আজকে আমাদের বিষয়ঃ হেমন্ত রাঙা সোনা রঙে
হেমন্ত রাঙা সোনা রঙে
হেমন্ত মানেই শিশির ভেজা মনোমুগ্ধকর এক সকাল। কার্তিক ও অগ্রহায়ণ দুটি মাস পেলেও হেমন্ত খুবই সংক্ষিপ্ত একটি ঋতু। শুরুটা মিশে থাকে শরতের উজ্জ্বল উষ্ণতায়, শেষটা চলে যায় শীতের হিমশীতলে। পল্লিকবি জসীমউদ্দীনের কবিতার মতোই আমরা দেখতে পাই হেমন্ত ঋতুকে :
আশ্বিন গেল, কার্তিক মাসে পাকিল খেতের ধান,
সারা মাঠ ভরি গাহিছে কে যেন হদি-কোটার গান।
ধানে ধান লাগি বাজিছে বাজনা, গন্ধ উড়িছে বায়,
কলমীলতায় দোলন লেগেছে, হেসে কূল নাহি পায়।
আজো এই গাঁও অঝোরে চাহিয়া ওই গাঁওটির পানে,
মাঝে মাঠখানি চাদর বিছায়ে হলুদ বরণ ধানে।
হেমন্ত ঋতুতে আমাদের গ্রামবাংলার প্রান্তর জুরে থাকে ধানের ক্ষেত। পাকা ধানের ওপর ঢেউ খেলে যায় শীতের আগমনী বাতাস। ভেসে আসা ধানের গন্ধে ভরে ওঠে আমাদের মন। তোমরা কি জানো এ ফসল কারা ফলায়? কিষাণ-কিষাণি অনেক পরিশ্রম করে এ ফসল ফলায়। প্রয়োজন অনুযায়ী মাটি প্রস্তুত করা, চারা রোপন, পানি সেচ দেয়া, সার দেয়া, আগাছা পরিষ্কার করা ইত্যাদি নানা প্রক্রিয়ার মধ্যদিয়ে কাজ করতে হয়। এভাবে কঠোর পরিশ্রম করে কিষাণ-কিষাণি সবুজ ধানের চারা বড়ো করে। তারপর চারা গাছগুলো একসময় পেকে হলুদ হয়। দেখে মনে হয় হলুদ চাদর বিছানো মাঠ।
এই সোনালি পাকা ধানের ক্ষেতে ভিড় করে নানা পাখ-পাখালি। আর এ সময়ে পশু-পাখি যেন ফসলের ক্ষতি করতে না পারে সেজন্যে কৃষক ক্ষেতে বসায় মানুষের আদলে বানানো কাকতাড়ুয়া। বাঁশ, পুরানো কাপড়, খড়, মাটির পাতিল দিয়ে তৈরি করা হয় ‘কাকতাড়ুয়া’। তোমরা অনেকেই নিশ্চয়ই দেখেছ ?
এই অধ্যায়ে আমরা যেভাবে অভিজ্ঞতা পেতে পারি-
- হেমন্তের প্রকৃতি দেখে, শুনে ও স্পর্শ করে অভিজ্ঞতা নিতে পারি।
- ছবি ও ভিডিও দেখে বা অডিওতে গান, কবিতা শুনে অভিজ্ঞতা নিতে পারি।
- হেমন্তের প্রকৃতি দেখে ছবি আকাঁর উপাদান হিসেবে ‘হলুদ’ রঙ সম্পর্কে জানতে পারি।
আমাদের প্রধান খাদ্য ভাত, ধান থেকেই পাই। পাকা ধানের হলুদ রং। সূর্যের আলোর তারতম্যে তা আমরা সোনালি রঙের দেখি।
পাকা ধানের ‘হলুদ’ রং হলো আমাদের প্রাথমিক তিনটি রঙের একটা। লাল, নীল ও হলুদ এই তিনটি হলো প্রাথমিক রং। আমরা ‘পলাশের রঙে রঙিন ভাষা’য় ‘লাল’ রং, ‘বৃষ্টি ধারায় বর্ষা আসে’ ও ‘শরৎ আসে মেঘের ভেলায়’ তে ‘নীল’ এবং এই পাঠে হলুদ রং সম্পর্কে জানলাম।
নবান্নের আনন্দে আমন ধান ঘরে নেওয়ার ব্যস্ত সময় পার করে কৃষক। কৃষক কাস্তে দিয়ে ধান কেটে, আঁটি বেঁধে, কাঁধে করে কখনো গরুর গাড়ি বা যানবাহনে করে বাড়ির উঠোনে নিয়ে যান। এরপর চলে নতুন ধান মাড়াই, ঝাড়াই, সিদ্ধ করার কাজ।
সমতল ভূমির মতই পাহাড়ের গায়ে করা হয় নানা ধরনের চাষাবাদ। আমরা একে বলি ‘জুম’ চাষ। জুম চাষের জন্য প্রয়োজন হয় এক বিশেষ ধরনের দক্ষতা। পার্বত্য অঞ্চলে বসবাসকারী আমাদের বিভিন্ন জাতিসত্তার মানুষের রয়েছে জুম চাষের অসাধারণ দক্ষতা।
এই অধ্যায়ে আমরা যা যা করতে পারি-
- এবার আমরা কাগজ কেটে/ড্রইং করে/গাছের পাতা/ডাল-পালা দিয়ে কিষাণ-কিষাণির অবয়ব কোলাজ তৈরি করতে/ রং করতে পারি বন্ধুখাতায়।
- গাছের পাতা/ডাল-পালা/মাটি/যে কোনো ফেলনা জিনিষ দিয়ে কৃষকের অবয়ব গড়তে পারি।
- এবার আমরা বন্ধু খাতায় যে ছবি/নকশা আঁকব তা কিন্তু রঙ করব না,বিভিন্ন রকমের শস্যদানা আঠার দিয়ে লাগিয়ে তা পূর্ণ করব । ছবির বিষয়বস্তু কিন্তু হেমন্তকে নিয়ে হতে হবে। এই জন্য চল আমরা হেমন্তে কি কি পেলাম তার একটা তালিকা করে ফেলি।
- সেই তালিকা থেকে ছবির বিষয়বস্তু বেছে নিতে হবে। যেমন-কৃষাণ-কৃষাণির অবয়ব/কৃষি কাজে ব্যবহৃত নানা উপকরণ যেমন- কাস্তে/মাথাল(মাথার টুপি),লাঙ্গল/কাকতাড়ুয়া/ডালা/কুলা ইতাদি।
আমাদের ঘরের কাজে যেমন কুলা, চালুনি, ঝাড়ু লাগে, তেমনি নতুন ধান মাড়াই, ঝাড়াই, সেদ্ধ, শুকানোতে প্রয়োজন হয় ডালা, কুলা, চালুনি, ঝাঁটা, চাটাই ইত্যাদি। আমরা কি জানি এগুলো বাঁশ ও বেতের তৈরি। এগুলোকে হস্তশিল্প বা বাঁশ ও বেতের শিল্পও বলে।
হেমন্তে পাকা ধান কেটে মাথায় করে নিয়ে আসা, ধান মাড়াই করে রোদরে শুকানো।বাংলার এই চিরন্তন রুপ শিল্পীর তুলিতে উঠে এসেছে বার বার।
এখন মেশিনে ধান ভাঙলেও, এক সময় ঢেঁকিতে পাড় দিয়ে ধান থেকে চাল বের করত। বাংলাদেশের কোথাও কোথাও এখনো ঢেঁকি দেখা যায়। পার দেয়ার সময় পায়ে আসে ছন্দময় চলন। ঢেঁকির এই ওঠানামায় তৈরি হয় শব্দ ও ছন্দ। আমরা সেখান থেকে পাই গানের কিছু উপকরণ। মনে লাগে আনন্দের দোলা, গলায় আসে সুর, গাঁয়ের গীত। আমরা আমাদের কণ্ঠে ধারণের জন্য কিছু অনুশীলন করতে পারি যা আমাদের ছন্দের সঙ্গে সুরের ধারণা দিতে পারে।
মূল্যায়ন
হেমন্ত রাঙা সোনা রঙে
শিক্ষার্থীর নাম:
রোল নম্বর :
তারিখ:
শিক্ষক পূরণ করবেন: টিজিতে নির্দেশিত কাজ শেষ করে তার আলোকে প্রযোজ্য বিবৃতিতে টিক দিন
অভিভাবকের মন্তব্য ও স্বাক্ষর: তারিখ:
আরও দেখুনঃ