ঘ কবিতা স্মৃতি থেকে আবৃত্তি করে সকলকে মুগ্ধ করে দিয়েছিলো।
জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতে স্বদেশি-গান রচনার যে আবহ গড়ে তুলেছিল হিন্দুমেলাকে কেন্দ্র করে তাতেই রবীন্দ্রনাথের আবির্ভাব হয়, তেমনি সেই স্বদেশি-গানের পটভূমিকে কেন্দ্র করেই তাঁর স্বদেশ পর্যায়ের গানের আত্মপ্রকাশ। তাই হিন্দুমেলা বিশেষভাবে তাৎপর্যমণ্ডিত স্বদেশি-গান ও জাতীয়তাবোধ তৈরির প্রেক্ষাপট হিসেবে।
আরও দেখুন :