Site icon Arts and Culture Gurukul [ শিল্প ও সংস্কৃতি গুরুকুল ] GOLN

সঙ্গীত

সঙ্গীত

বিশ্বের ইতিহাসে সঙ্গীত সাংস্কৃতিক সার্বজনীন বিস্তৃত ও পরিবর্তিত সংজ্ঞায় সংজ্ঞায়িত। প্রাক-সাহিত্যিক ইতিহাস বা প্রাগৈতিহাসিক সংস্কৃতিক পর্যায়ে সঙ্গীতকে সাধারণত আদিম সঙ্গীত বলে আখ্যায়িত করা হত। সঙ্গীত দ্বারা গীত, বাদ্য, নৃত্য এই তিনটি বিষয়ের সমাবেশকে উল্লেখ করা হয়। সঙ্গীত দ্বারা গীত, বাদ্য, নৃত্য এই তিনটি বিষয়ের সমাবেশকে উল্লেখ করা হয়।[৪] গীত এক ধরনের শ্রবণযোগ্য কলা যা সুসংবদ্ধ শব্দ ও নৈঃশব্দের সমন্বয়ে মানব চিত্তে বিনোদন সৃষ্টি এবং আবেগ তরান্বিত করতে সক্ষম। গীত মূলত স্বর ও ধ্বনির সমন্বয়ে গঠিত, হতে পারে তা মানুষের কণ্ঠ নিঃসৃত ধ্বনি বা যন্ত্রোৎপাদিত শব্দ অথবা উভয়ের সংমিশ্রণ। তবে সুর ধ্বনির প্রধান বাহন। আর সুর ছাড়াও অন্য যে অনুষঙ্গ সঙ্গীতের নিয়ামক তা হলো তাল।


অর্থযুক্ত কথায় বলা যায় যে, সুর ও তালের সমন্বয়ে গীত প্রকাশ পায়। সুর ও তালের মিলিত ভাব এ বাদ্য[৬] এবং ছন্দের সাথে দেহভঙ্গিমায় নৃত্য গঠিত।

 

সঙ্গীত

 

উৎপত্তি এবং প্রাগৈতিহাসিক :

সঙ্গীতের উৎপত্তি প্রসঙ্গে ভাষ্যকাররা প্রায়শই এর উৎস নিয়ে মতবিরোধ বা বিতর্কিত সংজ্ঞা জ্ঞাপনে রত ছিলেন। যার ফলে পণ্ডিতরাও প্রায়শই মেরুকরণের অবস্থান গ্রহণ করতেন বলে ইতিহাসে উল্লেখযোগ্য এমন অনেক প্রমাণ রয়েছে। তবে প্রথম যে প্রভাবশালী তত্ত্বটি বিশ্বব্যাপী সম্প্রসারিত তা ১৮৭১ সালে চার্লস ডারউইন দ্বারা প্রস্তাবিত হয়েছিল, তিনি বলেছিলেন যে সঙ্গীত যৌন নির্বচনের একটি ফর্ম হিসাবে উদ্ভূত হয়েছিল, সম্ভবত সঙ্গমের মাধ্যমে এবং এটি প্রথম ১৮৭১ সালে চার্লস ডারউইনের রচিত গ্রন্থঃ দ্য ডিসেন্ট অফ ম্যান, অ্যান্ড সিলেকশন ইন রিলেশন টু সেক্স-এ প্রকাশিত হয়েছিল।

যা চার্লস ডারউইনের মূল দৃষ্টিভঙ্গি অন্যান্য যৌন নির্বাচন পদ্ধতির সাথে এর অসঙ্গতির জন্য ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়েছিল, যদিও ২১শ শতাব্দীতে অনেক পন্ডিত এই তত্ত্বের প্রচার ও বিকাশে অবদান রেখেছিলেন। সাম্প্রতিক ভাষ্যকাররা অন্যান্য প্রাণীর মিলন পদ্ধতিতে সঙ্গীতের ব্যবহার উল্লেখ করে, তা সত্ত্বেও চার্লস ডারউইনের তত্ত্ব প্রচার ও বিকাশে অনেক পন্ডিতের অবদান ছিল, এবং তাদের মধ্যে ছিলেন পিটার জেবি স্লেটার, ক্যাটি পেইন, বজর্ন মার্কার, জিওফ্রে মিলার এবং পিটার টড।

এছাড়াও আরো অনেক প্রতিযোগী তত্ত্ব রয়েয়ে‍, যারা সজ্ঞীত ব্যাখ্যর উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ সমাপ্তির পর পণ্ডিতদের দ্বারা প্রস্তাব করা হলে অস্পষ্ট প্রমাণ থাকার কারনে কোনটিই ব্যাপক অনুমোদন পায়নি। তবে সঙ্গীত সৃষ্টিতে উল্লেখিত অনেক সংস্কৃতি রয়েছে যাদের নিজস্ব পৌরাণিক উৎস এবং সংজ্ঞা বিদ্যমান এবং নির্দিষ্ট পরিসখ্যান হতে কখনও কখনও তাদের করা কাজ বা সঙ্গীত উদ্ভাবনের জন্য কৃতিত্ব দেওয়া হয়।

উল্লেখযোগ্য আরোও একটি তত্ত্বে বলা হয়েছিল যে, সঙ্গীতের উদ্ভব হয় ভাষা উদ্ভবের পাশাপাশি বা বলা যেতে পারে উভয়ই অনুমিতভাবে একটি ‘‘ভাগ করা অগ্রদূত’’ থেকে এসেছে। জীববিজ্ঞানী হার্বার্ট স্পেন্সার ছিলেন এই তত্ত্বের একজন গুরুত্বপূর্ণ প্রারম্ভিক প্রবক্তা, যেমন ছিলেন সুরকার রিশার্ড ভাগনার, যিনি সঙ্গীত এবং ভাষার ভাগ করা পূর্বপুরুষকে “ভাষণ-সংগীত” বলে অভিহিত করেছিলেন। ২১ শতক থেকে অনেক পণ্ডিত এই তত্ত্বকে সমর্থন করেছেন, বিশেষ করে প্রত্নতত্ত্ববিদ স্টিভেন মিথেন।

এছাড়াও আলোচ্য হয়েছিল যে, পুরা প্রস্তর যুগে মানুষ তার মনের ভাব প্রকাশে সুর এবং প্রাক-ভাষার ব্যবহার করে কথপকথন বা দুই বা ততোধিক মানুষের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপনে বিভিন্ন শব্দের ব্যবহার যেমনঃ পাখির কিচিরমিচির শব্দ বা বলা যেতে পারে পশু-পাখির থেকে শোনা কিছু শব্দ বা সুরের তালে মনের ভাব বা আবেগ প্রকাশের সময় সঙ্গীত উত্থাপিত হয়েছিল। যদিও এটি মধ্য (৩০০,০০০ – ৫০,০০০ বিপি) নাকি উচ্চ (৫০,০০০ – ১২,০০০ বিপি) পুরা প্রস্তর যুগে উত্থাপিত হয়েছিল তা এখনও স্পষ্ট নয়। কিন্তু, পূর্ববর্তী সংস্কৃতিতে প্রাগৈতিহাসিক উৎপাদিত সমস্ত সঙ্গীত অন্তত ৬ মিলিয়ন বছর আগে (মানুষ এবং শিম্পাঞ্জির সর্বশেষ একটি সাধারণ পূর্বপুরুষ থাকাকালীন) শুরু হয়েছিল।

এবং খ্রিস্টপূর্ব ৪র্থ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে অ্যারিস্টোক্সেনাস দ্বারা রচিত সঙ্গীত তত্ত্ব বিষয়ক গ্রন্থঃ ‘‘এলিমেন্টা হারমোনিকা’’ প্রাচীনতম টিকে থাকা উল্লেখযোগ্য কাজের একটি।

এছাড়াও সিরিয়ায় আনুমানিক ১৪০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে মাটির ট্যাবলেটে পাওয়া “হুরিয়ান হিমন টু নিক্কল” (বা হুরিয়ান কাল্ট হিমন বা এ জালুজি টু দ্য গডস নামেও পরিচিত) সঙ্গীতের প্রাচীনতম টিকে থাকা উল্লেখযোগ্য কাজ।[২২][২৩] | মূল নিবন্ধ: সিরিয়ার সঙ্গীত

খ্রিস্টপূর্ব ২য় থেকে ৩য় শতাব্দীতে ব্রোঞ্জ যুগের সংস্কৃতি ইন্দোনেশিয়ান দ্বীপপুঞ্জে স্থানান্তরিত হওয়ার পর থেকে ইন্দোনেশিয়ান সঙ্গীত গঠিত হয়েছে। ইন্দোনেশিয়ান ঐতিহ্যবাহী সঙ্গীত প্রায়ই তাল বাদ্যযন্ত্র (বিশেষত, কাঁসর এবং কেন্দাং) ব্যবহারে তৈরি। এছাড়াও তারা স্বতন্ত্র বাদ্যযন্ত্রের মধ্যে সাসান্দো (Sasando), আংক্লুং (Angklung) এবং গেমলান (Gamelan) তৈরিতে নিজেদের অবদান রেখেছিলেন। মূল নিবন্ধ: ইন্দোনেশিয়ান সঙ্গীত

উল্লেখ্য, চীনের ঐতিহ্যবাহী শিল্প বা কোর্ট (Court) সঙ্গীত এবং চীনা শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের ইতিহাস প্রায় ৩০০০ বছর ধরে বিস্তৃত। খ্রিস্টপূর্ব ১৩ শতকের মাঝামাঝি (১৬০০-১০৪৬ খ্রিস্টপূর্বাব্দ) শাং সাম্রাজ্য লেখার বিকাশ ঘটিয়েছিল এবং তা ওরাকল হাড় এবং চীনা ব্রোঞ্জের শিলালিপিতে বিদ্যমান।[২৬][২৭] অতঃপর ২০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে ব্রোঞ্জের আবির্ভাব ঘটায়,[২৮] শাং সাম্রাজ্য ঘণ্টা বাজানোর জন্য লিং, নাও এবং ঝাং এর ব্যবহার সহ হাততালির বা আঘাত করে আওয়াজ সৃষ্টি করত। ৭০০০ থেকে ৬৬০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের মধ্যে [প্রাগৈতিহাসিক] বাদ্যযন্ত্রের প্রাচীনতম এবং বৃহত্তম সংগ্রহ চীনে পাওয়া গেছে। প্রাচীন চীনা যন্ত্রগুলো ব্যবহারিক এবং আনুষ্ঠানিক উভয় উপায়ে পরিবেশিত হতো এবং তখনকার যুগে, মানুষ বেঁচে থাকার প্রয়োজনে অতিপ্রাকৃত শক্তির কাছে আবেদন করার জন্য ঐ সমস্ত যন্ত্রের ব্যবহার করত, এবং শিকারের সময় হয়তো প্যান বাঁশির ব্যবহার, সহ বলিদান এবং সামরিক অনুষ্ঠানে ড্রাম বাজানোর সাধারণ প্রচলন ছিল। উল্লেখ্য ১০৪৬-২৫৬ খ্রিস্টপূর্বাব্দে শুষিরযন্ত্র বা বায়ু যন্ত্র চৌ রাজবংশ দ্বারা বিদ্যমান, যা ১ম খ্রিস্টপূর্বাব্দের গুকিন (Guqin) এবং সে (Se) জিথার যন্ত্রের মতো। এছাড়াও আরোও উল্লেখিত, জেং-এর মারকুইস ইয়ের সমাধিতে (৪৩৩ খ্রিস্টপূর্বাব্দের পর) জটিল এবং সজ্জিত যন্ত্র বিশেষ; 65টি সুরযুক্ত বানঝং (Bianzhong) ঘণ্টার স্মারক সেট, যার সীমা পাঁচটি অষ্টভের জন্য কমপক্ষে পাঁচজন খেলোয়াড়ের প্রয়োজন এবং চীনারা এখনও এটি খেলার যোগ্য এবং সঙ্গীতের বিরল শিলালিপি অন্তর্ভুক্ত।


ভারতীয় শাস্ত্রীয় সংঙ্গীত বিশ্বের প্রাচীনতম সঙ্গীত ঐতিহ্যের একটি। যা (মার্গ) হিন্দু ঐতিহ্যের প্রাচীন ধর্মগ্রন্থ বেদে উল্লেখিত। সিন্ধু উপত্যকা সভ্যতার ভাস্কর্যগুলি যেমনঃ সাত ছিদযুক্ত বাঁশির মতো নৃত্য বা পুরানো বাদ্যযন্ত্রের ভাস্কর্যে এর প্রমাণ পাওয়া যায়। এছাড়াও মর্টিমার হুইলারের হরপ্পা এবং মহেঞ্জোদারো খননকার্য সময়কালে বিভিন্ন রকমের তারযুক্ত যন্ত্র এবং ড্রাম উদ্ধার করা হয়েছিল। বৈদিক সংস্কৃত ভাষা ও সাহিত্য (খ্রি.পূ ২৫০০-৯০০ অব্দ) চর্চার সময়কাল থেকেই ভারতবর্ষে ছন্দ চর্চা এবং কাব্য রচনায় ছন্দময় ভাষার ব্যবহার শুরু হয়েছিল। যা কালক্রমে ছন্দ ও সুরে রচিত সঙ্গীতের প্রচলন বা বিস্তার বা সঙ্গীত বিশ্লেষণে যে ছন্দ+সুর বা দুটি ছন্দযুক্ত বাক্য সুর করে উচ্চরণে যে সঙ্গীত বা গানের আবির্ভাব ঘটে তা স্পষ্ট হয়। এছাড়াও ভারতীয় লোক সঙ্গীত, জনপ্রিয় সঙ্গীত সহ হিন্দুস্তানি শাস্ত্রীয় সঙ্গীত ও অন্যান্য সঙ্গীত উল্লেখযোগ্য।


উল্লেখ্য প্রাচীন ইতিহাসে গ্রীকদের কেউ কেউ বাদ্যযন্ত্রের ব্যবধান লিখতে শুরু করেছিল, যেটি ১০০ খ্রিস্টাব্দে খোদাই করা সমাধি পাথর দ্বারা প্রমাণিতঃ ”সেকিলোস এপিটাফ” নামে পরিচিত ট্যাবলেটটিতে লিরিক্স এবং মিউজিক সহ একটি সম্পূর্ণ নোটেড গানের প্রথম পরিচিত উদাহরণঃ-

 

Ὅσον ζῇς φαίνου

μηδὲν ὅλως σὺ λυποῦ

πρὸς ὀλίγον ἔστι τὸ ζῆν

τὸ τέλος ὁ χρόνος ἀπαιτεῖ.

তুমি বেঁচে থাকতে, চকমক

কোন দুঃখ নেই

জীবন বিদ্যমান শুধুমাত্র অল্প সময়ের জন্য

এবং সময় তার প্রাপ্য দাবি করে

 

উক্ত এপিটাফটি বিভিন্নভাবে তারিখযুক্ত, তবে এটি ১ম বা ২য় শতাব্দীর বলে মনে করা হয়। যা বর্তমান তুরস্কের আইডিনের নিকটস্থ হেলেনিস্টিক শহর (ইফেসাসের কাছাকাছি) ট্র্যালেসের একটি সমাধির পাথরে (একটি স্টিল) খোদাই করা ছিল। উক্ত গানের সুরটি প্রাচীন গ্রীক বাদ্যযন্ত্রের স্বরলিপিতে রেকর্ড করা হয়েছে।

 

এছাড়াও সংস্কৃতি বা দেশ ও জাতিগোষ্ঠী ভেদে সঙ্গীতিহাসের বিস্তারিত ব্যাখ্যার সারাংশাকারে রচিত নিবন্ধটির উল্লেখিত প্রেক্ষাপট হতে মূল নিবন্ধ ও তত্ত্ব সূত্র দ্বারা বিশ্বজুড়ে সঙ্গীতের কী প্রভাব রয়েছে বা সঙ্গীত বিষয়ক বিস্তারিত ব্যাখ্যার উল্লেখ বিদ্যমান।

 

সঙ্গীতের প্রকারভেদ:

সঙ্গীতের ধারা সঙ্গীতের বৈশিষ্ট্যসূচক প্রকৃতিগত দিক হতে একটি ধরন বা প্রকার। তবে সঙ্গীতের প্রকারভেদ সংখ্যায় উল্লেখ না করে এর ব্যাপক বিস্তার নিয়ে আলোচনা করলে আমরা জানতে পারি যে, এক এক ধরনের সঙ্গীতের শাখা একেক রকম এবং তা পৃথকীকরণযোগ্য। আর সঙ্গীতকে বিভিন্নভাগে বিভক্ত করা যায়। তবে শ্রেণীকরণের উদ্দেশ্য ও বিভিন্ন দৃষ্টিকোনের পার্থক্যের কারণে অনেক শ্রেণীকরণ নিয়মবহির্ভূত বা স্বেচ্ছাচারপ্রসূত। আবার কোন কোন ক্ষেত্রে তা হতে পারে বিতর্ক সৃষ্টির কারণ। অনেকেই বিশ্বাস করেন যে, যুক্তিমূলক উপায়ে সঙ্গীতের শ্রেণীকরণ সম্ভব নয় এবং শ্রেণীকরণের ফলে সঙ্গীতের সমৃদ্ধির পথ বাধাগ্রস্ত হয়। তবুও সঙ্গীতের ধারা ভাগ করলে বিভিন্ন জনপ্রিয় সঙ্গীত এবং শিল্প সঙ্গীত, বা ধর্মীয় সঙ্গীত এবং ধর্মনিরপেক্ষ সঙ্গীত সহ প্রাচ্য সঙ্গীত, পাশ্চাত্য সঙ্গীত, যন্ত্রসঙ্গীত, কণ্ঠসঙ্গীত, শাস্ত্রীয় সঙ্গীত, লোক সঙ্গীত এবং আধুনিক সঙ্গীতের উল্লেখ সহ ধ্রুপদ, খেয়াল, ঠুমরি, টপ্পা, গজল, কাওয়ালী, কালোয়াতি সঙ্গীত উল্লেখযোগ্য।

 

সঙ্গীতের স্বরলিপি:

সংস্কৃতি এবং ইতিহাস জুড়ে পরিবর্তিত হয়েছে সঙ্গীত স্বরলিপির ধরন ও পদ্ধতি, এবং খণ্ডিত রয়েছে প্রাচীন সঙ্গীত স্বরলিপির ধরন অনেক তথ্য। তবে বহু প্রাচীন সভ্যতায় বিভিন্ন প্রতীকের সাহায্যে সুর লিপিবদ্ধ করার প্রচলন থাকলেও তা আধুনিক স্বরলিপির মতো স্বয়ংসম্পূর্ণ ছিল না। স্বরলিপি মূলত মাত্রা, ছন্দ ও বিভাগ অনুযায়ী তালি ও খালির সহযোগে লিপিবদ্ধ করাকে বোঝায়, যা লিখিত চিহ্নের দ্বারা সাঙ্গীতিক স্বরকে লিপিবদ্ধ করার পদ্ধতি। সহজ কথায়, সঙ্গীত স্বরলিপি বা বাদ্যযন্ত্র স্বরলিপি বলতে লিখিত, মুদ্রিত বা অন্যথায় উৎপাদিত চিহ্ন দ্বারা রচিত সঙ্গীতের স্বরলিপিকে বোঝায়। এমন যে কোনো পদ্ধতি যা যন্ত্রের সাথে বাজানো বা মানুষের কণ্ঠ দ্বারা গাওয়া শ্রবণীয় ভাবে অনুভূত সঙ্গীতকে দৃশ্যত উপস্থাপন করে। মধ্যযুগীয় ইউরোপে প্রথম স্বয়ংসম্পূর্ণ স্বরলিপি লিখন পদ্ধতি গড়ে ওঠে এবং পরবর্তীকালে তা সমগ্র বিশ্বের বিভিন্ন ধরনের সঙ্গীতে গৃহীত হয়। আর যারা সঙ্গীত লেখার পেশায় নিয়োজিত থাকেন তাদেরকে সুরকার বলা হয়।

সঙ্গীত বা সুর বা স্বর এর প্রকাশ পদ্ধতিতে সাত (৭) টি চিহ্ন ( সংকেত ) ব্যবহৃত হয়, যথা :

সা রে গা মা পা ধা নি

এই সাতটি চিহ্ন দ্বারা সাতটি কম্পাংক নির্দেশ করা হয় । এছাড়াও আরও ৫টি স্বর রয়েছে ; যাদেরকে বিকৃত স্বর বলা হয় । যথা :

ঋ জ্ঞ হ্ম দ ণ ।

সঙ্গীতের তাল :

লোককথায় শোনা, বেসুরা সঙ্গীতও নাকি শ্রবণযোগ্য তবে তাল-হীন গান নয়। আর একটা সঙ্গীত সম্পন্নে তাল, মাত্রা, লয় বিনা না তা যেন অসমাপ্তই রয়ে যায়। তাল মূলত কয়েকটি ছন্দোবদ্ধ মাত্রার সমষ্টি দিয়ে তৈরি হয়ে থাকে। যা শাস্ত্রীয় সঙ্গীতে বা নৃত্যে একটি ছন্দের নিয়ামক এবং ছন্দের অংশাদির আপেক্ষিক লঘুত্ব বা গুরুত্বের নির্ধারক। তাল দুপ্রকার–সমপদী ও বিষমপদী। এবং প্রাচীনকাল থেকেই বিভিন্ন রকম তাল ও মাত্রার উল্লেখ রয়েছে। যথাঃ

ত্রিতাল : ১৬ মাত্রা
কাহারবা : ৮ মাত্রা
দাদরা : ৬ মাত্রা
থেমটা : ৬ মাত্রা
তেওড়া : ৭ মাত্রা
রুপক : ৭ মাত্রা
ঝাঁপতাল : ১০ মাত্রা
একতার : ১২ মাত্রা
চৌতাল : ১২ মাত্রা

এছাড়াও রয়েছে বিভিন্ন অপ্রচলিত তাল। যথাঃ

তাল খামসা
পটতাল
মোহন তাল
দোবাহার
ধামার

 

যন্ত্র সঙ্গীত:

প্রচলিতভাবে বাদ্যযন্ত্রের ব্যবহারে যে সঙ্গীত সৃষ্ট হয় তা যন্ত্রসঙ্গীত। তবে যন্ত্রসঙ্গীত বলতে যান্ত্রীয় গানও উল্লেখযোগ্য, যা কণ্ঠ ব্যতীত বা হতে পারে অস্পষ্ট কণ্ঠের ব্যবহারে সৃষ্ট সঙ্গীত। পরিবেশনার দিক থেকে যন্ত্রসঙ্গীত মূলত তিন প্রকার। যথাঃ এককবাদন, যুগলবন্দী ও সমবেতবাদন বা বৃন্দবাদন।

যান্ত্রীয় সঙ্গীত সৃষ্টিতে ব্যবহৃত বিভিন্ন প্রকার বাদ্যযন্ত্রঃ

ততযন্ত্র
শুষিরযন্ত্র
ঘাতযন্ত্র
ঘন (বাদ্য)
আনদ্ধ

 

সঙ্গীত শিল্পের বাণিজ্যিক প্রসার:

প্রাচীনকাল থেকে এ বঙ্গঅঞ্চলে কীর্তন বা ঈশ্বরের নামে গান করার প্রচলন চলে আসছে। চর্যাগীতির পরে বাংলা সঙ্গীতে উল্লেখযোগ্য হয়ে আছে নাথগীতি। যদিও সঙ্গীতকে ঘিরে বিশ্বব্যাপী সৃষ্ট হয়েছে এক ধরনের ব্যবসার। এতে সঙ্গীত রচনা করে গ্রাহক কিংবা প্রচার মাধ্যমে বিক্রয়ের ব্যবস্থা করা হয়। এর সাথে জড়িত রয়েছে বিভিন্ন রেকর্ড কোম্পানী, ব্রান্ড এবং ট্রেডমার্ক সহযোগে লেবেল এবং বিক্রেতা। ২০০০ সালের পর থেকে গানের শ্রোতার সংখ্যা অসম্ভব আকারে বৃদ্ধি পেয়েছ। শ্রোতারা ডিজিটাল মিউজিক ফাইলগুলোকে এমপি-থ্রী প্লেয়ার, আইপড, কম্পিউটার এবং অন্যান্য বহনযোগ্য আধুনিক যন্ত্রে সংরক্ষণ করছেন। গানগুলো ইন্টারনেট থেকে বিনামূল্যে কিংবা ক্রয় করে সংগ্রহ করা যায়। ডিজিটাল মাধ্যমে গান সংগ্রহ ও দেয়া-নেয়ার মাধ্যমে বর্তমান সঙ্গীত শিল্প প্রসারিত হয়েছে।

তবে ইন্টারনেট থেকে অবাধে বিনামূল্যে গান ডাউনলোড করার ফলে গানের সিডি বিক্রয়ের ব্যবসায় এক ধরনের হুমকির মুখে রয়েছে। এর ফলে বাণিজ্যিক শিল্পীরা আর্থিকভাবে লাভবান হতে পারছেন না।

 

Exit mobile version