আজকের আমাদের আলোচনার বিষয় বাদ্যযন্ত্রের বিবর্তনের কালানুক্রমিক ইতিহাস পর্যালোচনা। ভৌগোলিক পরিসরের বিবেচনায় আমাদের দেশ যেখানে অবস্থিত তা এক সময়ে অবিভক্ত ভারতীয় উপমহাদেশ হিসেবে পরিগণিত ছিলো। সমগ্র অঞ্চলের সংগীত এক অভিন্ন বৈশিষ্ট্য বহন করে। শুধুমাত্র দক্ষিণ ভারতের কিছু স্থান ব্যতীত ভারতীয় উপমহাদেশের সমগ্র এলাকার উচ্চাঙ্গ সংগীত এক এবং অভিন্ন। উচ্চাঙ্গ সংগীতের এই ধারা হিন্দুস্তানী উচ্চাঙ্গ সংগীত নামে পরিচিত।
বাদ্যযন্ত্রের বিবর্তনের কালানুক্রমিক ইতিহাস পর্যালোচনা
সুরের সন্ধানে সুরসম্রাট আলাউদ্দিন খাঁর ব্রাহ্মনবাড়িয়া জেলার নবীনগনের থানার শিবপুর গ্রামের গৃহত্যাগ করে সুদূর কোলকাতা, উত্তর প্রদেশের বিভিন্ন রাজ্যে গমন করে সংগীত শিক্ষা গ্রহণের ইতিহাস থেকেও আমরা সংগীতের এই অভিন্নতার প্রমাণ পাই। ওস্তাদ আলাউদ্দিন বা সংগীতের প্রথম পাঠ নিয়েছিলেন তাঁর অগ্রজ ফকির তাপস) আফতাবউদ্দিন খাঁর কাছে।
তাঁর কাছে স্বর সাধনা এবং তালযন্ত্রের প্রাথমিক পাঠ নিয়ে তিনি এই সংগীতে পরিপূর্ণ শিক্ষা লাভের অদম্য আকাঙ্খা নিয়ে ঘর ছেড়েছিলেন। অগ্রজর কাছ থেকে প্রাপ্ত শিক্ষার ধারাবাহিকতায় তিনি এরপর একের পর এক ওস্তাদের কাছে তালিম গ্রহণ করেন। প্রথমে কোলকাতায় একাধিক ওস্তাদের কাছে কণ্ঠ এবং বিভিন্ন যন্ত্রে তালিম গ্রহণ করেন। পরে ছুটে যান উত্তরপ্রদেশের রামপুরে।
সেখানে মিঞা তানসেনের বংশধর ওস্তাদ ওয়াজির খাঁর কাছে সংগীত শিক্ষা গ্রহণ করেন। তিন কর্মজীবন অতিবাহিত করেন মাইহার রাজ্যে। একই গুরু ওস্তাদ ওয়াজির খাঁর কাছে শিক্ষা গ্রহণ করে তাঁর অনুজ ওস্তাদ আয়েত আলী বা বাংলাদেশে ফিরে আসেন এবং কুমিল্লায় সংগীত শিক্ষা প্রসারের মাধ্যমে কর্মজীবন অতিবাহিত করেন।
দুইজন দুই জায়গায় অবস্থান করলেও পারস্পরিক যোগাযোগের মাধ্যমে তাঁরা উপমহাদেশে প্রচলিত বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্রের নবরূপ দান করেছেন এবং নতুন নতুন বাদ্যযন্ত্র আবিস্কার করেছেন। তাঁদের এই গবেষণার কথা অন্যত্র বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। বর্তমান অধ্যায়ে উচ্চাঙ্গ সংগীতের অভিন্ন রূপ প্রসঙ্গে তাঁদের কথা যৎসামান্য আলোচনা করা হলো।
প্রকৃতপক্ষে উচ্চাঙ্গ সংগীতের অভিন্ন রূপ নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নাই। একই ধরণের বাদ্যযন্ত্র সমগ্র অঞ্চলে প্রচলিত যাতে উচ্চাঙ্গ সংগীত পরিবেশন করা হয়। আপালিকভাবে কিছু লোক বাদ্যযন্ত্র প্রচলিত । উপমহাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের অধিবাসীদের মধ্যে নিজস্ব সংস্কৃতি প্রভাবিত বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র প্রচলিত রয়েছে।
বাংলাদেশেও লোকসংগীতের জগতে প্রচলিত রয়েছে নিজস্ব বৈশিষ্ট্যপূর্ণ বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র। কিন্তু যে সকল বাদ্যযন্ত্রে উচ্চাঙ্গ সংগীত পরিবেশিত হয় তা একইভাবে সমগ্র এলাকায় প্রচলিত। কাজেই উৎস সন্ধান করতে হলে অভিন্ন ইতিহাস বিশ্লেষণই একমাত্র উপায়।
আরও দেখুন :