Site icon Arts and Culture Gurukul [ শিল্প ও সংস্কৃতি গুরুকুল ] GOLN

অতুলপ্রসাদের গানে স্বদেশচেতনা

অতুলপ্রসাদের গানে স্বদেশচেতনা

আজকের আমাদের আলোচনার বিষয় অতুলপ্রসাদের গানে স্বদেশচেতনা

অতুলপ্রসাদের গানে স্বদেশচেতনা

 

 

অতুলপ্রসাদের গানে স্বদেশচেতনা

বাংলার প্রতি জনসাধারণের আগ্রহকে বলিষ্ঠ করবার জন্য বহুগীতিকবি তাঁদের বহু রচনায়. কর্মে স্বদেশবন্দনার বাণী লিপিবদ্ধ করে গেছেন। তাঁদের মধ্যে অবশ্যই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, দ্বিজেন্দ্রলাল রায়, রজনীকান্ত সেন প্রমুখ অগ্রগণ্য। এঁদের পরবর্তী সময়ে স্বদেশ মাতৃকার সেবায় আকর্ষণ বৃদ্ধির এই মহৎ কর্মে যেসকল মহান উদার হৃদয় জাতীয় নেতৃত্বে নিজেদেরকে সমর্পণ করেছিলেন অতুলপ্রসাদ তাঁদের মধ্যে অন্যতম।

হিন্দু-মুসলমানের চেতনাকে সমন্বয় করবার প্রয়াস যেকোনো দেশীয় আন্দোলনের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। একটি বৃহত্তর জনগোষ্ঠীকে বাদ রেখে কখনোই ঐক্যের বাণী আওড়ানো সম্ভব নয়। অতুলপ্রসাদ এ সংকটটি খুব ভালোভাবেই উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন। তাই সামাজিক সকল সমস্যা গোড়া থেকে নির্মূল করবার উদ্দেশ্যে তিনি বেছে নিয়েছিলেন ভারতের ঐতিহ্য ও প্রাণের খোরাক সংগীতকে।

যেমন তিনি সারাজীবন বিভিন্ন সংগঠনের মাধ্যমে দেশমাতার সেবা করেছেন, তেমনি গেয়ে গেছেন অন্তর নিঃসৃত গান। ব্যক্তিজীবনের সংকট থেকে যে জাতীয়জীবনের সংকট বৃহত্তর তা নিরূপণের জন্য রচনা করেছেন অসাধারণ সব গান। তিনি এসব গান গেয়ে ঘুমিয়ে থাকা-ঝিমিয়ে পড়া-ঘুণে ধরা মানুষের আত্মাকে জাগানোর প্রয়াসে নিয়োজিত ছিলেন।

নিভৃতচারী কবি গীতিকবিতার অমূল্য স্বাদে যখন আত্মমগ্ন, বাংলাদেশের সর্বত্র জেগে উঠেছিল স্বদেশ বন্দনার ঢেউ। সেই উত্তাল ঢেউ-এ আত্মনিবেদন করলেন কবি অতুলপ্রসাদ সেন। ছোটবেলা থেকেই দেশ ভক্তি ও দেশপ্রেম উন্মাদনায় চঞ্চল হয়ে উঠতেন তিনি। দেশ নেতাদের বক্তৃতা শুনতেন মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে। আর সংগীত ছিলো তাঁর রক্তকণিকায় প্রবাহিত। শৈশবকাল থেকেই সংগীতের সুরাচ্ছন্নতা তাঁকে ডুবিয়ে রাখতো। এ প্রসঙ্গে কল্যাণ কুমার বসুর দুটি উদ্ধৃতি তুলে ধরা হলো-

“মিরাতারের বাসাবাড়ি প্রথমে ছিলো ডাক্তারদের ক্লাব, এখন সেই সঙ্গে হল নববিতান সমাজের ব্রাহ্ম সভ্যসভাদের মিলন ক্ষেত্র। … অন্তঃপুরিকারা যোগ দিতেন আলাপ-আলোচনায় এবং উপাসনায়। ছোটরাও যোগ দিত। উপাসনা সভায় ছোট্ট অতুলের নিপুণ পাখোয়াজ বাদ্য উপস্থিত সকলে খুব উপভোগ করতেন। মিরাতারের বাসাবাড়ির দক্ষিণের ঘরটা ওদের গান বাজনাচর্চার আসর। গান এবং বাজনা দুইই চলতো।

সুবোধের বাবা গোবিন্দবাবু গান লিখতেন, সুবোধ বাবার দেওয়া সুরেই বাবার গান গাইত, কত কাল পরে বল ভারত রে দুঃখ সাগর-সাঁতারি হব পার। বাবার পাখোয়াজখানা বাবার ঘর থেকে নামিয়ে আনত ও (অতুলপ্রসাদ) বাবার অসাক্ষাতে। সংগীতে স্বদেশচেতনার বিষয়টি আরো স্পষ্ট হবে অতুলপ্রসাদের সংগীতের রচনাগত বৈশিষ্ট্য নিয়ে আলোকপাত করলে। ব্যক্তি জীবনের সরলতা তাঁর রচনার সর্বক্ষেত্রে পরিলক্ষিত।

কাব্য সংগীতের সর্বত্রই পরিলক্ষিত তাঁর এই বৈশিষ্ট্য। আবেগের শুদ্ধতা নিরাবরণ কাব্যসংগীতকে আরো আবেগঘন করে তুলেছে। সাথে ঠুংরি চালের হালকা সুরে কখনো অন্য সুরের মিশ্রণ এবং রাগ-রাগিণীর আশ্রয় তাঁর গানকে দিয়েছে এক অন্য মাত্রা। দেশজ সুরের অর্থাৎ বাউল, কীর্তন ও রামপ্রসাদী সুরের দোলায়িত ছন্দ তাঁর সংগীতকে করে তুলেছে অনন্য। স্বদেশপ্রেমের গান এক্ষেত্রে এক অতুলনীয় উদাহরণ।

আইন ব্যবসায়ে প্রসিদ্ধ লক্ষ্মৌর সেনবাবুকে এক নামে জানতেন সকলে। তাঁর কর্মনিপুণতা, উদার- আবেগী ও সংগীতপ্রেমী মন সকলের কাছে স্বল্প সময়ে অত্যন্ত প্রিয় হয়ে উঠেছিল অচিরেই। জীবিকার কর্মব্যস্ততায় অতুলনীয় এই সংগীত প্রতিভা সারাজীবনে রচনা করেন মাত্র ২০৬ / ৭টি গান। তার মধ্যে গীতিগুচ্ছের স্বদেশ পর্বের গান মাত্র ১৩টি। সংখ্যায় কম হলেও ভাষার দ্যোতনা এবং সুরের মূর্ছনায় তাঁর এক একটি গান অনন্যতার দাবিদার। কবির ভাষায়,

“উঠ গো ভারত-লক্ষ্মী, উঠ আদি-জগত-জন-পূজ্যা

দুঃখ দৈন্য সব নাশি করো দূরিত ভারত-লজ্জা।

ছাড়ো গো ছাড়ো শোকশয্যা, কর সজ্জা

পুনঃকমল-কনক-ধন-ধান্যে!

‘ভেনিস নগরের গন্ডোলা চাকরদের গানের সুরে রচিত এটি অতুলপ্রসাদ সেনের প্রথম স্বদেশপ্রেমের গান। স্বদেশপ্রেমে চঞ্চল অতুলপ্রসাদ ভালোবাসতেন গান গাইতে। রবীন্দ্রনাথের গান ছিলো তাঁর পরম আরাধ্যের। তিনি দেশ ছেড়ে সকল আপনজনকে ছেড়ে যখন বিলেতে গেলেন তখন অন্তরে লুকায়িত স্বদেশের জন্য তাঁর প্রেমবেদনা ফল্গুধারার মতো বিচ্ছুরিত হয়ে বেরিয়ে এলো। এই গানের বাণীর সুধায় মুগ্ধচিত্তে ভারতমাতাকে প্রণতি জানালেন।

বিলেতে থাকাকালে সাহিত্যিক এডমন্ড গস গঠন করলেন ‘স্টাডি সার্কেল’ নামে সাহিত্য সংগীত চর্চার একটি আপন আলয়। যেই আলয়ে সকলে নিজেদের মেলে ধরতেন যার যার অন্তরের অভিব্যক্তি নিয়ে। তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সরোজিনী নাইডু, ডি.এল রায় ও মনমোহন ঘোষের স্বরচিত কবিতা ও গান। এমনি এক আসরে কোনো এক সন্ধ্যায় অতুলপ্রসাদ গেয়ে উঠলেন জন্মভূমির মায়াবন্ধনে বাস্তব প্রাণের আকুতি।

এক অদ্ভুত ধ্যানমগ্নতায় সেদিন আসরটি স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল এই মাতৃ-বন্দনার ব্যাকুল করা শুদ্ধ প্রাণের অগুলি দানের স্তুতিতে, যেন উপস্থিত ভক্ত পূজারীগণ এক পরম বিস্ময়ে ক্ষণিকের জন্য অনাড়ম্বর শুচি-শুদ্ধ প্রাণের অঞ্জলী দান করে তৃপ্ত হলেন। ১৯ এ প্রসঙ্গে একটি ঘটনা উল্লেখ করা প্রাসঙ্গিক।

“অরবিন্দ ঘোষ বাঙলা তেমন জানতেন না কিন্তু ভাষার ও সুরের ধ্বনির তরঙ্গ এমনভাবে হৃদয়ে ঢেউ তুলেছিল যার প্রভাবে তাঁর অন্তরও গভীরভাবে আকৃষ্ট হলো। গানটি শুনতে শুনতে অজানা ভাব তন্ময়তায় বাইরেও উদার উন্মুক্ত আকাশের মধ্যে ভবিষ্যৎ জীবনের অপ্রত্যাশিত রূপরেখাটি দেখতে পেলেন। স্বতোৎসারিত আবেগে তাঁর চোখ দুটি জলে ভরে গেল। আর সেই জলেই মায়ের চরণ ধুয়ে বাঁধনহারা আনন্দধারায় ভরপুর।

সরোজিনি নাইডু a placid and sweet expression এমন করে মাতৃভূমি ও মা-এর জন্য এর আগে অনুভব করিনি বলে অভিমত প্রকাশ করে আনন্দ স্নিগ্ধ তন্ময়তায় আনন্দ-অশ্রু বর্ষণ করলেন। একবার বারাণসীতে কংগ্রেসের অধিবেশন হলে অতুলপ্রসাদ, গঙ্গাপ্রসাদ ভার্মা, গোবরনাথ মিশ্র বিশ্বেশ্বরনাথ, শ্রীবাস্তব, মমতাজ হোসেনসহ সকল রাজনৈতিক নেতা সেই সভায় যোগ দেন।

সভায় অতুলপ্রসাদ লক্ষ্মৌর মনোনিত সদস্য ও নেতা এবং সভাপতি মহামতি গোখলে। বারাণসী কংগ্রেসের সভার প্রতিপাদ্য বিষয় ছিলো বঙ্গভঙ্গ; অথচ বঙ্গভঙ্গ প্রতিহত করার জন্য কোনো কার্যক্রম বা উদ্যোগের ঘোষণাই সভায় গৃহীত বা প্রকাশিত হয়নি। এতে প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হন অতুলপ্রসাদ সেন। যেখানে সমগ্র বাংলা জেগেছে, কলকাতা উত্তপ্ত অথচ কংগ্রেসের সভাতে কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করা না হলে নবসদস্য অতুলপ্রসাদ ক্ষুব্ধ ও ভারাক্রান্ত হৃদয়ে গাইলেন-

“আপন কাজে অচল হলে

চলবে না রে চলবে না।

অলস স্তুতি-গানে তাঁর আসন

টলবে না রে টলবে না।

মঞ্চে উপস্থিত সকল নেতৃবৃন্দ অতুলপ্রসাদের এই গানে বাকরুদ্ধ হয়ে রইলেন। গোখলে স্বয়ং তাঁর কাছে এসে বঙ্গভঙ্গ বিষয়ে আশ্বাস দিলেন; এহেন দেশপ্রেমে মুগ্ধ হলেন। বারাণসী কংগ্রেসের এই অধিবেশনেই অতুলপ্রসাদ গোখলের বক্তব্যে আশ্বস্ত এবং আকৃষ্ট হন। গোখলেও তাঁর দেশপ্রেমের মোহাবিষ্টতায় মুগ্ধ হন এবং ‘বঙ্গীয় যুবক সমিতি’র আয়োজনে অংশ নিতে লক্ষ্মৌতে তাঁর বাড়িতে আতিথ্য গ্রহণ করেন।

সেইবার অতুলপ্রসাদ গোখলেকে তাঁর রচিত প্রথম স্বদেশপ্রেমের গানটি গেয়ে শোনান। স্ত্রী হেমকুসুমও সেদিন দেশমাতার অপূর্ব এই ভক্তিস্তুতিতে কণ্ঠ মিলিয়েছিলেন অতুলপ্রসাদ সেনের সাথে। সমগ্র বাংলা তখন উত্তপ্ত স্বদেশি আন্দোলনের উত্তাপে। সেই তাপে লক্ষ্মৌও জ্বলে উঠল। লক্ষ্মৌর সর্বত্র শুরু হলো ইংরেজ সরকারের অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ মিছিল।

ক্ষুদিরামের ফাঁসি, যতীন দাসের আত্মত্যাগ এবং বহু তরুণ বাঙালির কারাবরণসহ বহু বিচ্ছিন্ন বিক্ষিপ্ত ঘটনায় বাঙালির মন ভারাক্রান্ত। ক্ষিপ্ত অথচ হাত-পা বাধা মন গুমরে মরছে যেন, তবুও সভা সমিতিতে বহুবিধ আলোচনার মধ্যদিয়ে যাঁরা পরিত্রাণের পথ খুঁজছিলেন অতুলপ্রসাদ সেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম।

তিনি যেহেতু একজন ব্যারিস্টার সরাসরি অনেক কাজ করতে না পারলেও গানকে হাতিয়ার করে মানুষের বিক্ষিপ্ত মনকে স্বদেশ মাতার সেবায় সঙ্ঘবদ্ধ করবার প্রাণপণ চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন। সেই উত্তাল সময়ে পূর্বে লেখা গান ‘উঠ গো ভারতলক্ষ্মী’ পরিপূর্ণ রূপ পায় এবং এই গান তিনি সর্বত্র গাইতে থাকলেন। রবীন্দ্রনাথের গানের সাথে সাথে অতুলপ্রসাদ সেনের গান বিপ্লবীদের সাহস জোগাতে লাগল দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলার।

লক্ষ্মৌতে অতুলপ্রসাদ স্বদেশচেতনার যে বীজ বপন করেছিলেন তা পরিপক্কতা পায় তাঁর একান্ত যত্নে। উল্লেখ্য যে, জীবনের প্রথম রচিত স্বদেশ ভক্তির এই গান অতুপ্রসাদকে স্বদেশি গান রচনায় আরো অনুপ্রাণিত করে তুলেছিল। এই গানটি তাঁকে কেমন জনপ্রিয়তা দিয়েছিল একটি উদাহরণে বিষয়টি আরো স্পষ্ট হবে,

“ই.বি.এর স্টেশনবাবুরা অতুলপ্রসাদের গান শুনেছেন, কিন্তু মানুষটিকে দেখেননি। টিকিট মাস্টারের জিজ্ঞাসায় সত্যদাদার কাছ থেকে অতুলপ্রসাদের পরিচয় পেয়ে সে কি আনন্দ! গানের মেলা বসে গেল। অনেকেই বলছেন, উঠো গো ভারতলক্ষ্মীর কবি।
এই গানটিতে কবি ভারতলক্ষ্মীর লজ্জা নিবারণ করতে সকলকে জেগে উঠতে বলেছেন।

এ বেলা সকল বেদনাকে দূরে ফেলে, শোকসজ্জা ত্যাগ করে ত্রিশ কোটি সন্তানকে মা’কে বুকে তুলে নিতে বলেছেন। কবি। মায়ের সন্তানেরা অত্যাচারে নিপীড়নে আজ ভীত-শঙ্কিত। যথার্থ নেতৃত্বহীনতায় আশার তরী যেকোনো মুহূর্তে অন্ধকার সাগরে ডুবে যেতে পারে। তাই ভারতমাতাকে নতুন আনন্দে তাঁর সন্তানদের উদ্যমিত করতে হবে।

শোষণকে পরাহত করতে ত্রিশ কোটি সন্তানের প্রেমবন্ধনে আবদ্ধ হওয়া যেমন দরকার তেমনি পরস্পরের প্রতি হিংসা-দ্বেষ ভুলে দেশমাতার সেবায় আত্মনিবেদন করতে হবে। এ সকল অভয় ও আশার বাণীই মূলত এই গানটি মূল উপজীব্য। সেইসাথে ভারতমাতাকে বারংবার জননী সম্বোধন ও মায়ের প্রতি আকুলতা বিপ্লবীদের সংকল্পে দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ করে তুলতো।

তাই এই গানটি অতুলপ্রসাদ সেনের এক অনন্য সৃষ্টি। লক্ষ্মৌর কংগ্রেস অধিবেশনের উদ্দেশ্যে তিনি রচনা করেছিলেন আরেকটি অনিন্দ্য সুন্দর স্বদেশপ্রেমের গান। পরাধীন ভারতের অলসতা দূর করতে গানটির মধ্যদিয়ে কবি ভারতের অতীত ঐতিহ্যের স্তুতি বন্দনা করেছেন।

জগৎসংসারে ভারতমাতাকে শ্রেষ্ঠতর আসনে অধিষ্ঠিত করবার যে সংকল্প বিরাজ করছিল চারিদিকে, তাতে সকলকে দৃঢ়চিত্তে স্থির থাকা ও আত্মশক্তিতে ধাবিত করবার উদ্দেশ্যেই মূলত কবি এ গানটি রচনা করেছিলেন-

“বলো বলো বলো সবে, শত-বাণী-বেণু-রবে,

ভারত আবার জগতসভায় শ্রেষ্ঠ আসন লবে;

ধর্মে মহান হবে, কর্মে মহান হবে,

নব দিনমণি উদিবে আবার পুরাতন এ পুরবে।

ভ্রাতৃত্ব বন্ধনে সকলকে এক করবার আহ্বানে নিবন্ধ এই গানটি কবি লক্ষ্মৌতে কংগ্রেসের অধিবেশনে গেয়ে শুনিয়েছিলেন। শুধু তাই নয়, কংগ্রেস অধিবেশনের সমস্ত দায়িত্ব তিনি নিজ কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন। জীবনের কঠিনতম পরিশ্রম দিয়ে স্বদেশমাতৃকার স্বার্থে সকলকে এক করবার মানসে কবি এই অধিবেশনের জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করেছিলেন।

একদিকে অধিবেশনের সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন, অন্যদিকে শৃঙ্খলা রক্ষায় স্বেচ্ছাবাহিনীর অধিনায়ক। উদ্দেশ্য কেবল লক্ষ্মৌবাসীকে অধিবেশনে শামিল করা, যা ইতিপূর্বে কখনো হয়নি। তিনি অক্লান্ত পরিশ্রমে তা সফলও করে তুলেছিলেন।

 

 

গুগল নিউজে আমাদের ফলো করুন

 

 

রাজা- নবাব, ধনী-গরিব, স্কুলমাস্টার, উকিল, এক্সট্রিমিস্ট, রইস, অধ্যাপক, রায়ৎ, হিন্দু-মুসলমান, ব্যারিস্টার, সকল পেশার, সকল ধর্মের, সকল জাতির মানুষ সেদিন তাঁর ডাকে সাড়া দিয়ে কংগ্রেস অধিবেশনে শামিল হয়েছিলেন। সে এক অভূতপূর্ব দৃশ্য! সকলে ‘সেন সাহেব’-এর আহ্বানে যুক্ত হয়েছিলেন সেই অধিবেশনে। প্রসঙ্গত বলতে হয় অতুলপ্রসাদ কিন্তু কংগ্রেসের এই অধিবেশনে যে ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা গ্রহণ করা হয় তাতে খুশি হতে পারেননি।

এমনকি নেতৃবৃন্দের মানসিকতা এবং বিভিন্ন বিষয়ে যে সকল আলোচনা হয় তিনি তাতেও সম্মত হতে পারেননি। এত পরিশ্রমের ফলে সে অধিবেশন সফল করে তুলেছিলেন, তা সত্ত্বেও আত্মমর্যাদার কাছে হার মানতে পারেননি তিনি। দেশপ্রেমী, নিষ্ঠাবান, কবি আপন ভাবনার সাথে কংগ্রেসের নেতৃবৃন্দের ভাবনার মিল না হলে ব্যথিত হৃদয়ে নিজেই কংগ্রেসের সদস্যপদ ত্যাগ করে লিবারেল ফেডারেশনের সাথে যোগাযোগ করেছিলেন।

লক্ষ্মৌতে কংগ্রেসের অধিবেশন উপলক্ষ্যে লিখিত স্বদেশ ভক্তির এই গানটি মূলত ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলকে এক করবার আহ্বানে পূর্ণ। ভারতের ঐতিহ্যের ভাণ্ডার এখনো পূর্ণ। গৌরব কাহিনিতে এর রাজপথ মুখরিত। ভারতবর্ষের প্রতিটি নারী তেজোদীপ্ত। তাই কবি এই গানটিতে ধর্ম-দ্বেষ, জাত- অভিমান ভুলে দেশের স্বার্থে ত্রিশ কোটি দেহকে এক হবার আহ্বান জানিয়েছেন।

সেইসাথে কবি আশাবাদ ব্যক্ত করে জানিয়েছেন, ভারতমাতার বুকে সাময়িক যে যন্ত্রণার দহন রয়েছে তা চিরস্থায়ী নয়। অচিরেই এ মাটি, বিদ্যা-বৈভব, শিল্প, ধর্ম ও বাণিজ্যে পরিপূর্ণ হবে। লক্ষ্মৌতে কংগ্রেসের অধিবেশনের কিছুকাল পরেই বিশ্বযুদ্ধের সময়টিতে কবি ‘আওয়ার ডে’ সংগঠনটির জন্য টাকা সংগ্রহ শুরু করেন। তিনি স্বরচিত গান গেয়ে গেয়ে অর্থ সঞ্চয় করতেন। এই ‘আওয়ার ডে’-এর অনুষ্ঠানের উদ্দেশ্যেই তিনি রচনা করেছিলেন নিচের গানটি-

হও ধরমেতে ধীর, হও করমেতে বীর,

হও উন্নতশির নাহি ভয়।

ভুলি ভেদাভেদ জ্ঞান হও সবে আগুয়ান,

সাথে আছে ভগবান হবে জয়।

কবি এই গানটিতে সুন্দর কিছু আশার বাণী ব্যক্ত করেছেন। তিনি সারাজীবন মানুষে মানুষে বিভেদ জ্ঞান থেকে নিজেকে মুক্ত রেখেছেন। তেমনি প্রত্যাশা করতেন নানা ভাষা, নানা মত, নানা পরিধান, থাকলেও প্রতিটি ভারতীয় এক অপরের পক্ষে থাকবে। একই পথে অগ্রসর হবে ভারতমাতার স্বার্থে। এ ভারতবর্ষে ক্ষুধা আছে, অভাব আছে তাই বলে তারা দরিদ্র নয়। কারণ তেত্রিশ কোটি জনবলে সমৃদ্ধ এ ভারতবর্ষ।

তাই সত্যকে মাথার চূড়া করে সম্মুখে এগুবার আশাবাণী ব্যক্ত করেছেন কবি। বাংলার বাঘ বলে খ্যাত স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের বড় প্রিয় গান ‘দেখ মা এবার দুয়ার খুলে। রবীন্দ্রনাথের গান ঐতিহ্য, জনশক্তি এবং সত্যের জয়কে কবি এখানে ভারতবর্ষের মূল শক্তি বলে তুলে ধরেছেন। সাধারণত এটি সমবেত কণ্ঠে গীত হয়ে থাকলেও নানাবিধ সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে এ গানের বাণী হতাশার বুকে আশা জাগিয়েছে।

রাজনৈতিক আদর্শিকতার দিকনির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে এ গানে। বাঙালির স্বদেশ চেতনাকে ভীষ্ম করতে, উজ্জীবিত করতে এ গানের তুলনা বিরল। ধর্ম ও কর্মকে আত্মবিশ্বাসের হাতিয়ার করে কবি উচ্চস্বরে সম্মুখে এগুবার মন্ত্র লিপিবদ্ধ করেছেন এই গানটিতে।

হিন্দু-মুসলমান দুটি ধর্মকে কবি সবসময় একই মায়ের কোলে দুই সহদর বলে কল্পনা করেছেন। কোনো দিন ভেদাভেদ করতে চাননি। তিনি ১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের সময় হিন্দু-মুসলমানের ঐক্যের জয়গান গেয়েছেন। নিচের এই গানটি তারই উজ্জ্বল উদাহরণ-

“দেখ মা, এবার দুয়ার খুলে।

গলে গলে এনু মা, তোর

হিন্দু-মুসলমান দু ছেলে

১৯০৫ সালের উত্তাল সময়টি জন্ম দিয়েছে বহু কবি, সাহিত্যিক ও দেশপ্রেমিক আত্মনিবেদিত প্রাণের। ইংরেজ সরকার মুসলিমদের জন্য আলাদা আবাস করবার চক্রান্তে বাঙালিকে দুটি ভাগে বিভক্ত করে এর সম্মিলিত শক্তিকে দুর্বল করবার বহুদিন আগে থেকেই কুটবুদ্ধি আটছিলেন। অবশেষে সকল জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে ১৯০৫ সালের ১৬ অক্টোবর বঙ্গব্যবচ্ছেদ ঘোষণা করা হয়। বঙ্গ জাতির বুকে এ আঘাত বজ্রঘাতের সমান।

তবে ইংরেজ শাসকদল বুঝতে পারেনি যে বাঙালি সত্তাকে ছিন্ন করবার যে প্রয়াস তারা করেছিলেন সে চেষ্টাই উল্টো সমগ্র বাঙালিকে এক মন্ত্রে সম্মিলিত করবে। সমগ্র ভারতের সকল বাঙালি এ সিদ্ধান্তে ক্ষিপ্ত হয়েছিল এবং এর প্রতিবাদে রাজপথ মুখরিত হয়ে উঠল। রবীন্দ্রনাথের গান যার যার অবস্থান থেকে ‘বঙ্গবিভাগের এ কুচক্রান্ত প্রতিহত করবার জন্য সকল শ্রেণীর মানুষ, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী সকলে এ আইনের বিরুদ্ধে ব্যবচ্ছেদের প্রতিবাদে যুক্ত হলেন।

রবীন্দ্রনাথের আহ্বানে এ দিনটিকে রাখি বন্ধন ও অরন্ধনের দিন বলে ঘোষণা করা হয়। অতুলপ্রসাদ সেন বাংলাদেশের সকল দেশপ্রেমী বাঙালির মতো এ আন্দোলনে যোগ দিতে লক্ষ্মৌ থেকে কলকাতা আসেন। রবীন্দ্রনাথের গান হাওড়া স্টেশন থেকে কলকাতার উদ্দেশ্যে রওনাকালে হঠাৎ সমবেত কণ্ঠে নিজের গান শুনে থমকে দাঁড়ালেন, বিস্মিত হলেন কবি।

এ প্রসঙ্গে সুনীলময় ঘোষের গ্রন্থ থেকে অংশবিশেষ তুলে ধরা হলো- “অতুলপ্রসাদ মস্তক অবনত করে নয়নমুদে গানটি শুনছিলেন। গানটি শেষ হবার পর দলের মধ্যে একটি ছেলেকে ডেকে অতুলপ্রসাদ জিজ্ঞাসা করলেন, এ গানটি কার ভাই, তোমরা যা গাইছ! ছেলেটি বেশ আশ্চর্য হয়ে গর্বিত সুরে বলল, কেন, এ তো অতুলপ্রসাদ সেনের গান. আপনি জানেন না।

অতুলপ্রসাদ স্মিতহাস্যে পুলকিত গৌরবে সেই গানের দলের সাথে চলেছেন। গঙ্গার ধারে গিয়ে দেখলেন দেশপ্রেমিক জনসাধারণ দলে দলে গান গাইতে গাইতে গঙ্গাস্নান করতে যাচ্ছেন বঙ্গ-ব্যবচ্ছেদের অভিশাপ থেকে মুক্ত হবার জন্য।

শোভাযাত্রার সামনে একটি অল্প বয়স্ক বালক (মহারাজা জগদীন্দ্রনারায়ণ রায়ের শিশু, অধুনা মহারাজ) মোটাকায় একটি লোকের স্কন্ধে উঠে হাত নেড়ে উদাত্ত কণ্ঠে গাইছে … বাঙলার মাটি.. বাঙলার জল… শোভাযাত্রায় সমবেত সকলে তার পুনরাবৃত্তি করছেন। সে দৃশ্য হৃদয়স্পর্শী অতুলপ্রসাদ মুগ্ধ, প্রণত হলেন সকলের চরণে। রবীন্দ্রনাথও নিজে খালি পায়ে গঙ্গাস্নান করে নতশিরে সেই মহাপুণ্য মিছিলে মাতৃবন্দনায় যোগ দিয়েছিলেন, সকলের কণ্ঠে।

যদি ডাক শুনে কেউ না আসে, তবে একলা চল রে … । অতুলপ্রসাদ প্রসাদের গীতিগুচ্ছের আরেকটি অসাধারণ স্বদেশপ্রেমের গান ‘মোরে কে ডাকে, আয়রে বাছা, আয় আয়। অতুলপ্রসাদ ছিলেন অত্যন্ত মাতৃভক্ত এক সন্তান। রবীন্দ্রনাথের গান মা-কে জানপ্রাণ দিয়ে ভালোবাসতেন। মায়ের প্রতি প্রকৃত সন্তানের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে তাঁর প্রাণপ্রিয়ার থেকে অভিমানে-কষ্টে দূরে সরে যেতে হয়েছিল।

তাঁর সমগ্র জীবন জুড়ে সেই বিরহ বেদনার আভাস ফুটে উঠেছে তাঁর মানবপর্বের গানসমূহের মাঝে। মায়ের সান্নিধ্য লাভের জন্য তাকে বিসর্জন দিতে হয়েছিল। প্রিয়ার ছায়া। “মা” এমনি এক অমূল্য ধন। এমনকি লক্ষ্মৌতে তার গড়া বাড়িটিও তিনি নামকরণ করেছিলেন জন্মধাত্রী মা হেমন্তশশীর নামে। সেই মাতৃরূপ তিনি দর্শন করেছিলেন স্বদেশ মাতৃকার ছায়ায়।

এতো আবেগ, এতো আকুতিতে মাখা তাঁর প্রতিটি স্বদেশপর্বের গানে আমাদের মনে বিস্ময় জাগায়। কবির ভাষায়- মোরে কে ডাকে আয় রে বাছা, আয় আয়।/ বহুদিন পরে যেন মায়ের কথা শোনা যায়। রবীন্দ্রনাথের গান চির শাশ্বত সন্তানের মাতৃ সান্নিধ্যের হাহাকার অনুরণিত হয়েছে এই গানটি জুড়ে। কবি স্বদেশের পরাধীনতাকে আপন দেশে পরবাসী তুল্য মনে করতেন।

আপন কাজে মগ্ন থেকে মায়ের অপমানকে চোখ মেলে দেখতে না পারাকে কবি সন্তানের জন্য চরম লজ্জার বলে স্বজাতিকে ধিক্কার জানিয়েছেন। কবি এ সন্তানকে স্নেহের বন্ধনে আগলে রাখবার আকুতি জানিয়েছেন। কোন ধন মোহই এ বাঁধন ছিন্ন করে সন্তানকে মা-এর সান্নিধ্যচ্যুত না হতে হয়। এমনি আরেকটি স্বদেশপর্বের গান যা আত্মাকে জাগিয়ে তোলে। গভীর বোধের কবি একটি গানের মধ্যদিয়ে জীবনের সকল হিসেবের কথা আওড়ে।

তরুণদের উদ্বুদ্ধকরণে বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনকালে এ গানের গুরুত্ব ছিলো অসীম। রচনার কয়েক দিনের মধ্যেই কারাগারে বন্দি দেশসন্তানদের সকলের মুখে মুখে এ গান অনুরণিত হতে থাকে। দেশ সেবার জন্য তারা জীবন বাজি রেখেছিলেন। তাই এই গান তাদের কারাগার আর অত্যাচারের ভয় থেকেও মুক্তি দিয়েছিল। এক আত্মশক্তির আহ্বানে তাই বিপ্লবীদের অত্যন্ত প্রিয় হয়ে উঠল অতুলপ্রসাদের গান।

এ গান রচনার বহু বছর পর এক সন্ধ্যায় যতীন বসু এবং বিরাজগুপ্ত অতুলপ্রসাদের বাসভবন হেমন্ত নিবাসে এসেছিলেন। উভয়েই ভারতের টগবগে রাজনৈতিক নেতা এবং অতুলপ্রসাদের বাড়িতে বসেও রাজনীতির নানা দিক নিয়ে আলোচনা করছিলেন। ইংরেজদের দমননীতির অত্যাচার থেকে দেশবাসীকে মুক্ত করবার নেতৃত্বমূলক ভাবনা নিয়ে কথোপকথন চলছিল।

এমন এক মুহূর্তে অতুলপ্রসাদ নিজে সমবিষয়ে রচিত বহু বছর আগে লেখা এই গানটির কথা উল্লেখ করলেন এবেং নিজেই উদাত্ত কণ্ঠে গাইলেন । অতুলপ্রসাদ সেনও রবীন্দ্রনাথের মতো বিশ্বাস করতেন যে ইংরেজদের বিরুদ্ধে অসহযোগ আন্দোলনের পূর্বে আমাদের নিজেদের ভিতরকার রেষারেষি থেকে নিজেদের মুক্ত করতে হবে। হিন্দু-মুসলমান প্রত্যেকে প্রত্যেকের পাশে একমত ও মর্যাদায় না দাঁড়াতে পারলে কোনো আন্দোলনই যথার্থ রূপ পাবে না।

যেখানে হিন্দুতে হিন্দুতে দ্বন্দ্ব বর্ণ-বৈষম্য ও পূজা রীতি-নীতি নিয়ে, সেখানে দেশমাতাকে মুক্ত করতে অসহযোগ আন্দোলন বেমানান ঠেকে। অতুলপ্রসাদ সেন গান্ধীজীকে খুবই শ্রদ্ধা করতেন, তবুও অসহযোগ আন্দোলনকে মনে মনে মানতে পারছিলেন না। তাই লিখেছিলেন,

“পরের শিকল ভাঙিস পরে,

নিজের নিগড় ভাঙ রে ভাই।

আপন কারায় বন্ধ ভোরা,

পরের কারায় বন্দী তাই।

এই গানটির মধ্যদিয়ে কবি বাঙালির অভ্যন্তরীণ মূর্খতা আর অজ্ঞতার কথা ব্যক্ত করেছেন। কারণ বড় নির্বোধ যে আপন পর নির্ধারণ করতে পারে না। স্বভূমির প্রতিটি জন স্বজাতি তা সে হোক হিন্দু বা মুসলমান। কবি পরের দেওয়া শিকলের থেকে অন্ধতা অজ্ঞতার নিগড়কে বেশি শক্তিশালী মনে করেছেন। বাঙালি চোখ বন্ধ করে পাশের পরম বন্ধুকে শত্রু মনে করে।

জাত-পাতের বড়াই করে শক্তি হানি করে। যেখানে হিন্দু-মুসলমান-শিক-বৌদ্ধ সকল সন্তানকে এখন মায়ের সবচেয়ে বড়ো প্রয়োজন সেখানে জাতে জাতে দ্বন্দ্ব করে নিজেরাই নিজেদের দুর্বল করবার যুদ্ধে মত্ত বাঙালি। তাই স্বাধীনতার সূর্য বহুদূরে। কবি এ সকল প্রতিযোগিতা থেকে নিজেদের মুক্ত করে ভাইয়ে ভাইয়ে এক হতে বলেছেন।

 

 

মনের সকল কুসংস্কার আর অন্ধ আচার থেকে বেরিয়ে আসতে আহ্বান করেছেন। ইংরেজের শক্তিকে দুর্বল করতে মহাশক্তির প্রয়োজন। সকল বাঙালির আত্মিক সমন্বয় ও মানবিক ঐক্যই পারে মহাশক্তির নিদের্শনা দিতে। তাই কবি তাঁর স্বদেশপর্বের সকল গানেই ভাইয়ের পাশে ভাইয়ের অবস্থানের গুরুত্বারোপ করেছেন।

অর্থাৎ তিনি হিন্দু-মুসলমানের দ্বন্দ্বকে ঘুচাতে বলেছেন। আসন্ন নতুন বছরের কাছেও কবির একই প্রার্থনা। তিনি প্রেমের শাসন প্রত্যাশা করেন, কামনা করেন তুচ্ছের সুউচ্চ আসন, তবেই ভেদাভেদ ভুলে জননীর কল্যাণে সকলে এক হবে। কবির ভাষায়,

“নূতন বরষ নূতন বরষ

তব অঞ্চলে ও কী ঢাকা?

মিলে নাই যাহা, হারিয়েছে যাহা,

তাই কি গোপনে রাখা ”

আরও দেখুন :

Exit mobile version